কেমন উপাচার্য চান বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
- প্রকাশিত: ০৯:১১:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / 52
মোহাম্মদ এনামুল হোসেন (ববি প্রতিনিধি)
ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে একের পর এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্যদের পদত্যাগের হিড়িক পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০ আগস্ট বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূইয়া।
বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একে একে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে অভিভাবক হিসেবে কেমন উপাচার্য চান বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা- তা জেনেছেন পাবলিকিয়ান টুডের ববি প্রতিনিধি মোহাম্মদ এনামুল হোসেন।
কীর্তনখোলা নদীর তীরে আমাদের এই সুন্দর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর একচেটিয়া অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও পদত্যাগ করেছেন। এমতাবস্থায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে এমন একজন উপাচার্য আমি আশা করি যিনি প্রথমত, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ, নৈতিক মূল্যবোধ ও সততার প্রতি প্রতিশ্রুতি বদ্ধ এবং শিক্ষার্থীবান্ধব হবেন। একই সঙ্গে একজন উপাচার্যকে যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হয় সেহেতু তাঁর অবশ্যই দৃঢ় নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা, কৌশলগত চিন্তা ধারার অধিকারী, সহনশীল, উদার,সমতা ও অন্তর্ভুক্তির প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে হবে। একই সঙ্গে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের প্রতি আগ্রহ আছেন এমন ব্যক্তি। সর্বোপরি, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একজন ব্যক্তিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এর উপাচার্য হিসেবে চাই।
–আরেফা জামান লিজা, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
কারো মতো নয়; বরং জাতীয়ভাবে স্বচ্ছ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন একজন উপাচার্য চাই। কেননা, পদ এমন একটি জিনিস যেখানে গেলে সবাই দূর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ আসল দায়িত্বের কথা ভুলে গিয়ে তারা শুরু করে স্বার্থ সিদ্ধির খেলা। নীতিগত দিক দিয়ে এবং জাতীয় ভাবে স্বচ্ছ একজন ব্যক্তিই পারবে নিজেকে এসব নোংরা কর্মকান্ড থেকে দূরে রাখতে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এখনো বলতে গেলে প্রায় নতুন। অল্প সময়ে অনেককিছু অর্জন করলেও আরো অনেক উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের। একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয় একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষার পরিসরকে পূর্ণতা প্রদানের লক্ষ্যে। আর উপাচার্য সেখানে অনেকটা গডফাদারের ভূমিকা পালন করেন। তাই যিনিই আমাদের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হোন: তাঁকে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের সফলতার কথা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। সর্বোপরি নতুন এক ভবিষ্যৎ দেখার অপেক্ষায় রইলো বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
–ফারহানা আফসার মৌরী,শিক্ষার্থী, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ।
সম্প্রতি দেশে বহুল কাঙ্ক্ষিত ছাত্র-জনতার বিজয়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদের পতনের পাশাপাশি ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী, দলকানা ও রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ স্বেচ্ছায় ও আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উপাচার্য শূন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য নিয়োগ দিচ্ছেন। যার ধারাবাহিকতায় আমাদের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েও উপাচার্য নিয়োগের কথা শোনা যাচ্ছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি এমন একজন উপাচার্য চাই, যিনি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সম্মুখ সারিতে থেকে লড়াই করেছেন। তার পাশাপাশি নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্যের একাডেমিক যোগ্যতা বিশ্বমানের হবে এবং যার প্রশাসনিক দক্ষতায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সবচেয়ে সুসজ্জিত বিশ্ববিদ্যালয় হবে। এছাড়াও যিনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বমানের যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদান ও চলমান সেশনজট নিরসনের পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নকে প্রাধান্য দিবেন। যিনি শিক্ষার্থীদের গবেষণায় আগ্রহী করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
সাধারণত বৈশ্বিকভাবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতের ন্যূনতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০ (প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য অন্তত একজন শিক্ষক থাকবেন)। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ জন শিক্ষকের বিপরীতে রয়েছে ৪০ কিংবা তারও বেশি শিক্ষার্থী। তাছাড়াও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের সংকটের পাশাপাশি শিক্ষকদের বসার রুমেরও সংকট রয়েছে। শ্রেণিকক্ষ সংকটের ফলে দেখা যাচ্ছে যে, শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় পরিমাণ ক্লাস করতে পারছে না এবং কয়েকজন শিক্ষককে মিলে একই রুমে গাদাগাদি করে বসতে হয়। যার ফলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট লেগেই থাকে এবং অনেক শিক্ষার্থী ৬ বছর কিংবা তারও অধিক সময়ে তাদের ৪ বছরের স্নাতক শেষ করতে পারছেন না।
আমি চাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একজন উপাচার্য নিয়োগ করা হোক, সেশনজট নিরসনের লক্ষ্যে যিনি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুন্য পদগুলোতে মেরুদণ্ডযুক্ত, মজলুম ও শিক্ষার্থীবান্ধব, দেশের সবচেয়ে মেধাবীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করবেন এবং শ্রেণিকক্ষ সংকট নিরসনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করবেন। এছাড়াও চাইবো যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চলমান অপরাজনীতি কঠোর হস্তে দূর করার পাশাপাশি পূর্বে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার মতো যোগ্যতা সম্পন্ন হবেন।
- –মো. লিনূর ভূইয়া, শিক্ষার্থী, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোনো অঞ্চল বা দেশের গন্ডির ভিতরে সীমাবদ্ধ না।এটা বিশ্বমন্ডলে প্রতিযোগিতা করে।সেই পরিমন্ডলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান শক্ত করতে অবশ্যই প্রয়োজন সৎ,দক্ষ ও নেতৃত্বগুনাবলী সম্পন্ন একজন মানুষ,যে অবিভাবক হিসেবে অন্যায়কে অন্যায় বলে প্রতিহত করবে একই সাথে তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে যোগ্য ও দক্ষ ছাত্র হিসেবে তৈরি করতে কাজ করে যাবে।বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সময়ের তুলনায় বিগত সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় বেশ সংকটাপন্ন অবস্থায়।তাই নতুন ভিসি স্যারকে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের চাওয়াকে আমলে নিতে হবে,বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক চাহিদা (একাডেমিক বিল্ডিং,পর্যাপ্ত গবেষণার সুযোগ,লাইব্রেরিতে প্রয়োজীয় বইয়ের ব্যাবস্থা) পূরণে দ্রুত দৃশ্যমান কাজ করা।পাশাপাশি সময়ের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের এরিয়া বৃদ্ধি ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা। যেহেতু বিভাগীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সময়ের সাথে এখনো অনেক অপূর্ণতা তাই অবশ্যই এসব অভাব পূরণে কাজ করবে এমন কাওকে চাই,লিয়াজুড় ভিত্তিতে জড়িত কোনো ব্যাক্তি এই প্রতিষ্ঠানের অবিভাবক হোক এটা কোনো ভাবেই কাম্য নয়।আশাবাদী বর্তমান নেতৃত্বে যিনি আসবেন তিনি ছাত্রদের ভিসি হয়ে উঠবেন।
–ইনামুল হক, শিক্ষার্থী,বাংলা বিভাগ