রিকশার পাদানিতে নাফিজের নিথর দেহ, কি ঘটেছিল সেদিন- জানালেন রিকশা চালক
- প্রকাশিত: ০৮:৪৩:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪
- / 85
কোটা সংস্কার আন্দোলনে যে ছবিগুলো দেশ ব্যাপী ভাইরাল হয়েছিলো,তার মধ্যে একটি রিকশার পাদানিতে গুলিবিদ্ধ নাফিজের মরদেহের ছবি। ছবিটিতে দেখা যায় রড ধরে রেখেছিল নাফিজ। তারপর ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে নাফিজ।
সে সময় ঐই রিকশার চালক ছিলেন নূর।
তিনি বলেন-ছেলেটি যেনো না বাঁচে এর জন্য আরও দুইটি গুলি করতে চেয়েছিলো পুলিশ।
নূে বলেন, সেদিন ৪সেপ্টেম্বর আমি ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে সংসদের সামনের দিয়ে ফার্মগেটের দিকে যাচ্ছিলাম। সেই সময় একজন যাত্রী মগবাজার যাবে বলে আমাকে ডাক দেয়। ভাড়া বেশি দেবে বলায় আমিও রাজি হয়ে যাই। পরে আমি ফার্মগেট পুলিশ বক্স পার হবার পর বিজ্ঞান কলেজের সামনে পুলিশ গতিরোধ করে। পরে আমাকে তাদের সঙ্গে যেতে বলে। আমি যখন জিজ্ঞাস করেছি কোথায় যাবো। ওই দিকে গোলাগুলি হচ্ছে ওদিক কোথায় যাবো। তখন পুলিশ সদস্যরা বলেন- তোকে আসতে বলেছি আয়। এই বলে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। তখন আমি দোয়া পড়তে থাকি। আমার কাছে মনে হয়েছিল আজ আমি শেষ। আল্লাহ জানে কপালে কি আছে।
এরপর আমাকে নিয়ে বলে এটা রিকশায় তোল। আমি প্রথমে দেখি কিছু প্লাস্টিক আর টুকরি। পরে তাদের বললাম এই টুকরিগুলো তুলবো। তখনও খেয়াল করিনি পাশেই একটি ছেলে (নাফিজ) পড়ে আছে। পুলিশ আমাকে ধমক দিয়ে বলে- ‘আরে বেটা লাশ ফালাই রাখছি দেখছ না! এই যে, এইডা তোল। ’ এরপর আমাকে গালাগালি শুরু করে
এরপর আমি ওই ছেলের পেছন দিক দিয়ে ধরে উঠানোর চেষ্টা করি আর পুলিশ দুই পা ধরে উঠিয়ে রিকশার পাদানিতে ছুড়ে ফেলে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা একজন আরেকজনকে বলতেছে, আরও দুইটা গুলি কইরা দে। বেঁচে যাতে পারে। পরে আমাকেও পায়ে গুলি করে দেয়ার কথা বলে।
তিনি বলেন, পরে আমি যখন রিকশা চালানো শুরু করি তখন দেখে ছেলেটি পরে যাচ্ছে। তখন পাশের আরেকজন পুলিশ এসে বলে সোয়া তারে। এরপর দেখি ছেলেটার হাত রিকশার চেইনে আটকে যাচ্ছে। তাই হাতটা টেনে রডের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখি। পরে আল রাজি হাসপাতালে নিয়ে যাই। এরপর চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আমাকে বলে ঢাকা মেডিকেল অথবা সোহরাওয়ার্দী নিয়ে যেতে। এরপর একটি অটোচালককে অনুরোধ করে বলি ছেলেটাকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে যদি বেঁচে থাকে তো ভালো আর বেঁচে না থাকলে লাশ হাসপাতালে থাকুক। সরকারি হাসপাতাল, পরে বাবা-মা খুঁজে নিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু ছেলেটার পকেটে খুঁজে কোনো ঠিকানা পাওয়া যায়নি।
রিকশাচালক বলেন, সেদিন যদি ছেলেটিকে কেউ ধরে রাখতো হয়তো আমি দ্রুত চালিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারতাম। তাহলে হয়তো তাকে বাঁচানো যেতো। চারদিক গোলাগুলি হচ্ছে আমি কাকে কি বলো। কেউ তো ধরতেছে না। একজন সাংবাদিক ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছে। তখন পুলিশ তাকে বলে ক্যামেরা সহ তাকেই বলে পুড়িয়ে দেবে।