০৭:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৃতির তাঁতিদের শৈল্পিক ছোঁয়া

ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত: ০৯:৩৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪
  • / 57

ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়

ইবি প্রতিনিধি :


বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই,
“কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই,
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে
তুমি কত কষ্ট পাও রোধ, বৃষ্টির, ঝড়ে।


রজনীকান্ত সেনের এই কবিতার লাইন টুকু পড়েই শুধু বাবুইয়ের নিপুণ শিল্পের কথা জানতে পারলেও বর্তমান সময়ে প্রকৃতিতে এই বয়ন শিল্পীদের দেখা মেলা ভার। বনজঙ্গল উজারের ফলে যেমন হারে কমেছে তালগাছ ও খেজুর গাছের সংখ্যা, ঠিক তেমনি হারে বিলুপ্তির পথে এই প্রাকৃতিক তাঁতিদের সংখ্যা। তবে এই হারিয়ে যাওয়ার মাঝেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাসে দেখা মিলেছে প্রকৃতির স্থপতি ও সামাজিক বন্ধনের কারিগর বাবুই পাখির।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাখি চত্বরের ঠিক পশ্চিম পাশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মফিজ লেক। এই লেক এবং চত্বরের সংযোগ স্থলে খেজুর গাছে দেখা মিলেছে প্রকৃতির বয়ন শিল্পীদের নিপুণ কাজের। তাই হারিয়ে যাওয়া শিল্পীদের এই সম্ভাবনাময় আভাস উৎসাহের জন্ম দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের মনে। কেউ কেউ ক্যামেরায় বন্দি করে রাখছে এই শৈল্পিক নিদর্শনের।

গ্রীষ্মকালীন ও মুসলমান ধর্মের পবিত্র ঈদুল আজহা’র ছুটিতে প্রায় এক মাসের মতো বন্ধ ছিলো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ফলে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিচরণ না থাকায় মুক্ত পরিবেশ পাওয়ায় তাদের (বাবুই পাখি) আগমন হয়েছে বলে ধারণা শিক্ষক শিক্ষার্থীদের।

পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ছয়টি বাসা তৈরি করতে পারে। প্রজনন সময় ছাড়া অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী বাবুই পাখির গায়ে-পিঠে তামাটে কালো বর্ণের দাগ হয়। তবে প্রজনন ঋতুতে পুরুষ পাখির রং হয় গাঢ় বাদামি। বুকের ওপরের দিকটা হয় ফ্যাকাসে। ক্ষেতের ধান পাকার সময়টাই হল বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। এছাড়াও বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করার জন্য জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে আসে এবং ঘর আলোকিত করে। রাত শেষে সকাল হলেই জোনাকি পোকাকে ছেড়ে দেয়ে। এভাবে প্রতিরাতে একটা করে জোনাকি ধরে নিয়ে আসে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম হোসেন। টিউশনি থাকায় ক্যাম্পাসে এসেছিলো ক্যাম্পাস খোলারও ক’দিন আগে। এসে যখন একটু মনোরম পরিবেশের সন্ধ্যানে লেকের দিকে হাঁটতে বের হলো তখন এই দৃষ্টিনন্দন শৈল্পিক কাজে মুগ্ধ হয় সে।

তার ভাষ্যে, এক সময় গ্রামাঞ্চলে সারি সারি উঁচু তালগাছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা দেখা যেত। এখন তা আর সচরাচর চোখে পড়ে না। তবে ছুটি কাটিয়ে ক্যাম্পাসে এসে যখন এই হারিয়ে যাওয়া একটা জিনিস নিজ ক্যাম্পাসে দেখতে পেলাম সেটি আমাকে খুবই আনন্দিত করেছে। আমি চাইবো ক্যাম্পাসে আরো বেশী খেজুর গাছ এবং তালগাছ রোপণ করা হয় যেনো। এতে করে ভবিষ্যতে আমরা আরো বেশী বাবুই পাখির বাসা দেখতে পাবো।

কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্যের একজন অভয় ফারাবী’র সাথে।তিনি বলেন, জগতের প্রত্যেকটা প্রাণী তার খাদ্যের জোগান আর বাসস্থানের নিরাপত্তা চায়। আর পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য ঠিক এই কাজটাই করে আসছে। সেই উদ্দেশ্য থেকেই পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে ক্যাম্পাসে পাখি চত্বর করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে ছুটির আগেই পাখিদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়ে গিয়েছিলাম।

তিনি আরও বলেন, একটা জায়গায় যখন পাখিরা খাবার এবং বাসস্থানের নিরাপত্তা পাবে তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই পাখিরা আসবে৷ আর সেই নিরাপত্তার জন্যই এখন আমাদের পাখি চত্বরের খুব নিকটে বাবুই পাখি বাসা বেঁধেছে। আগে কখনো এমনটা দেখা যায় নি। আমরা পাখিদের জন্য এবং পরিবেশের জন্য আরো কাজ করে সুন্দর মনোরম পরিবেশ তৈরি করতে চাই এই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

নূর ই আলম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

শেয়ার করুন

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৃতির তাঁতিদের শৈল্পিক ছোঁয়া

প্রকাশিত: ০৯:৩৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪

ইবি প্রতিনিধি :


বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই,
“কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই,
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে
তুমি কত কষ্ট পাও রোধ, বৃষ্টির, ঝড়ে।


রজনীকান্ত সেনের এই কবিতার লাইন টুকু পড়েই শুধু বাবুইয়ের নিপুণ শিল্পের কথা জানতে পারলেও বর্তমান সময়ে প্রকৃতিতে এই বয়ন শিল্পীদের দেখা মেলা ভার। বনজঙ্গল উজারের ফলে যেমন হারে কমেছে তালগাছ ও খেজুর গাছের সংখ্যা, ঠিক তেমনি হারে বিলুপ্তির পথে এই প্রাকৃতিক তাঁতিদের সংখ্যা। তবে এই হারিয়ে যাওয়ার মাঝেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাসে দেখা মিলেছে প্রকৃতির স্থপতি ও সামাজিক বন্ধনের কারিগর বাবুই পাখির।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাখি চত্বরের ঠিক পশ্চিম পাশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মফিজ লেক। এই লেক এবং চত্বরের সংযোগ স্থলে খেজুর গাছে দেখা মিলেছে প্রকৃতির বয়ন শিল্পীদের নিপুণ কাজের। তাই হারিয়ে যাওয়া শিল্পীদের এই সম্ভাবনাময় আভাস উৎসাহের জন্ম দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের মনে। কেউ কেউ ক্যামেরায় বন্দি করে রাখছে এই শৈল্পিক নিদর্শনের।

গ্রীষ্মকালীন ও মুসলমান ধর্মের পবিত্র ঈদুল আজহা’র ছুটিতে প্রায় এক মাসের মতো বন্ধ ছিলো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ফলে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিচরণ না থাকায় মুক্ত পরিবেশ পাওয়ায় তাদের (বাবুই পাখি) আগমন হয়েছে বলে ধারণা শিক্ষক শিক্ষার্থীদের।

পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ছয়টি বাসা তৈরি করতে পারে। প্রজনন সময় ছাড়া অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী বাবুই পাখির গায়ে-পিঠে তামাটে কালো বর্ণের দাগ হয়। তবে প্রজনন ঋতুতে পুরুষ পাখির রং হয় গাঢ় বাদামি। বুকের ওপরের দিকটা হয় ফ্যাকাসে। ক্ষেতের ধান পাকার সময়টাই হল বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। এছাড়াও বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করার জন্য জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে আসে এবং ঘর আলোকিত করে। রাত শেষে সকাল হলেই জোনাকি পোকাকে ছেড়ে দেয়ে। এভাবে প্রতিরাতে একটা করে জোনাকি ধরে নিয়ে আসে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম হোসেন। টিউশনি থাকায় ক্যাম্পাসে এসেছিলো ক্যাম্পাস খোলারও ক’দিন আগে। এসে যখন একটু মনোরম পরিবেশের সন্ধ্যানে লেকের দিকে হাঁটতে বের হলো তখন এই দৃষ্টিনন্দন শৈল্পিক কাজে মুগ্ধ হয় সে।

তার ভাষ্যে, এক সময় গ্রামাঞ্চলে সারি সারি উঁচু তালগাছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা দেখা যেত। এখন তা আর সচরাচর চোখে পড়ে না। তবে ছুটি কাটিয়ে ক্যাম্পাসে এসে যখন এই হারিয়ে যাওয়া একটা জিনিস নিজ ক্যাম্পাসে দেখতে পেলাম সেটি আমাকে খুবই আনন্দিত করেছে। আমি চাইবো ক্যাম্পাসে আরো বেশী খেজুর গাছ এবং তালগাছ রোপণ করা হয় যেনো। এতে করে ভবিষ্যতে আমরা আরো বেশী বাবুই পাখির বাসা দেখতে পাবো।

কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্যের একজন অভয় ফারাবী’র সাথে।তিনি বলেন, জগতের প্রত্যেকটা প্রাণী তার খাদ্যের জোগান আর বাসস্থানের নিরাপত্তা চায়। আর পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য ঠিক এই কাজটাই করে আসছে। সেই উদ্দেশ্য থেকেই পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে ক্যাম্পাসে পাখি চত্বর করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে ছুটির আগেই পাখিদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়ে গিয়েছিলাম।

তিনি আরও বলেন, একটা জায়গায় যখন পাখিরা খাবার এবং বাসস্থানের নিরাপত্তা পাবে তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই পাখিরা আসবে৷ আর সেই নিরাপত্তার জন্যই এখন আমাদের পাখি চত্বরের খুব নিকটে বাবুই পাখি বাসা বেঁধেছে। আগে কখনো এমনটা দেখা যায় নি। আমরা পাখিদের জন্য এবং পরিবেশের জন্য আরো কাজ করে সুন্দর মনোরম পরিবেশ তৈরি করতে চাই এই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

নূর ই আলম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া