০৮:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পবিপ্রবির নবনিযুক্ত ভিসি অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম: একজন স্বনামধন্য গবেষক ও শিক্ষাবিদ

ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত: ০৫:৩৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / 43

অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম

মোঃ সাইফুল ইসলাম, পবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) এর নবম উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি সায়েন্স অনুষদের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্ববর, ২০২৪) উপসচিব মোসাম্মদ রোখসানা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তার নিয়োগের আদেশ জারি হয়। নতুন ভিসি হিসেবে তার মেয়াদ চার বছরের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। উপাচার্যের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করবেন।

অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলামের শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবনের সূচনা

অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলামের শিক্ষাজীবন শুরু হয় বরিশাল জেলার বাপ্টিস্ট মিশন বয়েজ হাই স্কুল থেকে, যেখানে তিনি ১৯৮৮ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর, তিনি সরকারি বিএম কলেজ থেকে ১৯৯০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। তার উচ্চশিক্ষা শুরু হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি), ময়মনসিংহ, যেখানে তিনি ১৯৯৪ সালে ভেটেরিনারি সায়েন্স অনুষদের অধীনে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) ডিগ্রি অর্জন করেন।

ড. রফিকুল ইসলাম একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগ থেকে ১৯৯৮ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। তার উচ্চতর গবেষণার প্রতি আগ্রহ তাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায় এবং ২০১১ সালে তিনি জাপানের কাগাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার পিএইচডি গবেষণা ছিল ফার্মাকোলজির ওপর, যেখানে তিনি উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেন। শুধু পিএইচডিই নয়, ড. রফিকুল ইসলাম পরবর্তী সময়ে জাপানের একই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইবার পোস্ট-ডক্টরেট সম্পন্ন করেন। প্রথম পোস্ট-ডক সম্পন্ন করেন গ্যাস্ট্রো এন্টারোলজি ও নিউরোলজি বিভাগ থেকে ২০১২ সালে এবং দ্বিতীয় পোস্ট-ডক সম্পন্ন করেন ২০১৪ সালে ফার্মাকোলজি বিভাগ থেকে।

কর্মজীবনের উন্নয়ন ও গবেষণায় অসাধারণ অবদান

ড. কাজী রফিকুল ইসলামের কর্মজীবন শুরু হয় ২০০২ সালে, যখন তিনি বাকৃবির ভেটেরিনারি সায়েন্স অনুষদের ফার্মাকোলজি বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তার পদোন্নতি হয় সহকারী অধ্যাপক হিসেবে, যেখানে তিনি ২০১১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপরে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৬ সালের ৭ জুলাই তিনি অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান এবং এই পদে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।

গবেষণার ক্ষেত্রে ড. রফিকুল ইসলামের অসামান্য অবদান রয়েছে। তার গবেষণাপত্রের সংখ্যা ১০৮টি, যা বৈজ্ঞানিক বিশ্বের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা। তার গবেষণাগুলি বেশিরভাগই ফার্মাকোলজি এবং ভেটেরিনারি সায়েন্সের ওপর ভিত্তি করে। তার গবেষণা কার্যক্রম বৈশ্বিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে এবং তার কাজের জন্য তাকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মাননাও প্রদান করা হয়েছে। তার সাইটেশনের সংখ্যা ২২০২টি, যা তার গবেষণার গুণগত মান ও প্রভাবের সাক্ষ্য বহন করে। তার গবেষণার জন্য রিসার্চগেটে তার র‌্যাংকিং অনুসারে এইচ-ইনডেক্স ২৫ এবং আইটেন-ইনডেক্স ৫৯।

প্রাপ্ত পুরস্কার ও সম্মাননা

ড. কাজী রফিকুল ইসলামের শিক্ষাজীবন এবং গবেষণার ক্ষেত্রে তার কৃতিত্ব বিভিন্ন সম্মাননা ও পুরস্কারের মাধ্যমে স্বীকৃত হয়েছে। তিনি মাস্টার্সে অধ্যয়নরত অবস্থায় অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল লাভ করেন, যা তার শৃঙ্খলাবদ্ধ অধ্যয়ন ও গবেষণার প্রতিফলন।

২০২৩ সালে তিনি “গ্লোবাল রিসার্চ ইম্প্যাক্ট রিকগনিশন অ্যাওয়ার্ড” অর্জন করেন, যা তার গবেষণার বৈশ্বিক প্রভাবের জন্য প্রদান করা হয়। এছাড়াও, গবেষক হিসেবে আইএএফ অ্যাওয়ার্ডে প্রথম পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০১০ সালে ইয়ং ইনভেস্টিগেটর অ্যাওয়ার্ড পান। তার পিএইচডি গবেষণার জন্য কাগাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। তার অসামান্য কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনটি বেস্ট পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড, একটি বেস্ট অ্যাবস্ট্রাক্ট অ্যাওয়ার্ড, এক্সিলেন্ট রিভিউয়ার অ্যাওয়ার্ড এবং প্রেসিডেন্ট স্কাউট অ্যাওয়ার্ডও তার প্রাপ্তির মধ্যে রয়েছে।

উল্লেখ্য, পবিপ্রবির পূর্ববর্তী ভিসি অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত ২২ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক স্থবিরতা তৈরি হয়, যা নবনিযুক্ত ভিসি অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পুনরুদ্ধার হবে বলে আশাবাদী।

শেয়ার করুন

পবিপ্রবির নবনিযুক্ত ভিসি অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম: একজন স্বনামধন্য গবেষক ও শিক্ষাবিদ

প্রকাশিত: ০৫:৩৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মোঃ সাইফুল ইসলাম, পবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) এর নবম উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি সায়েন্স অনুষদের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্ববর, ২০২৪) উপসচিব মোসাম্মদ রোখসানা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তার নিয়োগের আদেশ জারি হয়। নতুন ভিসি হিসেবে তার মেয়াদ চার বছরের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। উপাচার্যের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করবেন।

অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলামের শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবনের সূচনা

অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলামের শিক্ষাজীবন শুরু হয় বরিশাল জেলার বাপ্টিস্ট মিশন বয়েজ হাই স্কুল থেকে, যেখানে তিনি ১৯৮৮ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর, তিনি সরকারি বিএম কলেজ থেকে ১৯৯০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। তার উচ্চশিক্ষা শুরু হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি), ময়মনসিংহ, যেখানে তিনি ১৯৯৪ সালে ভেটেরিনারি সায়েন্স অনুষদের অধীনে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) ডিগ্রি অর্জন করেন।

ড. রফিকুল ইসলাম একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগ থেকে ১৯৯৮ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। তার উচ্চতর গবেষণার প্রতি আগ্রহ তাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায় এবং ২০১১ সালে তিনি জাপানের কাগাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার পিএইচডি গবেষণা ছিল ফার্মাকোলজির ওপর, যেখানে তিনি উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেন। শুধু পিএইচডিই নয়, ড. রফিকুল ইসলাম পরবর্তী সময়ে জাপানের একই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইবার পোস্ট-ডক্টরেট সম্পন্ন করেন। প্রথম পোস্ট-ডক সম্পন্ন করেন গ্যাস্ট্রো এন্টারোলজি ও নিউরোলজি বিভাগ থেকে ২০১২ সালে এবং দ্বিতীয় পোস্ট-ডক সম্পন্ন করেন ২০১৪ সালে ফার্মাকোলজি বিভাগ থেকে।

কর্মজীবনের উন্নয়ন ও গবেষণায় অসাধারণ অবদান

ড. কাজী রফিকুল ইসলামের কর্মজীবন শুরু হয় ২০০২ সালে, যখন তিনি বাকৃবির ভেটেরিনারি সায়েন্স অনুষদের ফার্মাকোলজি বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তার পদোন্নতি হয় সহকারী অধ্যাপক হিসেবে, যেখানে তিনি ২০১১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপরে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৬ সালের ৭ জুলাই তিনি অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান এবং এই পদে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।

গবেষণার ক্ষেত্রে ড. রফিকুল ইসলামের অসামান্য অবদান রয়েছে। তার গবেষণাপত্রের সংখ্যা ১০৮টি, যা বৈজ্ঞানিক বিশ্বের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা। তার গবেষণাগুলি বেশিরভাগই ফার্মাকোলজি এবং ভেটেরিনারি সায়েন্সের ওপর ভিত্তি করে। তার গবেষণা কার্যক্রম বৈশ্বিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে এবং তার কাজের জন্য তাকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মাননাও প্রদান করা হয়েছে। তার সাইটেশনের সংখ্যা ২২০২টি, যা তার গবেষণার গুণগত মান ও প্রভাবের সাক্ষ্য বহন করে। তার গবেষণার জন্য রিসার্চগেটে তার র‌্যাংকিং অনুসারে এইচ-ইনডেক্স ২৫ এবং আইটেন-ইনডেক্স ৫৯।

প্রাপ্ত পুরস্কার ও সম্মাননা

ড. কাজী রফিকুল ইসলামের শিক্ষাজীবন এবং গবেষণার ক্ষেত্রে তার কৃতিত্ব বিভিন্ন সম্মাননা ও পুরস্কারের মাধ্যমে স্বীকৃত হয়েছে। তিনি মাস্টার্সে অধ্যয়নরত অবস্থায় অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল লাভ করেন, যা তার শৃঙ্খলাবদ্ধ অধ্যয়ন ও গবেষণার প্রতিফলন।

২০২৩ সালে তিনি “গ্লোবাল রিসার্চ ইম্প্যাক্ট রিকগনিশন অ্যাওয়ার্ড” অর্জন করেন, যা তার গবেষণার বৈশ্বিক প্রভাবের জন্য প্রদান করা হয়। এছাড়াও, গবেষক হিসেবে আইএএফ অ্যাওয়ার্ডে প্রথম পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০১০ সালে ইয়ং ইনভেস্টিগেটর অ্যাওয়ার্ড পান। তার পিএইচডি গবেষণার জন্য কাগাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। তার অসামান্য কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনটি বেস্ট পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড, একটি বেস্ট অ্যাবস্ট্রাক্ট অ্যাওয়ার্ড, এক্সিলেন্ট রিভিউয়ার অ্যাওয়ার্ড এবং প্রেসিডেন্ট স্কাউট অ্যাওয়ার্ডও তার প্রাপ্তির মধ্যে রয়েছে।

উল্লেখ্য, পবিপ্রবির পূর্ববর্তী ভিসি অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত ২২ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক স্থবিরতা তৈরি হয়, যা নবনিযুক্ত ভিসি অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পুনরুদ্ধার হবে বলে আশাবাদী।