ববিতে প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরেও হয়নি ছাত্র সংসদ, দ্রুত রোডম্যাপের দাবি
- প্রকাশিত: ০৭:৩৯:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৫
- / 309
জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জোরদার হয়েছে, কোথাও কোথাও চলছে নির্বাচনী আমেজও। তবে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম বিদ্যাপীঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) পরিস্থিতি ভিন্ন। প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরেও এখানে একবারও ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনেও নেই ছাত্র সংসদ সংক্রান্ত কোনো বিধান।
জানা যায়, নতুন উপাচার্য হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম যোগদানের ১০ দিন পর শিক্ষার্থীরা তার কাছে ৮২ দফা দাবি পেশ করেন। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ৪১টি দাবির অন্যতম ছিল দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন। তবে তিন মাস পেরোলেও আশ্বাসের বাইরে কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
এর আগে গত ২২-২৭ জুলাই বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, ববি শাখা ছাত্র সংসদ ইস্যুতে এক গণভোট আয়োজন করে। সেখানে ৮২.২ শতাংশ শিক্ষার্থী সংসদ চেয়ে ভোট দেন, বিপক্ষে ভোট দেন মাত্র ১১ শতাংশ। এই ফলাফলের প্রেক্ষিতে সংগঠনটি ৩ আগস্ট উপাচার্যের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। তবে তাতেও সাড়া মেলেনি বলে দাবি সংগঠনটির।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ভূমিকা সরকার বলেন, “কিছুদিন আগে করা গণভোটেই ছাত্র সংসদ নিয়ে শিক্ষার্থীদের আকাঙ্খা ফুটে উঠেছে। আমরা প্রশাসনকে লিখিত জানিয়েছি, এখনো আমরা দৃশ্যমান কোনো আলাপ দেখিনি, আমরা আশা করছি শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবিটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গুরুত্বসহ দেখবেন এবং দ্রুত ছাত্র সংসদের রোডম্যাপ দিবেন।”
ববি শাখা ছাত্রদল নেতা মোশাররফ হোসেন বলেন, “ছাত্রদল সবসময় শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে তাদের পাশে আছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের ছাত্র সংসদ প্রয়োজন, তবে আমরা তার আগে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিচার কার্যক্রম নিশ্চিত করতে চাই, ফ্যাসিস্টমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তারপর ছাত্র সংসদেের আয়োজন করতে হবে।”
এ বিষয়ে ববি শাখা শিবিরের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, “ছাত্রসংসদের রোডম্যাপ ঘোষণা না হওয়ার পেছনে প্রশাসনের দুর্বলতা এবং জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। যা দুঃখজনক।”
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ববি শাখার সভাপতি ও রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম বলেন, “ছাত্র সংসদ না থাকায় বর্তমানে শিক্ষার্থীরা সমস্যার সমাধানে অমুক-তমুক ভাইদের নামে স্লোগান তুলতে বাধ্য হচ্ছে। এটি একটি সুন্দর ও সাবলীল ক্যাম্পাস গঠনের অন্তরায়। একক নেতৃত্ব না থাকায় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে উচ্চকণ্ঠে কথা বলার মতো কেউ নেই। তাই শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় ছাত্র সংসদের কোনো বিকল্প নেই। ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও শিক্ষার্থীবান্ধব সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন সময়ের দাবি।”
আইনে ছাত্র সংসদ সংযুক্ত করার উদ্যোগের বিষয় জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মুহসিন উদ্দিন বলেন, “এটি আইনে সংযুক্ত করার কোনো সুযোগ নাই, বিশ্ববিদ্যালয় আইনে এটা থাকবে তাও নাই, থাকতে পারবে না তাও নাই। তবে প্রতিনিধি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট একটি ধারার অধীনে নিয়ে সিন্ডিকেট থেকে একটা নিয়ম করা যেতে পারে। তবে কাজটি সহজ নয়।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম বলেন, “ছাত্র সংসদ নিয়ে আমি খুবই ইতিবাচক। আমি মনে করি, নির্বাচিত বডি আসলে আমার দায়িত্ব অনেক কমে যাবে। তবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখান থেকে নেতৃত্ব তৈরি হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ছাত্র সংসদের কথা উল্লেখ নাই, তাই জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে আমি শুনেছি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আগাচ্ছে। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শেষ হলে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করবো।”
পাবলিকিয়ান টুডে/ এম