শিক্ষার্থীদের হাতে ধরা পড়লো বান্দরবান পাসপোর্ট অফিসের দালাল চক্র।
- প্রকাশিত: ০৫:৩৫:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৪
- / 29
এই যেন ঘুষের আর দালাল চক্রে রাজ্য। কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলেও পাসপোর্ট অফিসে এসে বিভিন্ন দালাল চক্রের মাধ্যমে প্রতিটি ধাপে ধাপে গুনতে হবে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। তবেই মিলবে পাসপোর্ট। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর পার করলেও হয়রািনিছাড়া কিছুই মিলবে না এই কার্যালয়ে।
প্রায় দীর্ঘ বছর ধরে দালাল চক্রের সিন্ডিকেট, অফিসের কর্মকর্তা ও আনসার সদস্যদের যোগসাজশে ঘুষের ব্যবসা চলে আসছে বান্দরবান আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে।
এমন অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘুষের টাকা নেওয়ার সময় আনসার সদস্য মো. আনিছুর রহমানকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, বান্দরবান আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস কার্যালয়ে প্রতিদিন শতাধিক মানুষ পাসপোর্ট করতে আসে। প্রতিদিন পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমা পড়ে গড়ে ৭০ থেকে ১০০টি। কিন্তু দালাল চক্রের সিন্ডিকেট ও আনসার সদস্য ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এ পাসপোর্ট অফিসে ঘুষ বাণিজ্য চলে আসছে। জড়িত থাকার মধ্যে অন্যতম পাসপোর্ট অফিসের রেকর্ড কিপার মো. মোশারফ হোসেন এবং সহযোগী আনসার সদস্য আনিছুর রহমান। দূর-দূরান্ত থেকে পাসপোর্ট করতে আসা মানুষদের চিহ্নিত করে পাসপোর্ট অফিসের আনসার সদস্য মো. আনিছুর রহমান। দীর্ঘদিন ধরে পাসপোর্ট কার্যালয়ে অফিস সহকারী মোশারফ হোসেন ও আনসার সদস্য আনিছুর রহমানের মাধ্যমে গড়ে তোলেন অর্থ লেনদেনের এক সিন্ডিকেট। কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলেও তাদের কাছে পাসপোর্ট করতে গুনতে হবে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এছাড়াও সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে বিভিন্ন কথা বলে বিকাশে কিংবা নগদের মাধ্যমে চাওয়া হতো বাড়তি টাকা। সেসব লেনদেন টাকা যেতো পাসপোর্ট অফিসের সহকারী থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, বান্দরবান আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে পাসপোর্ট করতে এসে পড়তে হয় দালালের চক্রে হাতে। দারোয়ান থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে দিতে হবে ঘুষের টাকা। এসব টাকা না দিলে দ্রুত মিলবে না পাসপোর্ট। যার ফলে হয়রারি থেকে বাঁচতে দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্ট সম্পূর্ণ হতে বাড়তি গুনতে হবে কয়েক হাজার টাকা। নয়তো বছরের পর বছর পাসপোর্ট কার্যালয় ঘোরাঘুরি ছাড়া মিলবে না কোন সুরাহা। তাই দুর্নীতি ও ঘুষ মুক্ত পাসপোর্ট অফিস করার দাবি সাধারণ মানুষের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বান্দরবান-বালাঘাটা সড়কের ব্রিগেড এলাকার সামনে আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়। সেখানে প্রতিদিন পাসপোর্ট করতে আসে শতাধিক মানুষ। সবসময় ভবনের ভিতর নীচে কিংবা উপরে ভিড় করতে থাকেন সাধারণ মানুষ। কেউ পাচ্ছেন পাসপোর্ট আবার কেউ দালাল সিন্ডিকেটে চক্রে মাধ্যমে চলছে কথোপকথন। এমন নানা অনিয়ম ও পাসপোর্ট করতে আসা মানুষকে হয়রানিরসহ দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ ছিল বান্দরবানের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকতা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। কিন্তু দুপুরে টাকা নেওয়ার সময় পাসপোর্ট কার্যালয়ে মো. আনিছুর রহমান নামে এক আনসার সদস্যকে হাতেনাতে ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। তল্লাশি চালিয়ে তার কাছ থেকে অর্থ উদ্ধার করে শিক্ষার্থীরা।
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের আনসার সদস্য মো. আনিছুর রহমান বলেন, মোসারফ স্যারের কথায় আমি টাকা নিয়েছি। এছাড়া আমি আর কিছুই জানি না।
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের রেকর্ড কিপার মো. মোসারফ হোসেন দালাল চক্রের অন্যতম সদস্য বলে অভিযোগ পাওয়া রয়েছে। টাকা নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তির কাছ থেকে আনসারের মাধ্যমে টাকা নিয়েছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী খালিদ বলেন, অফিস সহকারী মোসারফের কথায় টাকা নেওয়ার বিষয়টি আনসার সদস্য আনিছুর রহমান স্বীকার করেছে। তাদের এই সিন্ডিকেট একদিনের নয়। দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে আসছিল। তাই প্রতিটি অফিসে ঘুষ ও দুর্নীতিকে মুক্ত করতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা অভিযান পরিচালনা করে আসছে এবং আগামীতেও দুর্নীতিমুক্ত করতে সর্বদা মাঠে থাকবে।
এ বিষয়ে বান্দরবান আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সরকারী পরিচালক আলীম উল্লাহ ভূইয়া বলেন, অভিযোগটির সাথে যারা জড়িত তাদেরকে শনাক্ত করেছি। অফিসের স্টাফ মোশারফের ব্যাপারে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊধ্বর্তন কতৃপক্ষের কাছে জানাবো। আর আনসার সদস্যের প্রত্যাহারের জন্য আনসার বাহিনীর ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা বরাবর সুপারিশ করা হবে।