“বাংলাদেশকে ডিজিটাল রূপান্তরে আইসিটি ক্যাডার: ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এক বিপ্লবী পদক্ষেপ”
- প্রকাশিত: ০১:১৮:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪
- / 48
“আইসিটি ক্যাডার নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী এবং বাংলাদেশকে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও সক্ষম করে তোলার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বর্তমান বিশ্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) কেবলমাত্র উন্নয়নের একটি মাধ্যম নয়, বরং আধুনিক অর্থনীতি, প্রশাসন, এবং সামাজিক কাঠামোর অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। একটি বিশেষ আইসিটি ক্যাডার গঠন করলে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আরও অগ্রসর হতে পারবে এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লব (4IR)-এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।
কেন একটি আইসিটি ক্যাডার অপরিহার্য:
১. ই-গভর্নেন্সের উন্নয়ন: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারি সেবাগুলোকে আরও দ্রুত, স্বচ্ছ এবং জনবান্ধব করা এখন সময়ের দাবি। বর্তমানে সরকারি কার্যক্রমে প্রযুক্তির ভূমিকা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল না থাকার কারণে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একটি আইসিটি ক্যাডার গঠিত হলে প্রশাসনে দক্ষ জনবল নিয়োগ করা সম্ভব হবে, যারা ই-গভর্নেন্সের বিভিন্ন সেবা যেমন ফাইল ব্যবস্থাপনা, কর প্রদান, জমি নিবন্ধন, এবং নাগরিক সেবা ডিজিটাল পদ্ধতিতে দ্রুত ও সহজতর করতে সহায়ক হবে।
২. সাইবার নিরাপত্তা শক্তিশালীকরণ: ডিজিটাল রূপান্তরের সাথে সাথে সাইবার হুমকির মাত্রাও দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে সরকারি ডেটাবেস এবং তথ্যসমূহ সাইবার আক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে। একটি প্রশিক্ষিত আইসিটি ক্যাডার থাকলে, এই ধরনের হুমকি মোকাবিলায় দক্ষ জনবল তৈরি হবে, যারা সাইবার নিরাপত্তার বিভিন্ন দিক দেখভাল করতে সক্ষম হবে। এর ফলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত রক্ষিত থাকবে এবং সাইবার অপরাধের হার কমবে।
৩. ডিজিটাল বিভাজন কমানো: শহর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে প্রযুক্তিগত পার্থক্য বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আইসিটি ক্যাডার চালু করা হলে সরকারি উদ্যোগগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে এবং গ্রামাঞ্চলেও ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। এটি ডিজিটাল বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি দেশের সব অঞ্চলের মানুষের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।
৪. উদ্ভাবন ও গবেষণা প্রসারে সহায়তা: আইসিটি ক্যাডার শুধুমাত্র সরকারি কাজেই নয়, বরং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং গবেষণায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), মেশিন লার্নিং, ব্লকচেইন এবং ডেটা অ্যানালিটিকসের মতো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারকে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করা এবং গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারের বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব হবে।
৫. বেসরকারি খাতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বৃদ্ধি: বেসরকারি প্রযুক্তি খাতের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত করা সম্ভব। একটি আইসিটি ক্যাডার গঠিত হলে, সরকার বেসরকারি খাতের স্টার্টআপ, সফটওয়্যার কোম্পানি এবং আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে কাজ করতে পারবে। এর ফলে সরকারের ডিজিটাল প্রকল্পগুলো দ্রুত এবং সফলভাবে বাস্তবায়ন হবে, যা দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
৬. আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অগ্রগতি: বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন ভারত, সিঙ্গাপুর, এবং দক্ষিণ কোরিয়া প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশকেও এদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে। একটি আইসিটি ক্যাডার দেশের প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে বিশ্বমানের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।” – ইফাত খান,কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং,ডুয়েট,গাজীপুর।