৬ জুলাই, ঐতিহাসিক শেরপুরের ঝিনাইগাতী কাটাখালী গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঝিনাইগাতী উপজেলার রাঙামাটিয়া-খাঠুয়াপাড়া গ্রামে বর্বরোচিত গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা। এদিন মুক্তিযুদ্ধের কোম্পানি কমান্ডার নালিতাবাড়ীর নুরুন্নবী মোহাম্মদ নাজমুল আহসানসহ একই পরিবারের মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন, মোফাজ্জল হোসেনসহ নাম না জানা আরো অনেক সাধারণ মানুষ শহীদ হন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নুরুন্নবী মোহাম্মদ নাজমুল আহসান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি প্রকৌশল অনুষদের ছাত্র ছিলেন । শেরপুরের নালিতাবাড়ী এলাকার বাইশ বছরের টগবগে মেধাবী তরুণ নাজমুল আহসান বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় শেরপুরের সাথে সমস্ত দেশের বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে পাকিস্তানি মিলিটারিদের অগ্রগমন রোধ করে দেওয়ার জন্য শেরপুরের কাটাখালী ব্রীজটি ভাঙার প্রয়োজন ছিল।  কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে ১১ নং সেক্টরের কোম্পানি কমান্ডার নাজমুল আহসান বীরত্বের সাথে এই অপারেশন পরিচালনা করে ৫ জুলাই কাটাখালি ব্রীজ উড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।

কিন্তু ৬ জুলাই ব্রীজ সংলগ্ন রাঙামাটিয়ার খাটুয়াপাড়া গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ চালায়। দলের সবাইকে নিরাপদে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়ে নাজমুল আহসান পাকিস্তানি মিলিটারিদের সাথে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হন। পাকিস্তানি মিলিটারির ছুঁড়া বুলেটে নাজমুলের বুকটা ঝাঁঝরা হয়ে যায়। একই সঙ্গে শহীদ হলেন নাজমুলের চাচাতো ভাই মোফাজ্জল হোসেন ও ভাতিজা ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ছাত্র আলী হোসেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতায় অসামান্য অবদানের জন্য স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৭ সালের ‘স্বাধীনতা পদক’ (মরণোত্তর) পান কাটাখালী সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ কোম্পানি কমান্ডার ও বাকৃবির শিক্ষার্থী নাজমুল আহসান।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ নাজমুল আহসানের অবদান চির স্মরণীয় করে রাখতে বাকৃবির একটি ছাত্র হলের নামকরণ করা হয় তার নামে। ১৯৭৩ সালের ২৪ নভেম্বর বাকৃবিতে নির্মিত হয় শহীদ নাজমুল আহসান হল।

এছাড়া প্রজন্মের পর প্রজন্ম দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্য মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বাকৃবির শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের স্মৃতি রক্ষার্থেই নির্মিত হয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ’ বা ‘মরণ সাগর’। এখানেও খোদাই করে লেখা রয়েছে শহীদ নাজমুল আহসানের নাম।

আলিফ
বাংলাদেশ কৃষি  বিশ্ববিদ্যালয়