বিসিএসের নতুন নিয়ম নিয়ে যা ভাবছে যবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা
- প্রকাশিত: ০৯:১৯:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪
- / 55
যবিপ্রবি প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় (বিসিএস) একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ তিনবার অংশ নিতে পারবেন, এমন বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা, ২০১৪’ পুনর্গঠন করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এমন প্রেস রিলিজ প্রকাশের পর শুরু হয় সমালোচনা। নানামুখী চিন্তা-ভাবনা আর যুক্তিতর্কে উত্তপ্ত দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। শুধু তাই নয় চায়ের আড্ডা থেকে খেলার মাঠ, সবখানেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু যেন বিসিএস। তবে জানার আছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা কি ভাবছেন! এবিষয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক কথা বলেছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের সাথে। জানার চেষ্টা করেছেন বিসিএস পরীক্ষায় এমন সব নিয়মে তাঁদের মতামত।
ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মোঃমেহেরাব হোসেন বলেন, বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসে চাকরি পাওয়া নিঃসন্দেহে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ লেভেলের চাকরির মধ্যে অন্যতম। এটার জন্য বছরের পর বছর লেগে থাকা, কতশত ত্যাগ, পরিশ্রম একমাত্র যারা এটার মধ্যে দিয়ে যায় তারাই জানে। পূর্বের চাকরি প্রত্যাশিরা চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে সেটা সবাই জানে। সেটারই বাস্তবায়নের ফলস্বরূপ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারী চাকুরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ করার এবং বিসিএসে সর্বোচ্চ ৩ বার পরিক্ষা দেওয়ার যে সীমাবদ্ধতার বেড়াজালে আটকে দেওয়া হয়েছে তা আমার মতো নিন্ম মধ্যবিত্তের পেটে লাথি মারার শামিল। আমার মতো লাখো শিক্ষার্থী আছে যারা নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেই চালায়। তাছাড়া করোনাকালীন যে ধাক্কা সাথে ৩০ বছর পার হওয়া চাকরি প্রার্থীদের বয়সসীমা শিথিল করা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সবমিলিয়ে কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাওয়া সহজ কিছু নয়। তারমধ্যে বিসিএসে ৩ বারের বেশি পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার যে সীমাবদ্ধতা বেঁধে দিলো এটা কোনভাবেই কাম্য নাই। বিসিএস একটা আবেগের নাম এটা নিয়ে আপনারা ছেলেখেলা কইরেন না।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো: আশিকুর রহমান বলেন, আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেশনজট, করোনা মহামারিতে দেড় বছরের বন্ধ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংকটের কারণে একজন শিক্ষার্থীর অনার্স -মাস্টার্স শেষ করতে ২৭/২৮ বছর লেগে যাচ্ছে। এসকল প্রতিবন্ধকতাকে আমলে নিয়ে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করাকে ইতিবাচক মনে করি। আইন প্রণয়নের আগে সংঘটিত কাজ ঐ আইনের আওতামুক্ত থাকে সাধারণত। সেক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৪৬ বিসিএসে অংশগ্রহণ করা অনেকেই বয়স বৃদ্ধির কারণে আবারও বিসিএসে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। অর্থাৎ ইতিমধ্যেই যারা ৪/৫ বার বিসিএসে অংশগ্রহণ করেছে তারা আরো ৩ বারসহ সর্বমোট ৭/৮ বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।অন্যদিকে ৪৭ বিসিএসের ফ্রেশাররা শুধুমাত্র ৩ বার সুযোগ পাচ্ছে। যা সুনিদিষ্টভাবেই বৈষম্য এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোটিভকে বর্জন করে। পরপর তিনবছর এই সমস্যা বিদ্যমান থাকবে যাকে আমরা সিস্টেম লস বলতে পারি। ৯ম ও ১০ম গ্রেডের অনেক পদে নন ক্যাডার থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ৩ বার বিসিএসে অংশগ্রহণের সুযোগের কারণে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ করার উপকার থেকে বঞ্চিত হবে হবে ফ্রেশাররা।পলিসি মেকারদের উচিত এই সিস্টেমে লস কমিয়ে আনার জন্য বিকল্প পদক্ষেপ নেওয়া। যেমন: যারা ইতিমধ্যেই ক্যাডার সার্ভিসসহ অন্যান্য সরকারি চাকরিতে জয়েন করেছেন তাদের বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ সীমিত করা। অন্যদিকে বিসিএস ছাড়া অন্যান্য সরকারি চাকরিতে নন ক্যাডার থেকে নিয়োগ কমানো বা ক্ষেত্রবিশেষে বন্ধ করে আলাদা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জালিস মাহমুদ বলেন, বিসিএস পরীক্ষায় একজন প্রার্থী এখন থেকে সর্বোচ্চ তিনবার অংশ নিতে পারবেন এবং সব ক্যাডারের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ এই সিদ্ধান্তকে পজিটিভলি নিয়েছেন আবার কেউবা এটির সমালোচনা ও বিপরীত মত পোষণ করছেন। আমি এই সিদ্ধান্তকে কয়েকটি কারণে যৌক্তিক বলে মনে করি। কেননা একজন মানুষের জীবনকালের বড় একটি অংশ এভাবে বিসিএসের ঘোরে একই বিষয়ের (সাধারণ জ্ঞান, ইংরেজি-বাংলার কিছু নিয়মকানুন, সাধারণ গণিত ও বিজ্ঞানের কিছু বহুনির্বাচনী প্রশ্ন) চর্বিত চর্বণের মাধ্যমে বছরের পর বছর কাটিয়ে দেয়া আমার কাছে সময় নষ্ট বলে মনে হয়। অথচ এ সময়ে ব্যক্তি চাইলে বিভিন্ন প্রোডাক্টিভ কাজ ও বিভিন্ন দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে নিজেকে দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একজন সফল ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেন। এক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩২ রাখা ও পরীক্ষায় ৩ বারে সীমিত করায় ব্যক্তি তার পড়াশোনায় ঢিলেমী না করে নির্দিষ্ট সময়ে বেশ ভালোভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করে বিসিএসে সাফল্য অর্জনে সক্ষম হবে বলে আমার বিশ্বাস। যদি বিসিএসের সাফল্য তাকে ধরা নাও দেয়, তবু সে তার পরবর্তী ভিন্নমাত্রিক ইনোভেটিভ চিন্তা ও বৈশ্বিক কর্মক্ষেত্রের জন্য একজন দক্ষ ব্যক্তিত্বে পরিণত করতে বেশ ভালো সময় হাতে পাবে। তাছাড়া যখন একজন শিক্ষার্থী তারুণ্য পেরিয়ে মধ্যবয়সে চাকরিতে এসে যুক্ত হয় তখন এই চাকরিজীবিরা দেশকে আর নতুন ইনোভেটিভ ও প্রোডাক্টিভ কিছু দিতে পারেন না। তখন অনেকক্ষেত্রে জীবনের বাকী সময়ে তাদের উদ্দেশ্য হয়ে যায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক ভোগ-বিলাস ও নৈতিক/অনৈতিক যেকোনো পন্থায় নিজের পকেট ভারি করা। জাতির কল্যাণ সাধনের স্পিরিট মাঝবয়সী মানুষের হৃদয়ে ধীরে ধীরে ম্লাণ হয়ে পড়ে। তাই বিসিএস সংক্রান্ত নতুন এ নিয়ম আমার কাছে যৌক্তিক ও সকলের জন্য মঙ্গলজনক বলে মনে হয়।
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো: ইমদাদুল ইসলাম বলেন, বয়সসীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি নিশ্চয়ই ভালো। কিন্তু আপনি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ঠিক করে দিচ্ছেন, আবার কতবার আবেদন করা যাবে; সেটাও ঠিক করে দিচ্ছেন। এখানে তো একটার সঙ্গে আরেকটা নিয়মের স্পষ্ট বিরোধ দেখা যাচ্ছে। যদি আবেদনের সুযোগ সর্বোচ্চ তিনবার দেওয়া হয়, সেখানে তো বয়সসীমার প্রয়োজন নেই। একজন শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করে প্রথম বিসিএসে তড়িঘড়ি যখন অংশ নেন, তখন সেটাতে সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। বাংলাদেশের বাস্তবতায় একাধিকবার বিসিএসে অংশ নিয়েই সফলতার হার বেশি, অনেকে তো শেষ বিসিএসে গিয়ে চাকরি পান। আমাদের ২৪ বছর বয়সে স্নাতক শেষ হয়। প্রথম বিসিএসে অনেক সময় বুঝে উঠা যায় না। লক্ষ্য ঠিক করে আমরা বিসিএস কেন্দ্রিক পড়াশোনা করি তখন সেখানে আমার মেধা, সময় ও অর্থ বিনিয়োগ করে সফল হতেও মরিয়া থাকি। সেখানে সর্বোচ্চ তিনবার অংশগ্রহণের নিয়ম করে দিলে প্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটি যৌক্তিক নয়।