ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ৩৬ দিন, চেয়ারম্যানের পদত্যাগ
- প্রকাশিত: ১২:২৩:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪
- / 33
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে(যবিপ্রবি) বিভাগের নাম ও ডিগ্রি পরিবর্তনের দাবিতে একমাসের বেশি সময় ধরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে এগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি (এপিপিটি) বিভাগের শিক্ষার্থীরা। গত ২১ অক্টোবর থেকে তারা এ কর্মসূচি পালন করছেন। এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলেও সাংবাদিকদের বলছেন ভিন্ন কথা। শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে পদত্যাগ করেছেন বলে দাবি করেছেন বিভাগটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস।
চাপের মুখে পদত্যাগের উদ্ভুত পরিস্থিতিকে কতিপয় শিক্ষার্থীদের অসদাচরণের ঘটনা উল্লেখ করে পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (ইএসটি) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কে. এম. দেলোয়ার হোসেনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফলিত বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শিরিন নিগার। গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে উক্ত ডীনের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
এপিপিটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, শুরু থেকেই আমাদের বিভাগের নাম ও ডিগ্রি ছিল এগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি। যা পরে পরিবর্তন করে এগ্রো প্রসেস অ্যান্ড ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং করা হয়। তবে আমরা নাম ও ডিগ্রি সংশোধনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে যথাযথ ডকুমেন্টসহ আবেদন করেছি, কিন্তু মাসেক খানেক হয়ে গেলো সমাধানের মুখ দেখিনি। আমাদের যৌক্তিক দাবির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে গত ২৩ তারিখে আমরা চেয়ারম্যান স্যারের কাছে যাই। তবে স্যার আমাদের তেমন কোনো আশ্বাস দিতে পারেননি। পরবর্তীতে গত ৬ বছর ধরে বিভাগের নাম ও ডিগ্রি পরিবর্তনের এই জটিলতার স্থায়ী সমাধান না হওয়া, শিক্ষার্থীদের চাকুরিজীবনের সমস্যা ও বিভাগের সার্বিক বিষয়ে তাঁর ভূমিকা জানার আগ্রহ প্রকাশ করি আমরা। কিন্তু তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে বরাবরের মতই অসদচারণ করেন এবং সকল বিষয়ে উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ঐসময় আমাদের একজন শিক্ষক দাঁড়িয়ে চেয়ারম্যান স্যারের উদ্দেশ্যে বলেন, যেহেতু শিক্ষার্থীদের অনাস্থা আপনার প্রতি তবে আপনি পদত্যাগ করুন। পরবর্তীতে তিনি ব্যক্তিগতকারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।
শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, আমরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠায় পড়ে আছি ডিগ্রি ও ডিপার্টমেন্টের এমন জটিলতার কারণে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো কর্তৃপক্ষ একটাবারের জন্যেও আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে আশ্বস্ততা দিতে পারেননি। এই সমস্যাগুলো কর্মক্ষেত্রে আমাদের অসুবিধা তৈরি করছে। সিলেবাস ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও নামের অসামঞ্জস্যের কারণে সরকারি-বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছি আমরা।
এবিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, বিভাগের নাম ও ডিগ্রি পরিবর্তন নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ডিন মহোদয় ও কয়েকজন শিক্ষকদের নিয়ে অনুষদীয় নির্বাহী কমিটি আলোচনায় বসি। সেখানে আমরা ছাত্রদের দাবির পক্ষে সুপারিশ করি। সেইপ্রেক্ষিতে ডিন একমত পোষণ করেন এবং ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে ভিসি স্যারের পরামর্শক্রমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে একটা এক্সপার্ট কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির মিটিংয়ে বিশেষ অনুমতিক্রমে ছাত্ররাও তাদের মতামত উপস্থাপন করেন। পরবর্তীতে কয়েকদিন পর ছাত্ররা উক্ত মিটিং এর উপনীত সিদ্ধান্ত আমার কাছে জানতে চাইলে এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ায় আমি তা বলতে অপারগতা প্রকাশ করি। এর বিপরীতে ছাত্ররা আমাকে ১০ মিনিটের ভিতরে তা প্রকাশ করার কঠোর দাবি জানাতে থাকে, নচেৎ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেয়ার জন্য বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। ফলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। যেহেতু ছাত্ররা আমাকে চায়না তাই আমি শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করি।
ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শিরিন নিগার জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই আমরা ৫ দিনের মধ্যে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে উপাচার্য স্যারের নির্দেশনায় এক্সপার্ট কমিটি গঠন করা হয় এবং তাঁরা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বিশেষ বিবেচনায় সুপারিশ করেছেনন। এরপর বিভাগের চেয়ারম্যানের রুমে গিয়ে প্রায় ৭০-৮০ জন শিক্ষার্থী মাইক নিয়ে উচ্চস্বরে চেঁচামেচি করে এবং তার পদত্যাগের দাবি তোলে। পরিণতিতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক, যাঁর অবসর নিতে তিন বছর দুই মাস বাকি, তিনি আত্মসম্মানের কারণে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এই ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে, আমি মনে করি শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষার্থীদের এমন আচরণ কাম্য নয়। আমাদের কোন ভুল বা ত্রুটি থাকলেও, এটি শিক্ষার্থীদের মবের শিকার হওয়ার যৌক্তিকতা দেয় না। শিক্ষার্থীরা কখনোই শিক্ষকদের প্রতিপক্ষ হতে পারে না। এমন ঘটনার পর আমরা শিক্ষকেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, তবুও আমাদের নিরাপত্তার প্রশ্নে প্রশাসন থেকে আমরা তেমন কোনো আশ্বাস পাইনি। আমরা শিক্ষকরা আমাদের ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাই। শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সৌহার্দ্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। যদি একটি ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয়, তবে তা পুরো শিক্ষাব্যবস্থার জন্য অশনি সংকেত। এ বিষয়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোঃ আমজাদ হোসেন বলেন, ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের কোনো শিক্ষকের নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ বা নিরাপত্তা চেয়ে কোন আবেদন আমার কাছে আসেনি। এবিষয়ে আমি কোনো কিছুই জানিনা। আমাকে এই বিষয়ে কেউ অবগত করেনি।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে একটি এক্সপার্ট কমিটির সুপারিশের মাধ্যমে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা ইউজিসিতে পাঠাবো। ইউজিসি থেকে অনুমোদন পেলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে। পাশাপাশি যেসব শিক্ষার্থী স্নাতক সম্পন্ন করেছে সরকারি ও বেসরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে তাঁদের যেন সার্টিফিকেট জনিত কোনো সমস্যা না হয় সেবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে এসকল সমস্যা সমাধানে যেহেতু সময়ের প্রয়োজন তাই আমি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আর চেয়ারম্যানের পদত্যাগ গ্রহণ করা হয়নি।
উল্লেখ্য, ২১ অক্টোবর শিক্ষার্থীরা মাইকেল মধুসূদন দত্ত কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে মানববন্ধন করে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।