প্রশাসন ও বিভাগের ছত্রছায়ায় পলায়ন ছাত্রলীগ নেতার
- প্রকাশিত: ১২:১০:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
- / 125
জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবিপ্রবি) নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের এক নেতাকে পরীক্ষা থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের একজন মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (৫ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্স ২০২২–২০২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সেবক দাস পরীক্ষায় অংশ নিতে এলে প্রতিবাদ জানায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অভিযোগ রয়েছে, তিনি জুলাই আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়েছিলেন।
জানা যায়, সেবক দাস পরীক্ষা দিতে আসার খবর পেয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভাগের পরীক্ষার হল রুমের সামনে গিয়ে হলরুমের দরজা-জানালা বন্ধ দেখে সন্দেহ করেন। তখন ডিউটিতে থাকা শিক্ষক এবং পতিত স্বৈরাচারী প্রশাসনের প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক ইউসুফ আলীকে বলেন তাকে(সেবক) বের করে দিতে। কিন্তু তিনি অস্বীকৃতি জানিয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান মো. এনামুল হকের সাথে কথা বলতে বলেন। তখন তারা বিভাগের আওয়ামী পন্থি এ চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বললে তিনি বিভিন্ন নিয়ম দেখিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের পরীক্ষা দেওয়ার পক্ষেই কথা বলেন।
পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা আবার পরীক্ষার হলরুমে সামনে যান এবং ছাত্রলীগ নেতাকে বের করে দিতে বলেন। কিছু সময় পর ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাদীকুর রহমান ও ছাত্র কল্যাণ ও পরামর্শ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সহকারী অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম আসেন। এভাবে প্রায় ঘণ্টাখানেক পর শিক্ষার্থীরা তাদের কোন কথা না শুনে তাকে পরীক্ষার হল থাকে বের করে নিয়ে আসতে চাইলে তখন ছাত্র কল্যাণ ও পরামর্শ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও প্রক্টরের সাথে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকে বেরিয়ে আসতে দেয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষকেরা। তখনই ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান দরজায় লাথি মারার অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীদের উসকে দিলে পরীক্ষারত সেবক দাসের বন্ধুরা শিক্ষার্থীদের উপর ক্ষিপ্ত হয়।
আরো পড়ুন : ট্রাম্পের পাঁচ দফা নির্দেশনা সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের কাছে
তারা ছাত্রলীগ নেতাকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে আসলে শিক্ষার্থীরাও তার সাথে চলে আসে। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সমনে এনে আরেক ছাত্রলীগ নেতা হাসিবুল হাসান রনির বাইকে উঠিয়ে দেয়। তখন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী সৈকত ইসলাম পালাতে বাঁধা দেওয়ায় তাকে মারধর করে আরেক ছাত্রলীগ নেতা রুবেল মিয়া ও তাঁর বন্ধু রাহাত গালিব সিক্ত। তখন বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি হলে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা পালিয়ে যান।
পরবর্তী ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সৈকত ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান মো এনামুল হক পালটা মবের অভিযোগ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য ও জাবিপ্রবি শাখার আহ্বায়ক স্বাধীন ও যুগ্ম-আহবায়ক পলাশের হয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করতো। তার বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়া সহ আন্দোলনের বিপক্ষে গিয়ে স্বৈরাচারী সরকার ঠেকাতে নানা কর্মসূচি করেছে।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাদীকুর রহমান বলেন, ‘আমরা খুব দ্রুতই গণশুনানির মাধ্যমে ছাত্রলীগের বিচার করবো। সৈকত যে অভিযোগ করেছে সেটারও প্রমাণ বিশ্লেষণ করে বিচার করা হবে।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সৈকত ইসলাম বলেন, ‘ যখন ক্যাম্পাস শাখা ছাত্রলীগের সেবক দাস কে ক্যাম্পাস থেকে যখন পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছিলেন তখন আমি বাধা দিতে গেলে কতিপয় উগ্র শিক্ষার্থী এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সদস্য রুবেল মিয়া এবং হাসিবুল হাসান রনি এবং রাহাত গালিব সিক্ত, ফয়সাল ইফতি,রাকিব আমাকে মারধর করে এবং আমার উপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে হাসিবুল হাসান রনি। জুলাই আন্দোলনে সম্মুখ সারিতে থেকে আন্দোলন করেছিলাম আর আজকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পুনর্বাসন ঠেকাতে গিয়েছিলাম আর এখন মার খেলাম। যারা যারা ছাত্রলীগের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করেছে তাদেরকে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী রাহাত গালিব সিক্ত বলেন, ‘যখন সৈকত মোটরসাইকেল ঠেকানোর জন্য এগিয়ে যায় তখন মোটরসাইকেলের সাথে সংঘাত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল তাই তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলাম।’
পাবলিকিয়ান টুডে/ এম