ছাত্র সংসদ নয়, এবার ছাত্র পরিষদ! নোবিপ্রবিতে প্রশাসনের বিতর্কিত রূপরেখা
- প্রকাশিত: ১০:০৫:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫
- / 66
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো সিজিপিএ’র ভিত্তিতে ছাত্র পরিষদ গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রতিটি অনুষদ থেকে ১৮ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। ২০২৫ সালের ১২ জুন তারিখে প্রকাশিত এই নোটিশে ছাত্র পরিষদ গঠনের বিস্তারিত নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শাখা কর্তৃক প্রণীত নির্দেশনা অনুযায়ী, ‘স্টুডেন্ট কাউন্সিল আহ্বায়ক কমিটি’ গঠনে যেসব বিষয়গুলো প্রাধান্য দেয়া হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো শিক্ষার্থীদের YCGPA (Yearly Cumulative Grade Point Average)। শিক্ষার্থীদের মেধাভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে YCGPA-এর ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দেয়ার পর থেকেই অনেক শিক্ষার্থী এ সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জারি করা বিজ্ঞপ্তিকে শিক্ষার্থীরা অনেকেই :একটি ঠুনকো ও একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত” বলে অভিহিত করেছেন। ছাত্রসংসদ এর পরিবর্তে কৌশল হিসেবে এই একপাক্ষিক ছাত্রপরিষদ গঠন করা নিয়ে পতিক্রিয়া জানাচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী ।
কমিটি গঠনে মূল বিবেচ্য বিষয়গুলো:
প্রতিটি অনুষদের অধীন প্রত্যেক বিভাগের সর্বোচ্চ YCGPA প্রাপ্ত একজন করে শিক্ষার্থী নির্বাচিত হবেন।
বিভাগের সর্বোচ্চ YCGPA প্রাপ্ত শিক্ষার্থী যদি আগ্রহ না দেখান তবে পরবর্তী মেধাক্রম অনুযায়ী নির্বাচন করা হবে।অনুষদের অধীন বিভাগ সংখ্যা যদি ১৮-এর কম হয়, তবে বিভাগের সংখ্যা অনুসারে একজনের বেশি শিক্ষার্থীও নির্বাচিত হতে পারেন। কমিটিতে অন্তত ৩০% নারী শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে (যেমন: বিজ্ঞান, ব্যবসায় প্রশাসন, সামাজিক বিজ্ঞান, শিক্ষা অনুষদ ইত্যাদি) প্রতিনিধিত্ব বণ্টন করতে হবে।ধর্ম, জাতি ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার দিকেও গুরুত্ব দেয়া হবে।
কমিটির গঠন ও কার্যাবলি:প্রতিটি অনুষদ থেকে গঠিত হবে ১৮ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি।এই কমিটির মেয়াদ হবে দুই বছর।নতুনভাবে গঠিত এ কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে।
প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির প্রতিক্রিয়ায় ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী বনি ইয়ামিন বলেন,
নোটিশে যেটা স্পষ্ট করেনি।
ছাত্র পরিষদের আসলে কাজটা কি?
তারাকি শুধু শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে কাজ করবে?
যদি এতটুকুই হয় তাহলে CGPA ভিত্তি কিছুটা মানা যায়। CGPA তুলনামূলক ভাবে কম এমন শিক্ষার্থী অনেকেই আছে যারা শিক্ষা ও গবেষণায় আগ্রহী তাদের বিষয়েও চিন্তা করা জরুরি।
আর যদি তারা সার্বিকভাবে শিক্ষার্থীদের সব ধরনের সমস্যার প্রতিনিধিত্ব করে তাহলে এটা শুধুই CGPA এর ভিত্তিতে হবে কল্পনাই করা যায়না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আসলে ছাত্র পরিষদকে ছাত্র সংসদের বিকল্প হিসেবে চাচ্ছে কিনা এটা ক্লিয়ার করা জরুরি বলে মনে করছি। জুলাই অভ্যুত্থানের পরবর্তীতে এসে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত জুলাই চেতনার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান বলে মনে করছি।
সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুধা বড়ুয়া বলেন: ক্যাম্পাস বন্ধ থাকা অবস্থায় ছাত্রদের সঙ্গে মতবিনিময় ছাড়াই নবগঠিত ছাত্র পরিষদ গঠন করা হয়েছে, যা প্রশ্নবিদ্ধ। নাম পাঠাতে মৌখিক সম্মতির কথা বলা হলেও ব্যাচভিত্তিক আলোচনা হয়নি বা হবে কিনা তা পরিষ্কার নয়। চলমান বেশিরভাগ বিভাগের চলমান পরীক্ষার মাঝে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া অনিশ্চিত। পরিষদের দায়িত্ব ও মানদণ্ড নিয়েও স্পষ্টতা নেই। সিজিপিএসহ আরও মানদণ্ড ঠিক করে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যেত, যা এখানে করা হয়নি।
ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব আল জুবায়ের বলেন: ছাত্রপরিষদ গঠনপ্রণালী কেমন হওয়া উচিত সেই বিষয়ে নিঃসন্দেহে সাধারণ ছাত্রদের মতামতের গুরুত্ব সব থেকে বেশি হওয়া উচিত। কিন্তু প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে উক্ত বিষয়টি অনুপস্থিত। একজন একাডেমিক মেধাবী শিক্ষার্থী এবং একজন প্রতিনিধিত্বকারী দায়িত্বশীল শিক্ষার্থীর চিন্তাধারা,দক্ষতা ও মেধার ভিন্নতা লক্ষণীয়। তাই আমি মনে করি প্রশাসনের ছাত্রপরিষদ গঠনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখা উচিত ।
বাকি শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, এই প্রক্রিয়া আসলে ছাত্র সংসদের বিকল্প গড়ে তোলার চেষ্টা। তাদের দাবি, “শিক্ষা ও গবেষণাভিত্তিক একটি প্রতিনিধি পরিষদ সিজিপিএ অনুযায়ী হতে পারে, কিন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ ছাত্র পরিষদ — যা শিক্ষার্থীদের সার্বিক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে — সেটির ভিত্তি কখনোই শুধুমাত্র সিজিপিএ হতে পারে না।”
তারা প্রশাসনের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন — “ছাত্র পরিষদের কাজ কী হবে তা কি স্পষ্ট করা হয়েছে? এটি কি শুধু একাডেমিক নাকি সার্বিক প্রতিনিধিত্ব?”
এই বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের বিপরীতে ২০০৮ সালে রিজেন্ট বোর্ড কর্তৃক “স্টুডেন্ট কাউন্সিল/ছাত্র পরিষদ” গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। আমরা সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে উদ্যোগ নিয়েছি। এই পরিষদের কাজ হবে অনুষদ ভিত্তিক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও সমস্যা নিয়ে কথা বলা। মনোনয়নের ভিত্তিতে সদস্য পদ দেয়া হবে। তবে পরবর্তীতে “ছাত্র সংসদ” হলে সেক্ষেত্রে নির্বাচনের ভিত্তিতে হবে।”