...

তালাবদ্ধ ইতিহাস: রাজশাহী কলেজ জাদুঘরের শতবর্ষের নীরবতা

Rajshahi College প্রকাশ: ২৭ মে, ২০২৫, ২১:৫১

রাজশাহী কলেজ উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও গৌরবময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঊনবিংশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজ কেবল উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেই নয়, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ক্ষেত্রেও সমৃদ্ধ। এই প্রতিষ্ঠানেই এক সময় গড়ে উঠেছিল একটি সংগ্রহশালা বা জাদুঘর—যা সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে। দীর্ঘ শতাব্দী ধরে তালাবদ্ধ এই জাদুঘর আজ অবহেলা, অযত্ন ও অবমূল্যায়নের নির্মম সাক্ষী হয়ে আছে।

জাদুঘরটি অবস্থিত একটি এককক্ষবিশিষ্ট ঘরে, যা অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর কাছেই অজানা। একাধিকবার আবেদন ও দীর্ঘ অপেক্ষার পর সাংবাদিকদের অনুরোধে এক দুপুরে খুলে দেওয়া হয় সেই কক্ষের তালা। মনে হয়, সাংবাদিকদের প্রবেশের পূর্বেই তা কিছুটা পরিষ্কার করা হয়েছিল, তবুও অবহেলার চিহ্ন প্রতিটি কোণে স্পষ্ট।

1000229079

ঘরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে নামহীন, সালবিহীন ধুলোমাখা ছবি; যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে পুরনো নথিপত্র ও বইয়ের স্তূপ। কাঠের আলমারি, ব্রিটিশ আমলের টেবিল ফ্যান, ধূলিমাখা মাইক্রোস্কোপ, প্রাচীন ঘড়ি, রেডিও, আয়না, ঝাড়বাতি এমনকি একটি প্রাচীন প্রিন্টিং মেশিন পর্যন্ত—এমন বহু মূল্যবান বস্তু সেখানে পড়ে আছে যেন উপেক্ষিত কোন স্মৃতি হিসেবে।

জাদুঘরের উল্লেখযোগ্য সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের ৮টি ঘড়ি, ৩টি রেডিও ও আয়না, ২টি পুরস্কারপত্র মেডেল, ৩৪টি কাঠের ওপর ছাপা ঐতিহাসিক ছবি, ২টি মাইক্রোস্কোপ ও ৬টি বিজ্ঞানযন্ত্র, প্রাচীন গ্রন্থ, প্রিন্টিং অলমেট এবং শিক্ষকদের ওনার বোর্ড। এত মূল্যবান ঐতিহ্য থাকলেও, এসবের সুষ্ঠু সংরক্ষণের নেই কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ। এমনকি কলেজের লাইব্রেরিয়ান পর্যন্ত জানতেন না জাদুঘরের অস্তিত্ব সম্পর্কে!

শিক্ষার্থীদের মাঝেও জাদুঘর সম্পর্কে সচেতনতার অভাব লক্ষ্য করা গেছে। শিক্ষার্থী সামিয়া ফেরদৌস বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করেন, “রাজশাহী কলেজে কি জাদুঘর আছে?” তার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, তিনি জাদুঘরের অস্তিত্ব সম্পর্কেও সম্পূর্ণ অনবগত ছিলেন।

আরেক শিক্ষার্থী, আব্দুস সামাদ জানান, “আমাদের কলেজের ইতিহাস-ঐতিহ্য জানার আগ্রহ থাকলেও, তা জানার কোনও সুযোগই আমরা পাইনি।” শিক্ষকদের কথায়ও উঠে এসেছে, শ্রেণিকক্ষে ইতিহাসচর্চা খুব একটা হয় না, যদিও লাইব্রেরিতে রয়েছে সংশ্লিষ্ট বইপত্র।

শিক্ষার্থীরা জোর দাবি জানাচ্ছেন—রাজশাহী কলেজের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে এই জাদুঘরকে সংস্কার করে পুনরায় চালু করা হোক। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে আধুনিক সংরক্ষণ প্রযুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

শিক্ষার্থী বায়জিদ সরকার বলেন, “জাদুঘরটি অবিলম্বে সংস্কার করে সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হোক। অন্যথায়, শতবর্ষ পুরনো এই ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো হারিয়ে যাবে, যা আমাদের সাংস্কৃতিক দেউলিয়ারতারই প্রমাণ হবে।”

এ বিষয়ে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. যুহুর আলি বলেন, “জাদুঘর উন্নয়নে এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি। তবে জাদুঘরের গুরুত্ব যাঁরা উপলব্ধি করছেন, তাঁদের এবং সরকারের সহযোগিতা পেলে উন্নয়ন সম্ভব।”