০৩:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অপ্রচলিত উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করেছেন অধ্যাপক ড. ছোলায়মান

ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত: ০২:৫৬:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুন ২০২৪
  • / 28

অধ্যাপক ড. ছোলায়মান

আসিফ ইকবাল(বাকৃবি প্রতিনিধি):

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) অপরিচিত ও অপ্রচলিত উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করেছেন এমন গবেষকের সন্ধান করলে সবার প্রথমে আসবে ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ছোলায়মান আলী ফকিরের নাম।

চুকুর (রোজেল), শিমুল আলু(কাসাভা), ফ্রেঞ্চ বিন, অড়হরসহ নানাবিধ অপ্রচলিত ও অপরিচিত উদ্ভিদ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গবেষণা করেছেন অধ্যাপক ড. ছোলায়মান আলী। চিপস, চপ, কেক, পাকোড়া, পুডিংসহ বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাদ্য এসব উদ্ভিদ থেকে উন্নয়ন করেছেন তিনি। মাঠ পর্যায়ের কৃষির উন্নয়নের লক্ষ্যেই তার এসব গবেষণা।

অপ্রচলিত ডালজাতীয় উদ্ভিদ অড়হর নিয়ে গবেষণা করেছেন অধ্যাপক ছোলায়মান। অড়হর ডাল দেশে তেমন একটা প্রচলিত না হলেও অড়হর গাছের বীজ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে কাবাবসহ মুখরোচক সাতটি খাদ্যদ্রব্য তৈরি করা সম্ভব বলে জানান অধ্যাপক ছোলায়মান। তিনি বলেন, শুকনো বীজের অড়হর দিয়ে রুটি, পুরি, শিঙাড়া এবং সেদ্ধ কাঁচা বীজের পেস্ট দিয়ে হালুয়া, কাবাব তৈরি করা সম্ভব। এছাড়াও বীজ ভাজা ও কাঁচা বীজের সবজি হিসেবে হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে অড়হর। তরকারিতে মটরশুঁটির বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে এই অড়হর ডাল। এছাড়াও অড়হর বীজ নানান ধরনের রোগবালাই থেকে মুক্তি প্রদান করতেও সক্ষম।

এছাড়াও অড়হর ডালের পেস্ট আটার সঙ্গে মিশিয়ে রুটি তৈরি করেছেন অধ্যাপক ছোলায়মান। এটি ভাতের বিকল্প হিসেবে চালের ওপর চাপ কমাবে বলেও জানান এই গবেষক। ভাতের চেয়ে কার্বোহাইড্রেট অনেকাংশে কম থাকায় ইহা মানুষের ওজন নিয়ন্ত্রণে অধিক কার্যকর। স্বল্প খরচে ডালের চাহিদা পূরণে অড়হর গাছ ভূমিকা রাখবে।

একটি সম্ভাবনাময় ঔষুধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ হলো রোজেল যা চুকাই বা চুকুর নামেও পরিচিত। রোজেল ইহার পুষ্টিগুণ, স্বাদ ও ঘ্রাণের জন্য বিশ্ববিখ্যাত হলেও বাংলাদেশে এর তেমন চাহিদা নেই বললেই চলে। অপরিচিত ও অপ্রচলিত এরকম একটি উদ্ভিদের ফুলের বৃতি প্রক্রিয়াজাত করে জ্যাম, জেলী, পুডিং, চাটনী, আচার, চকলেট, চা ও জুসসহ বিভিন্ন মুখোরোচক খাদ্য ও পানীয় উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন ড. ছোলায়মান।

অধ্যাপক ছোলায়মান জানান, রোজেলের বৃতি হলো প্রধান কার্যকরী উপাদান। রোজেল ফুলের মাংসল বৃতি সরাসরি খাবার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। বৃতির উজ্জ্বল লালরং জৈব খাবার রং হিসেবেও ব্যবহার করা সম্ভব। বৃতি থেকে জ্যাম, জেলী, চা, আচার, চাটনী, জুসসহ বিভিন্ন পানীয় প্রস্তুত করা সম্ভব। রোজেলের বীজ যখন পরিপক্ব হয় তখন তা আমিষ ও চর্বিতে পরিপূর্ণ থাকে বিধায় এহা প্রক্রিয়াজাত করে গবাদি পশুর খাবার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। অন্যদিকে রোজেলের পাতাও ওষুধিগুণে পরিপূর্ণ। তাছাড়াও বৃতির উজ্জ্বল রং ই প্রমাণ করে দেয় ইহা পুষ্টিগুনে ভরপুর। রোজেলের বৃতিতে থাকে অ্যান্থোসায়ানিন, ক্যারোটিনয়েড সহ গুরুত্বপূর্ণ এন্টিঅক্সিডেন্টসমূহ। এই বৃতি থেকে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য ও পানীয় পান করলে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পাওয়া সহ নানান রোগ থেকে মুক্তি মিলবে। এছাড়াও অধ্যাপক যোগ করেন, একটি রোজেল গাছ থেকে আধা কেজি থেকে দেড় কেজি পরিপক্ক কাঁচা ফল পাওয়া যায়। চার থেকে পাঁচটি গাছই যথেষ্ট একটি পরিবারের চা, জ্যাম, জুস, আচার ইত্যাদির চাহিদা মেটাতে।

অন্যদিকে কাসাভা বা শিমুল আলু থেকেও গবেষণা করে সেগুলোর প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে রুটি, তেলের পিঠা, হালুয়া, পাকোড়া, চিপস, চপ, কেকসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য উন্নয়ন করেছেন অধ্যাপক ছোলায়মান।

কাসাভা হলো গাছের শিকড়জাত এক ধরনের আলু। অনেকের কাছে এটা শিমুল আলু বা কাঠ আলু হিসেবেও এটি পরিচিত। কাসাভা শর্করা জাতীয় খাবারের অন্যতম উৎস। এই কাসাভা সহজে এবং কম খরচেই চাষাবাদ করা সম্ভব। কম উর্বর আবাদি জমিতেও এর চাষাবাদ করা যায়। যার ফলস্বরূপ চাল ও আলুর উপর নির্ভরশীলতাও অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

উল্লেখ্য, অধ্যাপক ড. ছোলায়মান আলী ফকিরের প্রায় ১০০ টির ও অধিক গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে। বর্তমানে তিনি রঙিন চাল নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।


শেয়ার করুন

অপ্রচলিত উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করেছেন অধ্যাপক ড. ছোলায়মান

প্রকাশিত: ০২:৫৬:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুন ২০২৪

আসিফ ইকবাল(বাকৃবি প্রতিনিধি):

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) অপরিচিত ও অপ্রচলিত উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করেছেন এমন গবেষকের সন্ধান করলে সবার প্রথমে আসবে ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ছোলায়মান আলী ফকিরের নাম।

চুকুর (রোজেল), শিমুল আলু(কাসাভা), ফ্রেঞ্চ বিন, অড়হরসহ নানাবিধ অপ্রচলিত ও অপরিচিত উদ্ভিদ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গবেষণা করেছেন অধ্যাপক ড. ছোলায়মান আলী। চিপস, চপ, কেক, পাকোড়া, পুডিংসহ বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাদ্য এসব উদ্ভিদ থেকে উন্নয়ন করেছেন তিনি। মাঠ পর্যায়ের কৃষির উন্নয়নের লক্ষ্যেই তার এসব গবেষণা।

অপ্রচলিত ডালজাতীয় উদ্ভিদ অড়হর নিয়ে গবেষণা করেছেন অধ্যাপক ছোলায়মান। অড়হর ডাল দেশে তেমন একটা প্রচলিত না হলেও অড়হর গাছের বীজ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে কাবাবসহ মুখরোচক সাতটি খাদ্যদ্রব্য তৈরি করা সম্ভব বলে জানান অধ্যাপক ছোলায়মান। তিনি বলেন, শুকনো বীজের অড়হর দিয়ে রুটি, পুরি, শিঙাড়া এবং সেদ্ধ কাঁচা বীজের পেস্ট দিয়ে হালুয়া, কাবাব তৈরি করা সম্ভব। এছাড়াও বীজ ভাজা ও কাঁচা বীজের সবজি হিসেবে হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে অড়হর। তরকারিতে মটরশুঁটির বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে এই অড়হর ডাল। এছাড়াও অড়হর বীজ নানান ধরনের রোগবালাই থেকে মুক্তি প্রদান করতেও সক্ষম।

এছাড়াও অড়হর ডালের পেস্ট আটার সঙ্গে মিশিয়ে রুটি তৈরি করেছেন অধ্যাপক ছোলায়মান। এটি ভাতের বিকল্প হিসেবে চালের ওপর চাপ কমাবে বলেও জানান এই গবেষক। ভাতের চেয়ে কার্বোহাইড্রেট অনেকাংশে কম থাকায় ইহা মানুষের ওজন নিয়ন্ত্রণে অধিক কার্যকর। স্বল্প খরচে ডালের চাহিদা পূরণে অড়হর গাছ ভূমিকা রাখবে।

একটি সম্ভাবনাময় ঔষুধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ হলো রোজেল যা চুকাই বা চুকুর নামেও পরিচিত। রোজেল ইহার পুষ্টিগুণ, স্বাদ ও ঘ্রাণের জন্য বিশ্ববিখ্যাত হলেও বাংলাদেশে এর তেমন চাহিদা নেই বললেই চলে। অপরিচিত ও অপ্রচলিত এরকম একটি উদ্ভিদের ফুলের বৃতি প্রক্রিয়াজাত করে জ্যাম, জেলী, পুডিং, চাটনী, আচার, চকলেট, চা ও জুসসহ বিভিন্ন মুখোরোচক খাদ্য ও পানীয় উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন ড. ছোলায়মান।

অধ্যাপক ছোলায়মান জানান, রোজেলের বৃতি হলো প্রধান কার্যকরী উপাদান। রোজেল ফুলের মাংসল বৃতি সরাসরি খাবার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। বৃতির উজ্জ্বল লালরং জৈব খাবার রং হিসেবেও ব্যবহার করা সম্ভব। বৃতি থেকে জ্যাম, জেলী, চা, আচার, চাটনী, জুসসহ বিভিন্ন পানীয় প্রস্তুত করা সম্ভব। রোজেলের বীজ যখন পরিপক্ব হয় তখন তা আমিষ ও চর্বিতে পরিপূর্ণ থাকে বিধায় এহা প্রক্রিয়াজাত করে গবাদি পশুর খাবার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। অন্যদিকে রোজেলের পাতাও ওষুধিগুণে পরিপূর্ণ। তাছাড়াও বৃতির উজ্জ্বল রং ই প্রমাণ করে দেয় ইহা পুষ্টিগুনে ভরপুর। রোজেলের বৃতিতে থাকে অ্যান্থোসায়ানিন, ক্যারোটিনয়েড সহ গুরুত্বপূর্ণ এন্টিঅক্সিডেন্টসমূহ। এই বৃতি থেকে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য ও পানীয় পান করলে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পাওয়া সহ নানান রোগ থেকে মুক্তি মিলবে। এছাড়াও অধ্যাপক যোগ করেন, একটি রোজেল গাছ থেকে আধা কেজি থেকে দেড় কেজি পরিপক্ক কাঁচা ফল পাওয়া যায়। চার থেকে পাঁচটি গাছই যথেষ্ট একটি পরিবারের চা, জ্যাম, জুস, আচার ইত্যাদির চাহিদা মেটাতে।

অন্যদিকে কাসাভা বা শিমুল আলু থেকেও গবেষণা করে সেগুলোর প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে রুটি, তেলের পিঠা, হালুয়া, পাকোড়া, চিপস, চপ, কেকসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য উন্নয়ন করেছেন অধ্যাপক ছোলায়মান।

কাসাভা হলো গাছের শিকড়জাত এক ধরনের আলু। অনেকের কাছে এটা শিমুল আলু বা কাঠ আলু হিসেবেও এটি পরিচিত। কাসাভা শর্করা জাতীয় খাবারের অন্যতম উৎস। এই কাসাভা সহজে এবং কম খরচেই চাষাবাদ করা সম্ভব। কম উর্বর আবাদি জমিতেও এর চাষাবাদ করা যায়। যার ফলস্বরূপ চাল ও আলুর উপর নির্ভরশীলতাও অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

উল্লেখ্য, অধ্যাপক ড. ছোলায়মান আলী ফকিরের প্রায় ১০০ টির ও অধিক গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে। বর্তমানে তিনি রঙিন চাল নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।