১১:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেরোবির সাবেক উপাচার্যের বছরে আপ্যায়ন ব্যয় সাড়ে ৬লাখ

ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত: ০৪:০৮:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / 33

বেরোবি প্রতিনিধি:

ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর গত ৯ আগস্ট পদত্যাগ করেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ। দায়িত্ব পালনকালে অনিয়ম ও দুর্নীতির বরপুত্র হয়ে ওঠেন সাবেক এই উপাচার্য। যার নানা চিত্র সামনে আসতে শুরু করে তাঁর পদত্যাগের পর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাবেক উপাচার্য ড. মো. হাসিবুর রশীদের আমলে শুধু ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই উপাচার্যের দপ্তর এবং উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী মো. আবুল কালাম আজাদের নামে আপ্যায়ন ব্যয় বাবদ ৬ লাখ ২৮ হাজার ৬২৫ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে উত্তোলন করা হয়। মোট ১৬৫ কর্মদিবসে উক্ত অর্থ উত্তোলন করায় দৈনিক হিসাবে গড়ে টাকা উত্তোলনের হার দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮১০ টাকা।

অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রমতে, উপাচার্য থাকাকালীন অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ বেলা ১২টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত দপ্তরে উপস্থিত থাকতেন। তিনি দপ্তরের বাইরে বাসভবন কিংবা গেস্ট হাউজে দাপ্তরিক কোনো মিটিং করতেন না বলেও জানা যায়। পাশাপাশি সিনেট, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সভাগুলোর আপ্যায়ন ব্যয় পৃথকভাবে উত্তোলন করা হয়েছিল। এরপরও উপাচার্য কীভাবে এত বিপুল অঙ্কের অর্থ আপ্যায়ন ব্যয় বাবদ খরচ করেছেন তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে উঠেছে প্রশ্ন এবং সমালোচনার ঝড়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ও বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের সাবেক ডিন মতিউর রহমান বলেন, “আপ্যায়ন খরচ হিসেবে আমার মনে হয় সাড়ে ছয় লাখ টাকা অনেক বেশি। একজন ভাইস চ্যান্সেলরের আপ্যায়ন ব্যয় এত বেশি হতে পারে না।”

কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াছ প্রামানিক বলেন, “আপ্যায়ন ব্যয়ের এই দুর্নীতি সামনে আসার মাধ্যমে ওনার অপকর্মের একটা দিক কেবল সামনে এসেছে। এ রকম আরও কোটি কোটি টাকার অনিয়মের ডকুমেন্ট ধীরে ধীরে আমরা পাব।”

এ বিষয়ে কথা বলতে মুঠোফোনে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এর আগে চলতি বছরের মে মাসে ইউজিসির ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেট পরীক্ষক দল এক পরিপত্রে হাসিবুর রশীদ প্রশাসনের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১৩টি আর্থিক অনিয়মের কথা উল্লেখ করে ছয়টি খাতে সংস্থাটির ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানায়।

সেখানে বলা হয়, ড. হাসিবুর রশীদ বিধিবহির্ভূতভাবে নবম থেকে ষষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের মোবাইল ভাতা দিয়েছেন। ফলে ১৭ লাখ ৮১ হাজার টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।

এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসাগুলো ছোট হওয়ার অজুহাতে হাসিব প্রশাসন সরকারের নির্ধারিত হারে টাকা না কেটে বর্গফুট হারে টাকা কেটেছে৷ এতে প্রায় পৌনে এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদোন্নতি ও আপগ্রেডেশন কার্যকরের সময় নিয়মের বাইরে গিয়ে ইনক্রিমেন্ট দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।

শিক্ষাসফরে পৃথকভাবে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করা হয় হাসিবুর রশীদের আমলে। অপর দিকে, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক বা একাডেমিক দায়িত্ব পালনের জন্য অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ায় প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয় বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়। ইউজিসির নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজস্ব গেস্ট হাউজ নির্মাণ না করে রংপুর ও ঢাকায় গেস্ট হাউজ ভাড়া করার কারণেও অতিরিক্ত অর্থ নষ্ট হয়। জনবলকাঠামো বাইরের পদগুলোতেও বেআইনিভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এ সময়।

এ ছাড়া, বিধিবহির্ভূতভাবে ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একাধিকবার কাছের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়ার অপচেষ্টা চালানোর অভিযোগও রয়েছে অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদের বিরুদ্ধে।

শেয়ার করুন

বেরোবির সাবেক উপাচার্যের বছরে আপ্যায়ন ব্যয় সাড়ে ৬লাখ

প্রকাশিত: ০৪:০৮:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বেরোবি প্রতিনিধি:

ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর গত ৯ আগস্ট পদত্যাগ করেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ। দায়িত্ব পালনকালে অনিয়ম ও দুর্নীতির বরপুত্র হয়ে ওঠেন সাবেক এই উপাচার্য। যার নানা চিত্র সামনে আসতে শুরু করে তাঁর পদত্যাগের পর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাবেক উপাচার্য ড. মো. হাসিবুর রশীদের আমলে শুধু ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই উপাচার্যের দপ্তর এবং উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী মো. আবুল কালাম আজাদের নামে আপ্যায়ন ব্যয় বাবদ ৬ লাখ ২৮ হাজার ৬২৫ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে উত্তোলন করা হয়। মোট ১৬৫ কর্মদিবসে উক্ত অর্থ উত্তোলন করায় দৈনিক হিসাবে গড়ে টাকা উত্তোলনের হার দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮১০ টাকা।

অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রমতে, উপাচার্য থাকাকালীন অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ বেলা ১২টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত দপ্তরে উপস্থিত থাকতেন। তিনি দপ্তরের বাইরে বাসভবন কিংবা গেস্ট হাউজে দাপ্তরিক কোনো মিটিং করতেন না বলেও জানা যায়। পাশাপাশি সিনেট, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সভাগুলোর আপ্যায়ন ব্যয় পৃথকভাবে উত্তোলন করা হয়েছিল। এরপরও উপাচার্য কীভাবে এত বিপুল অঙ্কের অর্থ আপ্যায়ন ব্যয় বাবদ খরচ করেছেন তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে উঠেছে প্রশ্ন এবং সমালোচনার ঝড়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ও বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের সাবেক ডিন মতিউর রহমান বলেন, “আপ্যায়ন খরচ হিসেবে আমার মনে হয় সাড়ে ছয় লাখ টাকা অনেক বেশি। একজন ভাইস চ্যান্সেলরের আপ্যায়ন ব্যয় এত বেশি হতে পারে না।”

কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াছ প্রামানিক বলেন, “আপ্যায়ন ব্যয়ের এই দুর্নীতি সামনে আসার মাধ্যমে ওনার অপকর্মের একটা দিক কেবল সামনে এসেছে। এ রকম আরও কোটি কোটি টাকার অনিয়মের ডকুমেন্ট ধীরে ধীরে আমরা পাব।”

এ বিষয়ে কথা বলতে মুঠোফোনে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এর আগে চলতি বছরের মে মাসে ইউজিসির ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেট পরীক্ষক দল এক পরিপত্রে হাসিবুর রশীদ প্রশাসনের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১৩টি আর্থিক অনিয়মের কথা উল্লেখ করে ছয়টি খাতে সংস্থাটির ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানায়।

সেখানে বলা হয়, ড. হাসিবুর রশীদ বিধিবহির্ভূতভাবে নবম থেকে ষষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের মোবাইল ভাতা দিয়েছেন। ফলে ১৭ লাখ ৮১ হাজার টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।

এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসাগুলো ছোট হওয়ার অজুহাতে হাসিব প্রশাসন সরকারের নির্ধারিত হারে টাকা না কেটে বর্গফুট হারে টাকা কেটেছে৷ এতে প্রায় পৌনে এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদোন্নতি ও আপগ্রেডেশন কার্যকরের সময় নিয়মের বাইরে গিয়ে ইনক্রিমেন্ট দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।

শিক্ষাসফরে পৃথকভাবে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করা হয় হাসিবুর রশীদের আমলে। অপর দিকে, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক বা একাডেমিক দায়িত্ব পালনের জন্য অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ায় প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয় বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়। ইউজিসির নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজস্ব গেস্ট হাউজ নির্মাণ না করে রংপুর ও ঢাকায় গেস্ট হাউজ ভাড়া করার কারণেও অতিরিক্ত অর্থ নষ্ট হয়। জনবলকাঠামো বাইরের পদগুলোতেও বেআইনিভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এ সময়।

এ ছাড়া, বিধিবহির্ভূতভাবে ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একাধিকবার কাছের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়ার অপচেষ্টা চালানোর অভিযোগও রয়েছে অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদের বিরুদ্ধে।