মাত্র ১৫ মিনিটের অতিরিক্ত ঘুমেই বদলে যেতে পারে কিশোরদের মস্তিষ্ক
- প্রকাশিত: ১২:২৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
- / 743
ভোরে ক্লাস, বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, আর রাতে চোখ জেগে মোবাইল স্ক্রল করা—এই যেন এখনকার কিশোর-তরুণদের সাধারণ দৈনন্দিন রুটিন। এর মধ্যেই কখনো কখনো চোখে পড়ে ক্লান্তির ছায়া, মনেও আসে অস্থিরতা। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, প্রতিদিন যদি মাত্র ১৫ মিনিট বেশি ঘুমানো যায়, তাহলে মস্তিষ্কে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটতে পারে?
সম্প্রতি চীন ও যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক এমনই একটি গবেষণা পরিচালনা করেছেন, যা আমাদের ভাবনার খোরাক জোগায়। তারা ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী মোট ৩,২২২ জন কিশোর-কিশোরীর উপর জরিপ চালান। এই অংশগ্রহণকারীদের ঘুমের পরিমাণ অনুযায়ী তিনটি দলে ভাগ করা হয়:
যারা গড়ে প্রতিদিন ৭ ঘণ্টা ১০ মিনিট ঘুমায়
যারা গড়ে ৭ ঘণ্টা ২১ মিনিট ঘুমায়
এবং যারা গড়ে ৭ ঘণ্টা ২৫ মিনিট ঘুমায়
এই সামান্য পার্থক্য সত্ত্বেও দেখা গেছে, যাদের ঘুমের পরিমাণ বেশি, তাদের মস্তিষ্কের গঠন এবং সংযোগে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
বিশেষ করে, যারা গড়ে ৭ ঘণ্টা ২৫ মিনিট ঘুমায়, তাদের মস্তিষ্কের আকার তুলনামূলকভাবে বড় এবং উন্নত। সেই সঙ্গে তারা বিশ্রামের সময় বেশি স্থির থাকতে পারে এবং হৃদস্পন্দন ছিল অপেক্ষাকৃত কম—যা একটি স্বাস্থ্যকর মানসিক অবস্থার ইঙ্গিত দেয়। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, এই দলটি একাডেমিক কাজে, জটিল সমস্যার সমাধানে এবং মনোযোগ ধরে রাখতে অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষ ছিল।
ঘুম শুধু ক্লান্তি দূর করার জন্য নয়; এটি আমাদের শেখার ক্ষমতা, আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং মানসিক স্থিতি বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। কিন্তু বর্তমান সময়ের ব্যস্ততা ও প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে অনেকেই ঘুমকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ মনে করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের দিনে অন্তত ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা গভীর ও নিরবিচার ঘুমানো উচিত। কারণ এই বয়সেই গঠিত হচ্ছে আমাদের চিন্তা, বুদ্ধিমত্তা, ও ব্যক্তিত্বের ভিত্তি। ঘুম ঠিকভাবে না হলে তা শেখার সক্ষমতা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং দৈনন্দিন পারফরম্যান্সে বড় প্রভাব ফেলে।
সুতরাং, আজ রাত থেকেই চেষ্টা করুন একটু আগে ঘুমাতে যাওয়ার। মোবাইল স্ক্রলিং চলতেই থাকবে, প্রিয় সিরিজগুলোও পরে দেখে নেওয়া যাবে। কিন্তু প্রতিদিন যদি অন্তত ১৫ মিনিট আগে ঘুমাতে যান, তাহলে আগামীকাল আপনি হতে পারেন একটু বেশি সতেজ, মনোযোগী, এবং আত্মবিশ্বাসী।
ঘুম কোনো বিলাসিতা নয়—এটি আমাদের ভেতরে লুকিয়ে থাকা এক সুপার পাওয়ার, যা সময় দিলে আমাদের ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে।