আল শাহারিয়া, জাবিপ্রবি প্রতিনিধি
জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (জাবিপ্রবির) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোশারফ হোসেনের বাসভবন শহরের দেওয়ানপাড়া এলাকায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজে চুরির ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (১১ই অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে বাসার পরিচন্নতাকর্মী কক্ষ পরিষ্কারের উদ্দেশ্যে গেলে এই অবস্থা দেখতে পায় ৷ সরিজমিনে গিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যনুসারে, বারান্দা দিয়ে গ্রিল কেটে বাসায় প্রবেশ করে দুষ্কৃতকারী ভিতরে দিয়ে দরজার ছিটকেনি লাগিয়ে দেয় ৷ বাসা থেকে কোনো মূল্যবান সম্পদ বা অর্থদ্রব্য চুরির আলামত না পেলেও সবকিছু তছনছ অবস্থায় পাওয়া গেছে ৷ লকারের ভিতরে ড্রয়ার ভেঙ্গে ল্যাপটপ বের করে আনলেও সেটা অক্ষতই পাওয়া গেছে৷ ব্রিটকেস ভেঙ্গে ও টেবিলে রাখা নথিপত্র তচনচ অবস্থায় পাওয়া যায় ৷ এতে ধারণা করা হচ্ছে, চুরির উদ্দেশ্য নয়; বরং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র বা সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যেই এ ঘটনার সূত্রপাত হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. মোহাম্মদ সাদীকুর রহমান বলেন, ‘দুপুরে ফোন আসলে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই ৷ দরজার বাহিরে থেকে ছিটকানি লাগানো ছিলো ৷ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে সেটা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করি ৷ চোর বারান্দার গ্রিল কেটে প্রবেশ করে ৷ দামি জিনিসপত্র ও ডিভাইস না নিলেও টেবিল ও ব্রিটকেসে থাকা ডকুমেন্টসগুলে এলেমেলো অবস্থায় দেখতে পাই ৷ আমরা স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশ ও
গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করি ৷ তারা সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছেন এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার সর্বোচ্চ প্রতিশ্রতি দিয়েছেন ৷ কোন নথিপত্র হারিয়ে গেছে কিনা সেটা নিশ্চিত হয়ে আজ প্রতিবেদন জমা দিবো, সে অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নিবে ৷ বাড়ির মালিককে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও নিরাপত্তাকর্মী রাখার জন্য বারংবার বলে ও চিঠি দিয়েও সাড়া পাইনি ৷’
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন জানান, ‘গত ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ছুটিতে ঢাকায় যাই ৷ আজ ১১অক্টোবর বিকেলে আসার কথা তাই দুপুরে পরিচন্নতাকর্মী পরিষ্কারের উদ্যেশে কক্ষে প্রবেশ করতে গেলে এমন অবস্থা দেখতে পায় ৷ এখন পর্যন্ত কোন জিনিসপত্র হারাতে দেখিনি তবে টেবিল ও ব্রিটকেসে থাকা নথিপত্র এলেমেলো অবস্থায় দেখতে পাই ৷ চোরের খারাপ উদ্যেশ্য ছিলো, এমনকি আমার প্রাণনাশের হুমকিও থাকতে পারে৷ আমি নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করছি ৷ এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ শিক্ষকরা এসেছেন ৷ আজ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিবো ৷ কারা কোন উদ্যেশে এসব করছে বুঝতে পারছি না ৷’
এদিকে বাড়ির মালিক শাহীনুর রহমানের বক্তব্য কিছুটা ভিন্ন ৷ সাংবাদিকদের প্রথমে বক্তব্য দিতে তীব্র আপত্তির পর জানান, ‘বাহিরে আমগাছ দিয়ে হয়তো উঠেছে ৷ ছোট জায়গা, ওখানে ৮/১০বছরের বাচ্চা ঢুকতে পারে ক্যাশ টাকা চুরির জন্য ৷ অন্যকেউ না, বাচ্চা বুঝবে কি করে কোথায় কি আছে, ল্যাপটপ সম্পর্কে তার ধারণাই নাই সম্ভবত ৷ কোন নথিপত্র নেয়ার জন্য চোর এসেছে বলে আমার মনে হয় না ৷’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বাড়িতে কোন নিরাপত্তাকর্মী কিংবা কেয়ারটেকার নেই৷’
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান ঘটনাটিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও রহস্যঘন আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘উচ্চপর্যায়ের তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত উদ্দেশ্য ও সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করা জরুরি। রাতেই স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছে ৷’
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুস সাকিব পাবলিকিয়ান টুডেকে বলেন ‘আমরা তাৎক্ষনিক সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি ৷ প্রো-ভিসি স্যারের কি হারানো গিয়েছে সেটা আমাদের ইনফর্ম করবেন, এরপর তদন্ত কার্যক্রম চলবে ৷ এরমধ্যেও আমরা আমাদের মতো করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি ৷