এনামুল হোসেন, ববি প্রতিনিধি
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে একই বিভাগের এক নবীন শিক্ষার্থীকে র্যাগিং করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বুধবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে টোল প্লাজা সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রোববার (৩০ নভেম্বর) দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান বরাবর তিনটি পৃথক লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১১তম ব্যাচের আল শাহারিয়ার মোহাম্মদ মুস্তাকিম মজুমদার। অভিযুক্তরা হলেন—নাফিজ ফারদিন আকন্দ স্বপ্নীল, মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন, ইমন মাহমুদ, নেহাল আহমেদ ও মিরাজ; তারা সকলেই ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, “২৬ নভেম্বর রাত আনুমানিক ৮টার দিকে সিনিয়রদের নির্দেশে রুপাতলী হাউজিং মাঠে আমরা ২৮ জন নবীন শিক্ষার্থী উপস্থিত হই। এরপর সিনিয়ররা আমাদের সাড়ে ৯টার বাসে করে টোল প্লাজার কাছাকাছি নেহাল ভাইয়ের বাসায় নিয়ে যায়। বাসায় পৌঁছে আমাদের একটি কক্ষে তুলে গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনসহ সব ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে নেয়া হয়, যাতে আমরা কোনো প্রমাণ রাখতে না পারি।”
তিনি আরও লিখেন, “রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইন্ট্রো দিতে বলা হয়। আমি জানাই যে, রাত ১১টায় আমাদের হলের গেট বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি জানানোয় নেহাল ভাই আমাকে দাঁড় করিয়ে শামীম ভাই ও স্বপ্নীল ভাইয়ের হাতে তুলে দেন র্যাগিংয়ের জন্য। স্বপ্নীল ভাই আমাকে অশালীন ভাষার কবিতা আবৃত্তি করতে বলেন। আমি রাজি না হলে আমাকে ‘মেন্টাল’ বলে অপমান করা হয় এবং আমার বাবা-মাকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। এতে আমার কান্না চলে আসে। তখন শামীম ভাই বলেন, ‘সিম্প্যাথি পাওয়ার জন্য কান্না করছিস, তাই ফ্লোরে বসে ১০ মিনিট কান্না কর।’ পরবর্তীতে আমাকে ও আরও দুই সহপাঠীকে জোর করে ফিজিক্যাল রিলেশনের অভিনয় করতে বলা হয়, যা আমার জন্য ভীষণ অপমানজনক ছিল।”
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, “স্বপ্নীল ভাই আমাকে এক পায়ে দাঁড়াতে বলেন। মিরাজ ভাই ও ইমন ভাই আমাকে একটি ওয়ান-কোয়ার্টার প্যান্ট দিয়ে তা পরে নাচতে বলেন। আমি বাথরুমে যাওয়ার অনুমতি চাইলে একটি বোতল দিয়ে রুমের মধ্যেই প্রস্রাব করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কষ্টে বাথরুমে গেলে দরজা খোলা রাখতে বলা হয়। পরে আমাকে শার্ট-প্যান্ট খুলতে বলা হয় এবং মাস্টারবেশন করতে বলা হয়। শীতের রাতে আমাকে শার্ট খুলতে বাধ্য করা হয়। এরপর স্বপ্নীল ভাই একটি বিস্কুট দিয়ে বলেন ‘কুকুরের মতো চেটে খা’। এতে আমি প্রচণ্ড মানসিক নির্যাতনের শিকার হই।”
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন বলেন, “আমরা জুনিয়রদের নিয়ে পিকনিক করছিলাম। সেখানে একটু রাগারাগি হয়েছে। র্যাগিং করা হয়নি।”
অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। র্যাগিংয়ের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্সে আছি। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পাবলিকিয়ান টুডে/ এসএইচ | ফেসবুক