অবৈধ সুবিধার পাহাড় চান নূরে আলম, না দিলেই ভাঙচুর ও শিক্ষকদের অপমান
- প্রকাশিত: ১০:১৭:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
- / 127
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)-এর রসায়ন ল্যাবের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর এবং ওই বিভাগের এক শিক্ষককে অপমান করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী নূরে আলমের বিরুদ্ধে। নূরে আলম বুটেক্সের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির বুক সর্টার হিসেবে কর্মরত।
শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বিবরণ অনুযায়ী, যোগ্যতা না থাকার পরেও নূরে আলম প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে তার নিজস্ব দলবলসহ অবৈধ সুবিধা ও নানা পদোন্নতির দাবি জানিয়ে আসছেন। যদি কেউ তার বিরোধিতা করেন, তবে তিনি তাকে অপমান, মারধর এবং হুমকি দেন। অনেক সময় অপমানিত হওয়ার ভয়ে অনেকেই তার অবৈধ দাবি পূরণ করতে বাধ্য হন।
রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সামিউল ইসলাম জানান, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম গ্রেডের ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার যৌক্তিকতা যাচাইয়ের জন্য গঠিত কমিটির সভাপতি। তিনি কর্মচারীদের জানান যে, সরকার পলিটেকনিকের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করলেও বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব নিয়মে পরিচালিত হয়, তাই সরাসরি সেই সুবিধা প্রদান সম্ভব নয়। তবে কিছু কর্মচারী, বিশেষ করে নূরে আলম, দাবি করেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও বেশি সুবিধা পাওয়া উচিত এবং তিনি (ড. সামিউল) তা দিচ্ছেন না। উত্তরে ড. সামিউল ইসলাম ব্যাখ্যা করেন যে তিনি নিয়মের বাইরে যেতে পারেন না এবং প্রশাসনই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
পরে নূরে আলম তাঁকে কমিটি থেকে ইস্তফা দিতে বলেন, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। একপর্যায়ে নূরে আলম শিক্ষককে উদ্দেশ্য করে চিৎকার, করেন এবং তার টেবিলে আঘাত করলে কাচ ভেঙে যায়। ড. সামিউল ইসলাম জানান, তিনি এ ঘটনার বিস্তারিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়ে চিঠি লিখবেন এবং প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
এ ছাড়া, ৫ আগস্টের পরে নিজেকে জুলাই অভ্যুত্থানের নেতা এবং বিএনপির কর্মী পরিচয় দিয়ে, অবৈধ পদোন্নতি ও নানা টেন্ডারবাজির সুযোগ নেওয়ার জন্য সাবেক উপাচার্য ড. শাহ আলিমুজ্জামান বেলালকে নানা হুমকি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে নূরে আলমের বিরুদ্ধে। তার অবৈধ সুবিধার দাবি প্রত্যাখ্যান করায়, তিনি সাবেক উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ৫ আগস্টের পর নূরে আলম টেন্ডার ও বিল ছাড় করানোর ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করছেন। তিনি জানান, শিক্ষকরা তাদের সম্মান হারানোর ভয়ে তাকে কিছু বলার সাহস পান না। তিনি বর্তমানে সরবরাহকারীদের (সাপ্লায়ার) সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত। তিনি আরও বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সততার অভাব থাকলে এলটিএম পদ্ধতিতে ক্রয় প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়। আশা করি, মাননীয় উপাচার্য এই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবেন। এ ছাড়া পুরোনো সাব-স্টেশন সরানোর কাজেও তিনি জড়িত ছিলেন বলে শোনা যায়—এ বিষয়গুলোরও তদন্ত হওয়া উচিত।
অভিযুক্ত নূরে আলম বলেন, ‘আমাদের একটি নীতিমালা ছিল, যার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন সামিউল স্যার। কিন্তু তিনি বারবার মিটিংয়ের তারিখ পরিবর্তন করে সময় দীর্ঘায়িত করছিলেন। তাই আমি আরও ১০-১১ জনকে নিয়ে তার কাছে যাই এবং কারণ জানতে চাই। তিনি জানান, আমাদের দাবি পূরণ করা তার হাতে নেই এবং এটি পলিটেকনিকে সম্ভব হলেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্ভব নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা কেন এই সুযোগ পাব না—এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তিনি আমাকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলেন এবং আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এরপর তিনি লাফিয়ে উঠে টেবিলের ওপর থাপ্পড় দেন, আমিও একইভাবে প্রতিক্রিয়া জানাই। এতে টেবিলের কাচ ভেঙে যায়।
আমি কারও প্রতি কোনো ব্যক্তিগত ক্ষোভ পোষণ করি না। আমি এখানে ব্যক্তিগত স্বার্থে আসিনি। যেহেতু আমি কর্মচারী সমিতির সভাপতি, তাই সবার কথা ভেবেই সেখানে গিয়েছি।’