...

নোবিপ্রবির কোনো ছাত্রী হলে নেই নারী প্রভোস্ট

NSTU CORRESPONDENT প্রকাশ: ০২ জুলাই, ২০২৫, ২২:৪৬

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) মোট  তিনটি ছাত্রী হলে বর্তমানে প্রভোস্ট পদে কোনো নারী শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন না। সবগুলো ছাত্রী হলেই প্রশাসনিক সর্বোচ্চ দায়িত্বে রয়েছেন পুরুষ শিক্ষকরা। 

সম্প্রতি গত মঙ্গলবার (১ জুলাই) সন্ধ্যার পর কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা ছাড়াই ছাত্রীদের কক্ষে হল প্রভোস্ট এর নেতৃত্বে তল্লাশি চালান পুরুষ স্টাফ। এতে ছাত্রীরা চরম অপ্রস্তুত ও অপমানিত বোধ করেন। এ নিয়ে রাতেই বিক্ষোভ প্রতিবাদ করেছে সেই হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। 

নোবিপ্রবির তিনটি ছাত্রী হলে প্রভোস্ট হিসেবে রয়েছেন তিনজন পুরুষ শিক্ষক। হযরত বিবি খাদিজা হলে প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ড. আব্দুল কাইয়ুম মাসুদ, নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের প্রভোস্ট পদে রয়েছেন ড. আবিদুর রহমান এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ছাত্রী হলের প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. নাসির উদ্দিন।

ছাত্রীদের হল প্রশাসনের বর্তমান গঠন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জুলাই শহীদ স্মৃতি ছাত্রী হলে সহকারী প্রভোস্ট রয়েছেন মোট ১০ জন, যাদের মধ্যে ৬ জন নারী এবং ৪ জন পুরুষ। নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের মোট ৮ জন সহকারী প্রভোস্টের মধ্যে ৬ জন নারী এবং বাকি ২ জন পুরুষ। হযরত বিবি খাদিজা হলে সহকারী প্রভোস্ট আছেন মোট ৮ জন, যার মধ্যে ৫ জন নারী এবং ৩ জন পুরুষ।

তিন হলে সহকারী প্রভোস্ট পদে একাধিক নারী শিক্ষক থাকলেও হলের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে কোনো নারী শিক্ষক না থাকায় এর সমালোচনা করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে ও ছাত্রীদের হল ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে প্রভোস্ট পদে নারী নেতৃত্ব থাকুক এমনটাই যৌক্তিক মনে করে অভিযোগ জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। অণুজীববিজ্ঞান ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অর্পা ঘোষ বলেন, নোবিপ্রবির একটি হলেও নারী প্রভোস্ট না থাকার কারণে ছাত্রীদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, ও মানসিক চাপ সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে যথাযথভাবে বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। একজন নারী প্রভোস্ট যেভাবে ছাত্রীদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়, চাহিদাগুলো ভালোভাবে বুঝবে একজন পুরুষ প্রভোস্ট নাও বুঝতে পারে। যার ফলস্বরূপ খাদিজা হলের চেকিং এ এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেখা যায়।এছাড়াও বিভিন্ন সময় অনেক বিষয়ে যথাযথ নারীবান্ধব ব্যাবস্থাপনা দেখা যায় না। 

আইন বিভাগ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাসপিয়া বিনতে নাজিম বলেন, আমার মতে ছাত্রী হলে নারী প্রভোস্ট নিয়োগ শুধু একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয় বরং এটি নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়িত্ব, সম্মান ও নিরাপত্তার অংশ। তবে নোবিপ্রবির একটিও নারী হলে নেই নারী প্রভোস্ট৷ আমাদের সমাজ, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক কাঠামো ক্রমাগত পরিবর্তন ও অগ্রগতির দাবি জানালেও এখনো কিছু ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ সীমিত। একজন নারী শিক্ষার্থী তার আবাসনস্থলে নিরাপত্তা, মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য ও স্বাধীনতা প্রত্যাশা করে। নারী প্রভোস্ট থাকলে ছাত্রীদের সমস্যাগুলো সহজেই বোঝা ও সমাধান করা সম্ভব হতো। ছাত্রীদের স্বাস্থ্য, শারীরিক অসুস্থতা, আবাসন-সংক্রান্ত অসুবিধা ইত্যাদি ক্ষেত্রে একজন নারী প্রভোস্ট বেশি সহানুভূতিশীল ও কার্যকরভাবে ব্যবস্থা নিতে পারেন। একজন নারী প্রভোস্ট ছাত্রীদের জন্য একজন আদর্শ বা রোল মডেল হয়ে উঠতে পারেন, যা তাদের ভবিষ্যতে আত্মবিশ্বাসী ও নেতৃত্বদানে উৎসাহী করে। তাই আমার মনে হয় ছাত্রী হলগুলোয় নারী প্রভোস্ট দায়িত্বে থাকা অত্যাবশ্যকীয়।

বর্তমানে তিন হলে কোনো নারী প্রভোস্ট না থাকলেও ভবিষ্যতে ছাত্রী হলে এ বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন নোবিপ্রবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজুয়ানুল হক। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র নারী শিক্ষকদের সংখ্যা তেমন একটা বেশী নয়, তবে আমাদের ছাত্রী হলগুলোতে নারী শিক্ষকদের প্রাধান্য বেশি দিয়েছি। এর সংখ্যা আমরা আরো বাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি। আর নারীদের জন্য এই দায়িত্বগুলো কিছুটা জটিল হয়ে থাকে এবং সবাই তো আর তেমনটা আগ্রহী থাকে না। সামনে থেকে আমরা সিনিয়র নারী শিক্ষকদেরকেই এসব পদে রাখার ব্যবস্থা করবো যাতে নারীবান্ধব ব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্ব তৈরি করা যায়।