০৩:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাকরিতে বয়সসীমা বৃদ্ধি নিয়ে যা ভাবছেন ডুয়েটিয়ানরা

ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত: ০৩:৪৭:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪
  • / 51

ব্রিটিশ ভারতে ১৮৯৫ সালে আইসিএস পরীক্ষায় বসার সর্বনিম্ন বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয় ২১ বছর। আর সর্বোচ্চ বয়সসীমা ছিল ২৩ বছর। বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বয়সসীমা বাড়তে বাড়তে এখন ৩০ বছরে এসে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত চাকরিপ্রার্থীরা চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৫ করার দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের এই দাবির মুখে বর্তমানের অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার এ সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করেন। গত ১২ অক্টোবর সেই কমিটি ছেলেদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছর এবং মেয়েদের ৩৭ বছর করার জন্য সুপারিশ করে। তাদের এই সুপারিশের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদেরকে এই সুপারিশকে নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা গেছে ৷ চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে কী ভাবছেন ডুয়েটে অধ্যয়নরত এসব শিক্ষার্থীরা? তাদের সেই ভাবনা বা কথাগুলো তুলে ধরেছেন পাবলিকিয়ান টুডে’র এলপিআইয়ের প্রতিনিধি হাসিবুর রশীদ:-

চাকরিতে বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইন্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র মাহতাব হোসেন দোলন বলেন, “আমি একজন পাবলিক ইউনিভার্সিটির ছাত্র হিসেবে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য বলে মনে করি না। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির পেছনে যে প্রধান কারণ দেখিয়ে আসতেছে তা হলো- সেশনজটের কারণে আমাদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হতে সময় বেশি লাগে । কিন্তু আমরা একটু ভালো করে খেয়াল করলে দেখতে পাবো যে এই সেশন জটের মূল কারণ অনেক সময় আমরা শিক্ষার্থীরাই। সে ক্ষেত্রে নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করে সরকারের কাছে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা আমি ব্যক্তিগতভাবে যুক্তিযুক্ত বলে মনে করি না।

চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধির কারণে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাবে। একটা উদাহরণ যদি বলি, ধরি চাকরির বয়সসীমা পাঁচ বছর বাড়ালাম। এতেকরে আমার একটা লোক পাঁচ বছর বেকার থাকবে সে লোকটি যদি এই আশায় বসে না থেকে ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা মাসিক আয় করতো তাহলে পাঁচ বছর শেষে দেশের জিডিপি তে ছয় লক্ষ টাকা অবদান রাখতে পারতো। এভাবে যদি বছরে ১০ লক্ষ করে বেকার বাড়তে থাকে তাহলে এই অংক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় এটা ও আমাদের ভাবার বিষয়।

একটা প্রতিবেদনে দেখা গেছে প্রযুক্তি খাতে তরুণদের (১৮-২৮ বছর) মধ্যে চাকরি পাওয়ার হার তুলনামূলক বেশি। এছাড়া ও যদি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তাকাই সেখানে তরুণ প্রার্থীদের (২২-৩০ বছর) বেশি চাহিদা থাকে। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান আবার বয়স এবং অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করে।

এছাড়াও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি উচ্চশিক্ষায় মারাত্মক প্রভাব ফেলে। যেমন : বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের স্মৃতিশক্তি ও শেখার গতি হ্রাস পায়, প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সমস্যা হয়, আত্মবিশ্বাসের অভাব, আর্থিক চ্যালেঞ্জ ও সামাজিক বা সাংস্কৃতিক বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয়।”

কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র আতিকুর রহমান বাপ্পি বলেন, “আমি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করার পক্ষে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। কারণ- একজন ছেলে গ্রাজুয়েশন শেষ করতে করতে মোটামুটি ২৪-২৬ বছর হয়ে যায়। এই গ্রাজুয়েশনের পরে সে আর মাত্র চার বছর সময় পাচ্ছে। চার বছর পরে তার এই সার্টিফিকেট ভ্যালুলেস হয়ে যায়। এই জন্য আমি মনে করি, চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা বৃদ্ধি করা হলে বেকারত্বের হারটা কমবে। বেকারত্ব বৃদ্ধির মূল কারণগুলো হচ্ছে – চাকরিতে দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার অভাব এগুলোর কারণে মূলত বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি মনে করি, চাকরিতে বয়স সীমা বৃদ্ধি করলে যে বেকারত্বের হারটা যে বাড়বে এটা আসলে ভুল কনসেপ্ট। যখন বয়স সীমা ৩০ থাকবে তখন ছেলেটার চিন্তা থাকবে যে আমাকে গ্রেজুয়েশন শেষ করার পরে ৩-৪ বছরের মধ্যে একটা সরকারি চাকরি নিতেই হবে। সে ক্ষেত্রে সে কোনো প্রাইভেট সেক্টরে জয়েন করে না। উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাবো যে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। যেমন: আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতেও চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমাদের দেশ জনবহুল দেশ, কর্মক্ষেত্রের অভাব। বছরে মাত্র কয়েকটা নিয়োগ হয় যার কারণে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। লক্ষ লক্ষ প্রতিযোগীর মাঝখান থেকে মাত্র কয়েক হাজার নিয়োগ হয়। বিশাল একটা জনসংখ্যা এই কারণে প্রাইভেট সেক্টরে জয়েন করে না, সরকারি চাকরির আশায় বসে থাকে। যার কারণে বছরের পর বছর প্রতিযোগী বাড়ে। প্রাইভেট চাকরিতে যেরকম স্ট্রিট স্ট্রাটেজি মেইনটেইন করা হয়, সরকারি চাকরিতেও যদি নিয়ম মানা হয় তাহলে মানুষ ওই টেনডেন্সি থেকে বের হয়ে আসবে যে সরকারি চাকরিতে জয়েন করার পরে আমার লক্ষ লক্ষ টাকা হয়ে যাবে, বাড়ি- গাড়ি হয়ে যাবে। যখন সরকারি চাকরিতে জবাবদিহিতা নিয়ে আসা হবে তখন দুর্নীতি হ্রাস পাবে এবং মানুষ এবং মানুষ এই চিন্তা থেকে বের হয়ে আসবে যে চাকরিতে ঢুকলে আমার টাকা হয়ে যাবে। এবং প্রাইভেট সেক্টরেও মানুষ জয়েন করবে। এ কারণে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৮ থেকে ১০ বছর বৃদ্ধি করা হলে সে একটা লং টাইম পাবে। এই সময়টা পাওয়ার কারণে সে প্রথমে সরকারি চাকরি হোক বা না হোক প্রাইভেট সেক্টরে জয়েন করবে। জয়েন করার ফলে তার বর্তমান যে বেকারত্বটা সেটা দূর হবে। এবং এই সময়টাতে সে একটা সরকারি চাকরি ম্যানেজ করে ফেলবে। যেহেতু সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং তার এক্সপিরিয়েন্স অর্জন হবে। তাই আমি মনে করি যে, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করা যৌক্তিক।”

তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল ডিপার্টমেন্টের চতুর্থ বর্ষের মেধাবী ছাত্র মো. আবু নাছের বলেন, “সত্যিকার অর্থে সরকার কর্তৃক নতুন করে যে প্রজ্ঞাপন আসছে সেটা আমাদের তরুণ প্রজন্মের প্রতি প্রহসন ব্যতীত কিছুই নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। দেশে যদি নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে না পারেন, তাহলে বয়স সীমা ৪০ বা ৫০ করেও যারা চাকরি প্রার্থী আছে তারা চাকরি পাবে না। দেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি তা খুবই নাজেহাল। দেশে শিক্ষিত বেকারের হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দেশের অবস্থা এখন এমন যে, শিক্ষিত বেকারের ভারে দেশটা নুইয়ে পড়েছে। কারণ চাকরির বাজারে বর্তমানে চাকরি নেই। একটা জরিপে দেখা গিয়েছে, প্রতি বছর কমপক্ষে ২০ লক্ষ চাকরির বাজারে নতুন করে যোগ হচ্ছে। লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) তথ্য মতে, বাংলাদেশে ১০০ জন স্নাতকধারীর ৪৭ জনই বেকার। আইএলওর ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা তিন কোটি। তখন সংস্থাটি আভাস দেয়, কয়েক বছরে তা দ্বিগুণ হয়ে ছয় কোটিতে দাঁড়াবে, যা মোট জনসংখ্যার ৩৯.৪০ শতাংশ হবে। এই রকম পরিস্থিতিতে বয়স সীমা ৩০ থেকে ৩৫ কিংবা ৩৭ করা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।

প্রতিবছর শ্রমবাজারে ২০ থেকে ২২ লাখ তরুণ–তরুণী নতুন করে যুক্ত হচ্ছেন। দেশের অভ্যন্তরে কর্মসংস্থান হয় ১২ থেকে ১৩ লাখের। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান হয় মজুরিভিত্তিক অনানুষ্ঠানিক খাতে, বাকিরা শোভন চাকরিতে যান। সেই হিসাবে প্রতিবছর তিন লাখের মতো শোভন চাকরি হয়। সুতরাং, চাকরির বয়স না বাড়িয়ে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি।

চাকরির বয়সসীমা যখন বৃদ্ধি পাবে তখন লোকটা চাকরি না পাওয়ার সম্ভাবনা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং লোকটা এক পর্যায়ে হতাশায় ভুগবে, পারিবারিক চাপ সৃষ্টি হবে, আর্থিক অনটন দেখা দিবে, আত্মহত্যাসহ আরো নানান খারাপ কাজের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। আমি একজন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে দৃঢ় প্রতিবাদ এবং তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এবং আমি মনে করি সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বেকার অর্থাৎ শিক্ষিত তরুণ যারা আছে তারা তাদের জন্য প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়।”

হাসিবুর রশীদ
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি, এলপিআই

শেয়ার করুন

চাকরিতে বয়সসীমা বৃদ্ধি নিয়ে যা ভাবছেন ডুয়েটিয়ানরা

প্রকাশিত: ০৩:৪৭:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

ব্রিটিশ ভারতে ১৮৯৫ সালে আইসিএস পরীক্ষায় বসার সর্বনিম্ন বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয় ২১ বছর। আর সর্বোচ্চ বয়সসীমা ছিল ২৩ বছর। বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বয়সসীমা বাড়তে বাড়তে এখন ৩০ বছরে এসে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত চাকরিপ্রার্থীরা চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৫ করার দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের এই দাবির মুখে বর্তমানের অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার এ সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করেন। গত ১২ অক্টোবর সেই কমিটি ছেলেদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছর এবং মেয়েদের ৩৭ বছর করার জন্য সুপারিশ করে। তাদের এই সুপারিশের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদেরকে এই সুপারিশকে নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা গেছে ৷ চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে কী ভাবছেন ডুয়েটে অধ্যয়নরত এসব শিক্ষার্থীরা? তাদের সেই ভাবনা বা কথাগুলো তুলে ধরেছেন পাবলিকিয়ান টুডে’র এলপিআইয়ের প্রতিনিধি হাসিবুর রশীদ:-

চাকরিতে বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইন্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র মাহতাব হোসেন দোলন বলেন, “আমি একজন পাবলিক ইউনিভার্সিটির ছাত্র হিসেবে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য বলে মনে করি না। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির পেছনে যে প্রধান কারণ দেখিয়ে আসতেছে তা হলো- সেশনজটের কারণে আমাদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হতে সময় বেশি লাগে । কিন্তু আমরা একটু ভালো করে খেয়াল করলে দেখতে পাবো যে এই সেশন জটের মূল কারণ অনেক সময় আমরা শিক্ষার্থীরাই। সে ক্ষেত্রে নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করে সরকারের কাছে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা আমি ব্যক্তিগতভাবে যুক্তিযুক্ত বলে মনে করি না।

চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধির কারণে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাবে। একটা উদাহরণ যদি বলি, ধরি চাকরির বয়সসীমা পাঁচ বছর বাড়ালাম। এতেকরে আমার একটা লোক পাঁচ বছর বেকার থাকবে সে লোকটি যদি এই আশায় বসে না থেকে ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা মাসিক আয় করতো তাহলে পাঁচ বছর শেষে দেশের জিডিপি তে ছয় লক্ষ টাকা অবদান রাখতে পারতো। এভাবে যদি বছরে ১০ লক্ষ করে বেকার বাড়তে থাকে তাহলে এই অংক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় এটা ও আমাদের ভাবার বিষয়।

একটা প্রতিবেদনে দেখা গেছে প্রযুক্তি খাতে তরুণদের (১৮-২৮ বছর) মধ্যে চাকরি পাওয়ার হার তুলনামূলক বেশি। এছাড়া ও যদি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তাকাই সেখানে তরুণ প্রার্থীদের (২২-৩০ বছর) বেশি চাহিদা থাকে। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান আবার বয়স এবং অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করে।

এছাড়াও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি উচ্চশিক্ষায় মারাত্মক প্রভাব ফেলে। যেমন : বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের স্মৃতিশক্তি ও শেখার গতি হ্রাস পায়, প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সমস্যা হয়, আত্মবিশ্বাসের অভাব, আর্থিক চ্যালেঞ্জ ও সামাজিক বা সাংস্কৃতিক বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয়।”

কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র আতিকুর রহমান বাপ্পি বলেন, “আমি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করার পক্ষে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। কারণ- একজন ছেলে গ্রাজুয়েশন শেষ করতে করতে মোটামুটি ২৪-২৬ বছর হয়ে যায়। এই গ্রাজুয়েশনের পরে সে আর মাত্র চার বছর সময় পাচ্ছে। চার বছর পরে তার এই সার্টিফিকেট ভ্যালুলেস হয়ে যায়। এই জন্য আমি মনে করি, চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা বৃদ্ধি করা হলে বেকারত্বের হারটা কমবে। বেকারত্ব বৃদ্ধির মূল কারণগুলো হচ্ছে – চাকরিতে দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার অভাব এগুলোর কারণে মূলত বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি মনে করি, চাকরিতে বয়স সীমা বৃদ্ধি করলে যে বেকারত্বের হারটা যে বাড়বে এটা আসলে ভুল কনসেপ্ট। যখন বয়স সীমা ৩০ থাকবে তখন ছেলেটার চিন্তা থাকবে যে আমাকে গ্রেজুয়েশন শেষ করার পরে ৩-৪ বছরের মধ্যে একটা সরকারি চাকরি নিতেই হবে। সে ক্ষেত্রে সে কোনো প্রাইভেট সেক্টরে জয়েন করে না। উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাবো যে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। যেমন: আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতেও চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমাদের দেশ জনবহুল দেশ, কর্মক্ষেত্রের অভাব। বছরে মাত্র কয়েকটা নিয়োগ হয় যার কারণে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। লক্ষ লক্ষ প্রতিযোগীর মাঝখান থেকে মাত্র কয়েক হাজার নিয়োগ হয়। বিশাল একটা জনসংখ্যা এই কারণে প্রাইভেট সেক্টরে জয়েন করে না, সরকারি চাকরির আশায় বসে থাকে। যার কারণে বছরের পর বছর প্রতিযোগী বাড়ে। প্রাইভেট চাকরিতে যেরকম স্ট্রিট স্ট্রাটেজি মেইনটেইন করা হয়, সরকারি চাকরিতেও যদি নিয়ম মানা হয় তাহলে মানুষ ওই টেনডেন্সি থেকে বের হয়ে আসবে যে সরকারি চাকরিতে জয়েন করার পরে আমার লক্ষ লক্ষ টাকা হয়ে যাবে, বাড়ি- গাড়ি হয়ে যাবে। যখন সরকারি চাকরিতে জবাবদিহিতা নিয়ে আসা হবে তখন দুর্নীতি হ্রাস পাবে এবং মানুষ এবং মানুষ এই চিন্তা থেকে বের হয়ে আসবে যে চাকরিতে ঢুকলে আমার টাকা হয়ে যাবে। এবং প্রাইভেট সেক্টরেও মানুষ জয়েন করবে। এ কারণে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৮ থেকে ১০ বছর বৃদ্ধি করা হলে সে একটা লং টাইম পাবে। এই সময়টা পাওয়ার কারণে সে প্রথমে সরকারি চাকরি হোক বা না হোক প্রাইভেট সেক্টরে জয়েন করবে। জয়েন করার ফলে তার বর্তমান যে বেকারত্বটা সেটা দূর হবে। এবং এই সময়টাতে সে একটা সরকারি চাকরি ম্যানেজ করে ফেলবে। যেহেতু সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং তার এক্সপিরিয়েন্স অর্জন হবে। তাই আমি মনে করি যে, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করা যৌক্তিক।”

তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল ডিপার্টমেন্টের চতুর্থ বর্ষের মেধাবী ছাত্র মো. আবু নাছের বলেন, “সত্যিকার অর্থে সরকার কর্তৃক নতুন করে যে প্রজ্ঞাপন আসছে সেটা আমাদের তরুণ প্রজন্মের প্রতি প্রহসন ব্যতীত কিছুই নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। দেশে যদি নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে না পারেন, তাহলে বয়স সীমা ৪০ বা ৫০ করেও যারা চাকরি প্রার্থী আছে তারা চাকরি পাবে না। দেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি তা খুবই নাজেহাল। দেশে শিক্ষিত বেকারের হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দেশের অবস্থা এখন এমন যে, শিক্ষিত বেকারের ভারে দেশটা নুইয়ে পড়েছে। কারণ চাকরির বাজারে বর্তমানে চাকরি নেই। একটা জরিপে দেখা গিয়েছে, প্রতি বছর কমপক্ষে ২০ লক্ষ চাকরির বাজারে নতুন করে যোগ হচ্ছে। লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) তথ্য মতে, বাংলাদেশে ১০০ জন স্নাতকধারীর ৪৭ জনই বেকার। আইএলওর ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা তিন কোটি। তখন সংস্থাটি আভাস দেয়, কয়েক বছরে তা দ্বিগুণ হয়ে ছয় কোটিতে দাঁড়াবে, যা মোট জনসংখ্যার ৩৯.৪০ শতাংশ হবে। এই রকম পরিস্থিতিতে বয়স সীমা ৩০ থেকে ৩৫ কিংবা ৩৭ করা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।

প্রতিবছর শ্রমবাজারে ২০ থেকে ২২ লাখ তরুণ–তরুণী নতুন করে যুক্ত হচ্ছেন। দেশের অভ্যন্তরে কর্মসংস্থান হয় ১২ থেকে ১৩ লাখের। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান হয় মজুরিভিত্তিক অনানুষ্ঠানিক খাতে, বাকিরা শোভন চাকরিতে যান। সেই হিসাবে প্রতিবছর তিন লাখের মতো শোভন চাকরি হয়। সুতরাং, চাকরির বয়স না বাড়িয়ে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি।

চাকরির বয়সসীমা যখন বৃদ্ধি পাবে তখন লোকটা চাকরি না পাওয়ার সম্ভাবনা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং লোকটা এক পর্যায়ে হতাশায় ভুগবে, পারিবারিক চাপ সৃষ্টি হবে, আর্থিক অনটন দেখা দিবে, আত্মহত্যাসহ আরো নানান খারাপ কাজের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। আমি একজন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে দৃঢ় প্রতিবাদ এবং তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এবং আমি মনে করি সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বেকার অর্থাৎ শিক্ষিত তরুণ যারা আছে তারা তাদের জন্য প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়।”

হাসিবুর রশীদ
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি, এলপিআই