সেমিস্টার ফি কমানো ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন সহ বিভিন্ন দাবিতে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি এবং পরবর্তীতে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে ।
১৫ ডিসেম্বর (রবিবার) সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর মিরপুর-১২ তে অবস্থিত মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির অস্থায়ী ক্যাম্পাসের সামনে এ আন্দোলন শুরু হয়। সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে এ অবস্থান কর্মসূচী পালন করে শিক্ষার্থীরা।এসময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ববর্তী নাম “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি” কে বিলুপ্ত ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে “বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি” লেখা নামফলক টানিয়ে দেয়।

উল্লেখ্য, বিগত সরকারের আমলে ব্যাপক দলীয় করণের ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয় সহ আরও ৯ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণ করা হয়। ৫ই আগস্টের পরবর্তীতে প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম বিশ্বের অন্যান্য মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সাথে মিল রেখে “বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি” হিসেবে নামকরণের দাবি জানান।

এছাড়াও গুগল ম্যাপ ও ইংরেজি উইকিপিডিয়ায় ইংরেজিতে থাকা ‘Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Maritime University, Bangladesh (BSMRMU)’ নামটি পরিবর্তন করে ‘Bangladesh Maritime University’ করেছে শিক্ষার্থীরা।
গত ১৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনার পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়। এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয় মাকসু’র (মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) ফেসবুক পেজে।
বিবৃতিতে জানানো হয়, আগস্ট-পরবর্তী আন্দোলনে সেমিস্টার ফি পরিমার্জন ও অন্য সব দাবি সম্পর্কে ইউনিভার্সিটি প্রশাসন উদাসীনতা প্রদর্শন করে আসছে। বারবার সংস্কার সম্পর্কিত অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলেও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা প্রতীয়মান হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ১৫ ডিসেম্বর থেকে ইউনিভার্সিটির সব একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
উল্লেখ্য, গত ৫ সেপ্টেম্বর সেমিস্টার ফি কমানো, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এরই প্রেক্ষিতে দফায় দফায় বৈঠক ও সিন্ডিকেট মিটিং থেকে আশানুরূপ সিদ্ধান্ত না আসায় এই কর্মসূচির ডাক দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
১৫ ডিসেম্বর (রবিবার) সকাল ৯টা থেকেই পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সাড়ে ৯টার দিকে নাম ফলক পরিবর্তন করার পর অস্থায়ী ক্যাম্পাসের সামনে আন্দোলন ও বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এ সময় তারা প্রয়োজনে রাস্তায় নামবেন এবং আগামী ২০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে দেবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্টারকে শিক্ষার্থীদের সাথে উন্মুক্ত আলোচনায় বসার আহ্বান জানায়।বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচী পালন করেও উপাচার্য কিংবা রেজিস্টারের সাক্ষাত না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনের পল্লবী মেট্রো-স্টেশন সংলগ্ন রাস্তা অবরোধ করে। প্রায় ১ ঘন্টা তারা রাস্তা অবরুদ্ধ করে রাখলে মিরপুর-১০,১১,১২ ও তার আশেপাশের এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। বেলা দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রিয়ার অ্যাডমিরাল আশরাফুল হক চৌধুরী শিক্ষার্থীদের সাথে সাক্ষাত করে তাদের দাবি-দাওয়া শুনেন এবং সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস প্রদান করেন।
পরবর্তীতে উপাচার্য রিয়ার অ্যাডমিরাল আশরাফুল হক চৌধুরী শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া পূরণে তাদেরকে আশ্বস্ত করেন এবং নিয়োগ ও ভর্তি দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্যের আশ্বাসে আজকের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। দ্রুত দাবি বাস্তবায়ন না হলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
সাদিকুর রহমান সাদি