০৬:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বাধীনতা শুধু স্মরণ করার জন্য নয়, সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা

ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত: ০১:২০:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫
  • / 238

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের পথে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে। তরুণ সমাজের দৃষ্টিতে আগামীর বাংলাদেশ হবে আত্মনির্ভরশীল, প্রযুক্তিগতভাবে অগ্রসর এবং বৈষম্যহীন যেখানে সুশাসন, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের মূলনীতি সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। ২৪-এর গণজাগরণ প্রমাণ করেছে যে পরিবর্তনের মূল শক্তি তরুণরাই। তাদের নেতৃত্বেই গড়ে উঠবে এক নতুন বাংলাদেশ। সমৃদ্ধ, উন্নত ও সুবিচারপূর্ণ, যেখানে প্রতিটি নাগরিক সমান সুযোগ পাবে এবং দেশ গর্বের সঙ্গে বিশ্বমঞ্চে নিজের স্থান করে নেবে। তরুণদের দৃষ্টিতে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপকল্প তুলে ধরেছেন সানজানা শওকত।

বাংলাদেশের কর্মসংস্থান এবং শিক্ষা’
জে. আই. ফাহাদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান পরস্পর সম্পর্কিত হলেও সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি বিষয়। শিক্ষা একটি উন্নত কর্মসংস্থানের পূর্বশর্ত, তবে শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষার ওপর নির্ভর করে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
ডেমোগ্রাফিক ট্রানজিশন মডেল অনুযায়ী, বাংলাদেশ বর্তমানে “ডেভেলপমেন্ট উইন্ডো” পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে কর্মক্ষম নবীন জনসংখ্যার অনুপাত প্রবীণদের তুলনায় বেশি। তবে এই জনশক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো না গেলে তা জাতীয় উন্নয়নের পরিবর্তে বোঝায় পরিণত হতে পারে। এর একটি প্রধান কারণ হলো শিক্ষা সম্পর্কে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা। বর্তমানে দেশে ১৯.২ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে, অথচ অনেকের মধ্যে একটি বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে যে উচ্চশিক্ষা অর্জনকারীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চ উপার্জনক্ষম হয়ে উঠবে এবং উন্নত জীবনযাপন করবে। এই ভুল ধারণার ফলে প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার তৈরি হচ্ছে, যা অর্থনীতির জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ।
জনসম্পদের যথাযথ ব্যবহারের জন্য কারিগরি শিক্ষার প্রসার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তরুণদের শিক্ষার সঙ্গে উপার্জনের সরাসরি সম্পর্কিত ধারণা থেকে বের করে এনে তাদের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানো সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এ লক্ষ্যে কৌশলগত প্রচার, প্রাসঙ্গিক নীতিমালা এবং কার্যকর স্কিম গ্রহণ করা জরুরি, যা তরুণদের উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবক হিসেবে আত্মপ্রকাশে উৎসাহিত করবে।
বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে এই রূপান্তর বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। এ জন্য বৈদেশিক সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারি উদ্যোগে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা গেলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা দেশের জনসম্পদকে জাতীয় উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত করতে পারে।

তরুণদের হাত ধরে স্বনির্ভর ও ন্যায়ভিত্তিক আগামীর বাংলাদেশ”
মোঃ তাওকীর তাজাম্মুল (ইফাজ)
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)

আগামী বাংলাদেশের স্বপ্ন কেবল উন্নত অবকাঠামো বা প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি হবে এমন একটি দেশ যেখানে প্রতিটি মানুষ ন্যায়বিচার পাবে, দারিদ্র্য থাকবে না, দুর্নীতি কমবে এবং বৈষম্য দূর হবে। কৃষি, শিল্প ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে গড়ে উঠবে এক আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ। যেহেতু তরুণদের বিপ্লব, আত্মত্যাগের ফলেই এই দেশ স্বৈরাচার থেকে মুক্ত হয়েছে, যার ফলে সাধারণ জনগণ ফিরে পেয়েছে পূর্বের শাসন ব্যবস্থায় হারানো মত প্রকাশের অধিকার, ভিন্ন মতাদর্শ লালন করার অধিকার এবং দেশ তার প্রতি যেকোনো বিষয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপের সংকীর্ণ বলয় থেকেও মুক্ত হয়েছে; সেহেতু আজকে তরুণদের শুধু নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবলেই চলবে না, বরং সমাজ ও দেশের জন্য দায়িত্ববান হতে হবে। সঠিক ইতিহাস জানা, সত্য ও সাম্যের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করা, এবং অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া জরুরি। প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করে দেশ ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। স্বাধীনতা আমাদের দিয়েছে একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্তা। কিন্তু স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্যায়ন তখনই হবে যখন আমরা দেশকে উন্নত, মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক একটি রাষ্ট্রে পরিণত করবো এবং এই দেশ অপর কোনো দেশ বা রাষ্ট্রের বন্ধু-সুলভ সম্পর্ককে মেনে নিবে কিন্তু তার প্রতি অন্ধ গোলামীর সম্পর্ককে মেনে নিবে না। এ যুগের তরুণ হিসেবে আমাদের নিজেদের স্বনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদেরকেও স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা করতে হবে। তবেই সত্যিকার অর্থে আমরা বৈষম্যহীন আগামীর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতে পারব। ইনশাআল্লাহ তরুণদের উদ্যম, মেধা ও দেশপ্রেমের সমন্বয়ে গড়ে উঠবে আগামীর বাংলাদেশ—একটি সোনার বাংলাদেশ, যেখানে সবার জন্য থাকবে সমান সুযোগ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।

তরুণদের নেতৃত্বে প্রযুক্তিনির্ভর ও স্থিতিশীল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা”
সেঁজুতি ঢালী
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন প্রযুক্তি, সুশাসন এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে দ্রুত এগিয়ে চলছে। আমরা, তরুণরা, এই পরিবর্তনের মূল শক্তি। আমাদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি আত্মনির্ভরশীল এবং অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্র হয়ে উঠবে, যেখানে বৈষম্য ও দুর্নীতি কমে যাবে এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হবে।

বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য আমাদের তরুণদের নেতৃত্বে শক্তিশালী অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলা অপরিহার্য। আমরা জানি, সঠিক নীতি, উদ্ভাবনী চিন্তা, এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস এবং প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি করা সম্ভব। একটি ন্যায়বিচারভিত্তিক, দুর্নীতিমুক্ত এবং উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।

এছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার জন্য আমাদের শিল্প ও কৃষি খাতে আধুনিকায়ন এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, তরুণদের নেতৃত্বে এবং উদ্ভাবনী অর্থনৈতিক মডেলের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার অর্থনীতিকে বৈশ্বিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক ও শক্তিশালী করে তুলতে পারবে।

স্বাধীনতার ৫৪ বছর: আগামীর বাংলাদেশ গঠনে তরুণদের দায়িত্ব”
মো. রাহাদ
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট
আহছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি

২৬শে মার্চ এলেই আমাদের বুক গর্বে ভরে যায়। স্বাধীনতার ইতিহাস, মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ আর জাতীয় সঙ্গীত আমাদের আবেগপ্রবণ করে তোলে। কিন্তু স্বাধীনতা কি কেবল স্মরণ করার জন্য, নাকি সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা?

আজকের তরুণ প্রজন্ম এক স্বাধীন দেশে বেড়ে উঠেছে, কিন্তু সেই স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্যায়ন কোথায়? দুর্নীতি, বেকারত্ব, জলবায়ু পরিবর্তন, শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা—এসব চ্যালেঞ্জ আমাদের ভাবায়। স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ হলো এমন এক দেশ, যেখানে সবাই নিরাপদ থাকবে, চাকরির জন্য হাহাকার থাকবে না, দুর্নীতি ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে উঠবে।

আমরা চাই দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা, যেখানে মুখস্থবিদ্যার পরিবর্তে বাস্তব জ্ঞান থাকবে। বাংলাদেশকে হতে হবে স্টার্টআপ ও উদ্ভাবনের কেন্দ্র, যেখানে তরুণরা চাকরি খোঁজার বদলে উদ্যোক্তা হবে। পরিবেশ রক্ষায় আমাদের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যেতে হবে।

স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর সত্যিকারের মুক্তি তখনই আসবে, যখন দেশ হবে স্বচ্ছ, টেকসই ও আধুনিক। তরুণদের হাতেই আগামীর বাংলাদেশ। আমরা যদি এখন থেকেই উদ্যোগ নিই, তাহলে একদিন গর্ব করে বলতে পারবো, “এই দেশটাকে আমরাই বদলেছি।”

আমার স্বপ্নের বাংলাদেশ: এক উন্নত, সমৃদ্ধ ও ন্যায়ভিত্তিক ভবিষ্যৎ”
সুমাইয়া তাবাসসুম
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (আইইউবি)

আমি ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে একটি উন্নত, দুর্নীতিমুক্ত, শিক্ষিত এবং প্রযুক্তিনির্ভর রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই, যেখানে সবাই সমান সুযোগ পাবে এবং দেশ এগিয়ে যাবে নতুন সম্ভাবনার দিকে। আমার স্বপ্নের বাংলাদেশ হবে এমন একটি দেশ, যেখানে মানুষ কখনো বৈষম্যের শিকার হবে না। ধর্ম বা সামাজিক অবস্থানের কারণে কেউ অবহেলিত হবে না, বরং সবাই সমান সুযোগ পাবে। প্রতিটি নাগরিক স্বাধীনভাবে নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারবে, ভয় বা শঙ্কার কোনো স্থান থাকবে না। মানুষের জীবন হবে নিরাপদ, রাষ্ট্র তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে, আর যারা অপরাধ করবে, তারা কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হবে। আইন সবার জন্য সমানভাবে কার্যকর হবে, যাতে অন্যায় ও দুর্নীতি সমাজ থেকে দূর হয়।

তরুণদের মেধা ও দক্ষতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করা হবে, যাতে তারা দেশেই গর্বের সঙ্গে থাকতে চায়। উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়তা থাকবে, যাতে তারা নতুন নতুন উদ্যোগ নিতে পারে। দেশ হবে পরিচ্ছন্ন, যেখানে পরিবেশ রক্ষা করা হবে এবং নাগরিকরা স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর পরিবেশে বসবাস করতে পারবে। প্রযুক্তি ও উন্নয়নের পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, যাতে আমরা বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের কাতারে স্থান করে নিতে পারি। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে সত্যিকারের স্বাধীনতার সুফল নিশ্চিত করতে হবে।

শেয়ার করুন

স্বাধীনতা শুধু স্মরণ করার জন্য নয়, সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা

প্রকাশিত: ০১:২০:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের পথে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে। তরুণ সমাজের দৃষ্টিতে আগামীর বাংলাদেশ হবে আত্মনির্ভরশীল, প্রযুক্তিগতভাবে অগ্রসর এবং বৈষম্যহীন যেখানে সুশাসন, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের মূলনীতি সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। ২৪-এর গণজাগরণ প্রমাণ করেছে যে পরিবর্তনের মূল শক্তি তরুণরাই। তাদের নেতৃত্বেই গড়ে উঠবে এক নতুন বাংলাদেশ। সমৃদ্ধ, উন্নত ও সুবিচারপূর্ণ, যেখানে প্রতিটি নাগরিক সমান সুযোগ পাবে এবং দেশ গর্বের সঙ্গে বিশ্বমঞ্চে নিজের স্থান করে নেবে। তরুণদের দৃষ্টিতে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপকল্প তুলে ধরেছেন সানজানা শওকত।

বাংলাদেশের কর্মসংস্থান এবং শিক্ষা’
জে. আই. ফাহাদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান পরস্পর সম্পর্কিত হলেও সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি বিষয়। শিক্ষা একটি উন্নত কর্মসংস্থানের পূর্বশর্ত, তবে শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষার ওপর নির্ভর করে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
ডেমোগ্রাফিক ট্রানজিশন মডেল অনুযায়ী, বাংলাদেশ বর্তমানে “ডেভেলপমেন্ট উইন্ডো” পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে কর্মক্ষম নবীন জনসংখ্যার অনুপাত প্রবীণদের তুলনায় বেশি। তবে এই জনশক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো না গেলে তা জাতীয় উন্নয়নের পরিবর্তে বোঝায় পরিণত হতে পারে। এর একটি প্রধান কারণ হলো শিক্ষা সম্পর্কে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা। বর্তমানে দেশে ১৯.২ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে, অথচ অনেকের মধ্যে একটি বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে যে উচ্চশিক্ষা অর্জনকারীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চ উপার্জনক্ষম হয়ে উঠবে এবং উন্নত জীবনযাপন করবে। এই ভুল ধারণার ফলে প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার তৈরি হচ্ছে, যা অর্থনীতির জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ।
জনসম্পদের যথাযথ ব্যবহারের জন্য কারিগরি শিক্ষার প্রসার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তরুণদের শিক্ষার সঙ্গে উপার্জনের সরাসরি সম্পর্কিত ধারণা থেকে বের করে এনে তাদের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানো সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এ লক্ষ্যে কৌশলগত প্রচার, প্রাসঙ্গিক নীতিমালা এবং কার্যকর স্কিম গ্রহণ করা জরুরি, যা তরুণদের উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবক হিসেবে আত্মপ্রকাশে উৎসাহিত করবে।
বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে এই রূপান্তর বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। এ জন্য বৈদেশিক সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারি উদ্যোগে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা গেলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা দেশের জনসম্পদকে জাতীয় উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত করতে পারে।

তরুণদের হাত ধরে স্বনির্ভর ও ন্যায়ভিত্তিক আগামীর বাংলাদেশ”
মোঃ তাওকীর তাজাম্মুল (ইফাজ)
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)

আগামী বাংলাদেশের স্বপ্ন কেবল উন্নত অবকাঠামো বা প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি হবে এমন একটি দেশ যেখানে প্রতিটি মানুষ ন্যায়বিচার পাবে, দারিদ্র্য থাকবে না, দুর্নীতি কমবে এবং বৈষম্য দূর হবে। কৃষি, শিল্প ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে গড়ে উঠবে এক আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ। যেহেতু তরুণদের বিপ্লব, আত্মত্যাগের ফলেই এই দেশ স্বৈরাচার থেকে মুক্ত হয়েছে, যার ফলে সাধারণ জনগণ ফিরে পেয়েছে পূর্বের শাসন ব্যবস্থায় হারানো মত প্রকাশের অধিকার, ভিন্ন মতাদর্শ লালন করার অধিকার এবং দেশ তার প্রতি যেকোনো বিষয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপের সংকীর্ণ বলয় থেকেও মুক্ত হয়েছে; সেহেতু আজকে তরুণদের শুধু নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবলেই চলবে না, বরং সমাজ ও দেশের জন্য দায়িত্ববান হতে হবে। সঠিক ইতিহাস জানা, সত্য ও সাম্যের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করা, এবং অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া জরুরি। প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করে দেশ ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। স্বাধীনতা আমাদের দিয়েছে একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্তা। কিন্তু স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্যায়ন তখনই হবে যখন আমরা দেশকে উন্নত, মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক একটি রাষ্ট্রে পরিণত করবো এবং এই দেশ অপর কোনো দেশ বা রাষ্ট্রের বন্ধু-সুলভ সম্পর্ককে মেনে নিবে কিন্তু তার প্রতি অন্ধ গোলামীর সম্পর্ককে মেনে নিবে না। এ যুগের তরুণ হিসেবে আমাদের নিজেদের স্বনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদেরকেও স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা করতে হবে। তবেই সত্যিকার অর্থে আমরা বৈষম্যহীন আগামীর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতে পারব। ইনশাআল্লাহ তরুণদের উদ্যম, মেধা ও দেশপ্রেমের সমন্বয়ে গড়ে উঠবে আগামীর বাংলাদেশ—একটি সোনার বাংলাদেশ, যেখানে সবার জন্য থাকবে সমান সুযোগ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।

তরুণদের নেতৃত্বে প্রযুক্তিনির্ভর ও স্থিতিশীল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা”
সেঁজুতি ঢালী
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন প্রযুক্তি, সুশাসন এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে দ্রুত এগিয়ে চলছে। আমরা, তরুণরা, এই পরিবর্তনের মূল শক্তি। আমাদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি আত্মনির্ভরশীল এবং অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্র হয়ে উঠবে, যেখানে বৈষম্য ও দুর্নীতি কমে যাবে এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হবে।

বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য আমাদের তরুণদের নেতৃত্বে শক্তিশালী অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলা অপরিহার্য। আমরা জানি, সঠিক নীতি, উদ্ভাবনী চিন্তা, এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস এবং প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি করা সম্ভব। একটি ন্যায়বিচারভিত্তিক, দুর্নীতিমুক্ত এবং উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।

এছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার জন্য আমাদের শিল্প ও কৃষি খাতে আধুনিকায়ন এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, তরুণদের নেতৃত্বে এবং উদ্ভাবনী অর্থনৈতিক মডেলের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার অর্থনীতিকে বৈশ্বিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক ও শক্তিশালী করে তুলতে পারবে।

স্বাধীনতার ৫৪ বছর: আগামীর বাংলাদেশ গঠনে তরুণদের দায়িত্ব”
মো. রাহাদ
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট
আহছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি

২৬শে মার্চ এলেই আমাদের বুক গর্বে ভরে যায়। স্বাধীনতার ইতিহাস, মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ আর জাতীয় সঙ্গীত আমাদের আবেগপ্রবণ করে তোলে। কিন্তু স্বাধীনতা কি কেবল স্মরণ করার জন্য, নাকি সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা?

আজকের তরুণ প্রজন্ম এক স্বাধীন দেশে বেড়ে উঠেছে, কিন্তু সেই স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্যায়ন কোথায়? দুর্নীতি, বেকারত্ব, জলবায়ু পরিবর্তন, শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা—এসব চ্যালেঞ্জ আমাদের ভাবায়। স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ হলো এমন এক দেশ, যেখানে সবাই নিরাপদ থাকবে, চাকরির জন্য হাহাকার থাকবে না, দুর্নীতি ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে উঠবে।

আমরা চাই দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা, যেখানে মুখস্থবিদ্যার পরিবর্তে বাস্তব জ্ঞান থাকবে। বাংলাদেশকে হতে হবে স্টার্টআপ ও উদ্ভাবনের কেন্দ্র, যেখানে তরুণরা চাকরি খোঁজার বদলে উদ্যোক্তা হবে। পরিবেশ রক্ষায় আমাদের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যেতে হবে।

স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর সত্যিকারের মুক্তি তখনই আসবে, যখন দেশ হবে স্বচ্ছ, টেকসই ও আধুনিক। তরুণদের হাতেই আগামীর বাংলাদেশ। আমরা যদি এখন থেকেই উদ্যোগ নিই, তাহলে একদিন গর্ব করে বলতে পারবো, “এই দেশটাকে আমরাই বদলেছি।”

আমার স্বপ্নের বাংলাদেশ: এক উন্নত, সমৃদ্ধ ও ন্যায়ভিত্তিক ভবিষ্যৎ”
সুমাইয়া তাবাসসুম
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (আইইউবি)

আমি ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে একটি উন্নত, দুর্নীতিমুক্ত, শিক্ষিত এবং প্রযুক্তিনির্ভর রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই, যেখানে সবাই সমান সুযোগ পাবে এবং দেশ এগিয়ে যাবে নতুন সম্ভাবনার দিকে। আমার স্বপ্নের বাংলাদেশ হবে এমন একটি দেশ, যেখানে মানুষ কখনো বৈষম্যের শিকার হবে না। ধর্ম বা সামাজিক অবস্থানের কারণে কেউ অবহেলিত হবে না, বরং সবাই সমান সুযোগ পাবে। প্রতিটি নাগরিক স্বাধীনভাবে নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারবে, ভয় বা শঙ্কার কোনো স্থান থাকবে না। মানুষের জীবন হবে নিরাপদ, রাষ্ট্র তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে, আর যারা অপরাধ করবে, তারা কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হবে। আইন সবার জন্য সমানভাবে কার্যকর হবে, যাতে অন্যায় ও দুর্নীতি সমাজ থেকে দূর হয়।

তরুণদের মেধা ও দক্ষতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করা হবে, যাতে তারা দেশেই গর্বের সঙ্গে থাকতে চায়। উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়তা থাকবে, যাতে তারা নতুন নতুন উদ্যোগ নিতে পারে। দেশ হবে পরিচ্ছন্ন, যেখানে পরিবেশ রক্ষা করা হবে এবং নাগরিকরা স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর পরিবেশে বসবাস করতে পারবে। প্রযুক্তি ও উন্নয়নের পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, যাতে আমরা বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের কাতারে স্থান করে নিতে পারি। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে সত্যিকারের স্বাধীনতার সুফল নিশ্চিত করতে হবে।