ছবি সংগৃহীত আকাশে যুদ্ধবিমান উড়লে নিচে থাকা মানুষজন প্রচণ্ড শব্দে চমকে ওঠে—এই শব্দই “সনিক বুম” নামে পরিচিত। এতদিন ধরে দ্রুতগতির সব বিমানই এই ভয়ংকর শব্দ তৈরি করত। কিন্তু এবার নাসা ও লকহিড মার্টিন একসঙ্গে তৈরি করেছে এমন এক সুপারসনিক বিমান, যা শব্দের চেয়ে দ্রুত উড়লেও প্রায় নিঃশব্দ।
এই নতুন বিমানের নাম এক্স-৫৯। সম্প্রতি এটি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার পামডেলে প্রথমবারের মতো সফলভাবে আকাশে উড়েছে। উড্ডয়নের সময় এটি ঘণ্টায় প্রায় ৩৮৬ কিলোমিটার গতিতে ১২ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়েছিল। যদিও এটি তখন সুপারসনিক গতি অর্জন করেনি, লক্ষ্য ছিল এর সব সিস্টেম ও নকশা সঠিকভাবে কাজ করছে কি না, তা পরীক্ষা করা।
লকহিড মার্টিনের তথ্য অনুযায়ী, এক্স-৫৯ সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১,৪৮৯ কিলোমিটার গতিতে উড়তে পারবে—যা যাত্রীবাহী বোয়িং ৭৪৭ বিমানের প্রায় দ্বিগুণ। এটি ৫৫ হাজার ফুট বা ১৬,৭৬৪ মিটার উচ্চতায় উড়তে সক্ষম। বিমানের দৈর্ঘ্য ১০০ ফুট, উচ্চতা ১৪ ফুট এবং ডানার প্রস্থ ৩০ ফুট।
এক্স-৫৯-এর সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হলো এর অস্বাভাবিকভাবে লম্বা ও সরু নাক, যা দেখতে অনেকটা সোর্ডফিশ মাছের মতো। এই নকশার কারণেই বিমানের সামনে জমে থাকা বায়ু চাপ ভেঙে অনেকগুলো ছোট শকওয়েভে ভাগ হয়ে যায়। ফলে শব্দের গতির চেয়ে দ্রুত উড়লেও তৈরি হয় না ভয়ংকর “বুম”—শোনা যায় কেবল হালকা একটি “থাম্প”, যেন কেউ গাড়ির দরজা বন্ধ করেছে।
সনিক বুমের সমস্যাটি নতুন নয়। ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা সিটিতে এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, ঘন ঘন সনিক বুম মানুষকে আতঙ্কিত করে তোলে, জানালা ভেঙে ফেলে, এমনকি ভবনেরও ক্ষতি করতে পারে। এই কারণেই ১৯৭৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সুপারসনিক যাত্রীবিমান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়।
কিন্তু এক্স-৫৯ সেই ইতিহাস বদলে দিতে পারে। বিমানের এমন নিখুঁত নকশা ও প্রযুক্তি একসময় শব্দহীন সুপারসনিক যাত্রীবিমানের যুগ ফিরিয়ে আনতে পারে। আগামী পরীক্ষাগুলোয় এটি সুপারসনিক গতিতে উড়বে এবং মানুষ এই “নিঃশব্দ বুম” কেমনভাবে গ্রহণ করে, তা পর্যবেক্ষণ করবে নাসা।
সবকিছু পরিকল্পনামাফিক এগোলে, আকাশে আবারও দেখা যেতে পারে সুপারসনিক যাত্রীবিমান—তবে এবার কানে তালা লাগানো শব্দ নয়, প্রায় নিঃশব্দ গতির ঝলক নিয়ে।
পাবলিকিয়ান টুডে/ এসএইচ | ফেসবুক