জাবিতে ‘ছাত্র রাজনীতি সংস্কার’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত
- প্রকাশিত: ০১:৩৬:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫
- / 35
জাবি প্রতিনিধি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্র রাজনীতির ঐতিহ্য, বর্তমান প্রেক্ষাপট, ভবিষ্যৎ সংস্কারের সম্ভাবনা এবং ক্রিয়াশীল সকল ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সহাবস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘জাতীয় ছাত্র রাজনীতি সংস্কার: প্রসঙ্গ ডাকসু, জাকসু, রাকসু, চাকসু’ শীর্ষক গঠনমূলক জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত সংলাপে সকল ছাত্র সংগঠনের রাজনৈতিক সহবস্থানের আহ্বান জানিয়েছেন জাবি উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটরিয়ামে ছাত্র অধিকার পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সহাবস্থান বৃদ্ধির তাগিদ দিয়ে উপাচার্য বলেন, দেশকে গণতন্ত্রের পথে ধাবিত করতে হলে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সংযম রেখে ভুল জায়গাগুলোতে পরস্পরের মধ্যে বেশি বেশি আলোচনা করতে হবে। যতদিন জাকসু নেই ততদিন ছাত্র প্রতিনিধি নেই গঠনতন্ত্র বলে। আমি জাকসুর সভাপতি। আমি কেন জাকসু দিব না তা খুঁজে পাই না৷ আড়াইমাস আগে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জাকসুর দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে৷ এই আড়াইমাস আমার নির্লিপ্ততার জন্য দুঃখিত৷
জাকসু নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘জাকসু সফল করতে হবে টিম ওয়ার্কের মধ্য দিয়ে। এটা একক কোন ব্যক্তির দ্বারা সম্ভব নয়৷ এজন্য দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার আলেচনা হওয়া উচিত। আমরা চাই ডিবেটের বদলে ডায়লগ চালু হোক। তবে ছাত্র সংগঠনগুলোকে চিঠি দিয়ে আলোচনায় বসানোর এখতিয়ার আমি রাখি না৷ কারণ এটা প্রশাসনিক বিষয় নয়, রাজনৈতিক বিষয়৷ জাকসু নিয়ে সবাই মিলে আমার নিকট যে আস্থা রেখেছেন তা যেন পূরণ করতে পারি সে জন্য সকলের সহযোগিতা চাই’।
শহীদদের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন রেখে উপাচার্য বলেন, যখন আমরা হাসিনার ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে যখন সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছি তখনই সফলতা এসেছে। ভিসি প্রশ্ন রাখেন, যারা প্রাণ দিয়েছে তাদের অঙ্গীকারের পালনে কী আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি? নাকি বৈচিত্র্যের কারণে বিভাজনের সৃষ্টি করছি। জয়ী হবার জন্য পরস্পরকে যুক্তি দিয়ে আক্রমন করেছি? ২৪ এর অঙ্গীকার রক্ষায় বিষয় কি এটা ছিল?
মানবিক মূল্যবোধ বৃদ্ধির তাগিদ দিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, রাজনীতি সংস্কারের আগে মানবিক সংস্কারের দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে৷ জাকসু করে লাভ কি যদি মানবিক মূল্যবোধ এবং পারস্পারিক সহাবস্থান না থাকে৷ দুঃখজনক হলেও সত্যি ডিবেট এবং ডায়লগের মধ্যে পার্থক্য আমরা বুঝিনা। সকল সংগঠনগুলোর নিজেদের মধ্যে সংকট এবং বিভেদ নিয়ে আলেচনা হওয়া উচিত৷
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ছাত্র রাজনীতি ক্ষমতার উৎস থাকলে চাঁদাবাজি থাকবে না৷ জবাবদিহিতা থাকবে৷ এজন্য রাজনীতিবিদদের অর্থনৈতিক উৎস নিয়ে আলেচনা হওয়া উচিত৷ তাহলে স্বচ্ছতা ফিরবে৷ জাতি গঠনের শুরু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেজুড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতি বাদ দিতে হবে।
জাতীস নির্বাচনের আগে জাকসু দাবি করে তিনি বলেন, জাকসুর লক্ষে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রতিনিধিত্বশীল আলোচনার ব্যবস্থা করা দরকার। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরবে। ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিয়ে সংঘাত হবে না৷ সকলকে নিয়ে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
সহাবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক ছাত্র সংঠনগুলোকে সৌহার্দ্যপূর্ণ হতে হবে। আলোচনায় একজন আসলে অন্যজন আসবে না এ ধরনের কালচার থেকে বের হয়ে আসতে হবে৷ বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস বলে বাম ডান সবাই যখন কাধে কাধ মিলিয়ে কোন কাজ করেছে তখনই সফল হয়েছে৷
ছাত্র শিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ আলোচনায় কয়েকটি প্রস্তাব রাখেন। প্রস্তাবগুলো হলো- সরকারি ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা চাদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক সিন্ডিকেট, আধিপত্য বিস্তার প্রভূতিতে যুক্ত ছিল। সে জায়গা থেকে ফিরে এসে ছাত্র রাজনীতিকে আদর্শ জায়গায় নিয়ে আসতে হলে সরকারিভাবে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিধিমালা প্রণয়ন করা ও নির্বাচনের জন্য নীতিমালা তৈরি করা; ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে আন্তঃকোন্তল দূর করে সহাবস্থান নিশ্চিতে উদ্যোগ নেওয়া; ছাত্রসংগঠনকে লেজুরবৃত্তিমুক্ত করা ও সংগঠনের অফিসগুলো হবে জ্ঞানচর্চার জায়গা হিসেবে তৈরি করে প্রিয় অভিভাবকের ছবি টানানো বাদ দেওয়া; বিরোধী মত দমন করার সংস্কৃতি বন্ধ করা; শিক্ষার্থী খুন, শিক্ষক খুনের মত ছাত্র রাজনীতির সংঘাতময় বন্ধ করে অপরাজনীতি বন্ধ করা; ছাত্র রাজনীতি পরিচালিত হবে ছাত্র সংসদকেন্দ্রীক৷
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, সব সংস্কারের আগে রাজনীতি সংস্কার দরকার ছিল। রাজনৈতিক দলগুলো গণিতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কথা বললেও দলগুলোর অভ্যন্তরণে কতটুকু গণতান্ত্রিক অবস্থা তাও দেখতে হবে। এক্ষেত্রে গণতান্ত্রিকভাবে ছাত্র সংসদগুলো চালু করলে সামনের দিনে জাতীয় রাজনীতিতে তারা ভূমিকা পালন করতে পারবে।
ছাত্রদের রাজনীতিতে আই হেট পলিটিক্স প্রবণতা থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে৷ কেননা রাষ্ট্র আগামীদিনে চালাবে ছাত্ররা।
লেজুরবৃত্তিক রাজনীতি নিয়ে নুর বলেন, ছাত্রশিবির বা বামপন্থি দলগুলোতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিয়ে আঙুল তোলার অপশন কম। যারা ক্ষমতাসীন ছাত্ররাজনীতি বা ক্ষমতার আশেপাশে থেকেছেন তাদের ক্ষেত্রে এ লেজুড়বৃত্তিক প্রবণতা এবং লাঠিয়াল বাহিনি তৈরির প্রবণতা বেশি। তাই ছাত্র সংসদভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি হওয়া উচিত৷ তাই বলতে চাই, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় রাজনীতি নয়।
জাকসুতে সহাবস্থান নিয়ে নুর বলেন, ৮০ এর দশকে ছাত্ররাজনীতির নৈতিক অধঃপতন শুরু হয়৷ ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতায় থাকার জন্য নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্র রাজনীতি বিপথে নিয়েছে। বিগত সরকারের আমলে ছাত্রশিবির, ছাত্রদল অথবা অন্য দলগুলো যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়েছে তাদের সবার একই উদ্দেশ্যে ছিল স্বৈরাচারের পতন। তখন তো বিভেদ ছিলনা। তাহলে এখন কেন এমন হচ্ছে, এটা ভাবতে হবে৷ এই ভুলগুলো নিয়ে আলেচনা হবে। কোনো দল কোনো ভুল করলো তা আলেচনা হতে পারে। এতে করে সকলকে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে জাকসু হবে বলে আশা রাখি।
আলোচনা শেষে বক্তারা প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রশ্নত্তোর পর্বে উপাচার্য পরামর্শ দিয়ে বলেন, ছাত্ররা তাদের নিজস্ব কাউন্সিল করে নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে।
এদিকে আলোচক হিসেবে অংশ নিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান আসলে তিনি আলোচনায় অংশ না নিয়ে চলে যান।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ইকবাল হোসেনের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, জাবিসাসের সাবেক সভাপতি প্লাবন তারিক, ছাত্র অধিকার পরিষদ জাবি শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইয়াহিয়া জিসান প্রমুখ৷
……….
জোবায়ের হোসেন জাকির
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
০৭-০১-২৫