নাসা হেকাথনে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির টিম উল্কা ’র জয় - পাবলিকিয়ান টুডে | বাংলাদেশ ও বিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ

নাসা হেকাথনে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির টিম উল্কা ’র জয়

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর, ২০২৫, ২০:৫৮

আনোয়ার হোসাইন, এম ইউ প্রতিনিধি

মহাকাশেও ‘গাছম্যান’-এর জয়গান! নাসা স্পেস অ্যাপ চ্যালেঞ্জে চমক সৃষ্টি করলো সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ‘টিম উল্কা’।

নাসা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ—নিশ্চয়ই আধুনিক যুগের অন্যতম চিত্তাকর্ষক, বিজ্ঞানময় ও উদ্ভাবনী প্ল্যাটফর্ম। ২০১২ সাল থেকে শুরু হয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এটি আজ ১৮৫টি দেশের লাখ লাখ তরুণ উদ্ভাবক, নির্মাতা, গবেষক, সফটওয়্যার ডেভেলপার, ডিজাইনার এবং বিজ্ঞানপ্রেমীকে যুক্ত করছে। প্রতি বছর, বিশ্বের ৩৫০টিরও বেশি নগরীতে একসঙ্গে আয়োজিত হয় ‘স্পেস অ্যাপস’—যেখানে প্রতিযোগীরা মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় নাসার ওপেন ডেটা ব্যবহার করে ধরিত্রী ও মহাকাশের জটিল সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজেন। ২০২৫ সালের ‘স্পেস অ্যাপস’–এর প্রতিপাদ্য ছিল “Learn, Launch, Lead”—অর্থাৎ, শেখা, উদ্যোগ গ্রহণ, এবং নেতৃত্ব সৃষ্টি করার চেতনা। এবারের প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ১৮৫টি দেশ থেকে ৯টি শহরের (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, কুমিল্লা, রংপুর, ময়মনসিংহ) তরুণরা অংশ নিয়েছে, সারা বাংলাদেশ থেকে ৫০০-র বেশি প্রকল্প জমা পড়ে এবং প্রায় তিন হাজার প্রতিযোগী যুক্ত হন।

ঘর্ষণের আগুনে উদ্ভাসিত হয়ে ‘উল্কা’ শুধু একটি টিম বা দল নয়—এটি বাংলাদেশের ভিন্নস্বাদের এক তারুণ্য-প্রাণ শক্তি যার শিকড় মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ভেতরে বিস্তৃত। টিমটি গঠিত হয় এক ঝাঁক মেধাবী, উদ্ভাবনী মনোভাবের শিক্ষার্থীদের নিয়ে। তাদের মূল লক্ষ্য শুধু প্রযুক্তিগত সমস্যা সমাধান নয়, বরং প্রযুক্তির মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তন ও বিজ্ঞান শিক্ষাকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন।

গেমটির জন্ম ও মূল ভাবনাঃ

‘সোলারা শাকির’—নামটার মধ্যেই আছে দুর্দমনীয় সাহস, আলোকোজ্জ্বল বিন্দু আর মহাকাশের সঙ্গে বৈশ্বিক দায়িত্ববোধের সংমিশ্রণ। গেমটি বাস্তব জীবনের অনুপ্রেরণা—শাহ সিকান্দার আহমদ শাকির, তথা ‘ট্রি ম্যান অব সিলেট’, যিনি একাই রোপণ করেছেন ৩০-৩৪ হাজারেরও বেশি গাছ—তার জীবন, দর্শন ও কর্মের গল্পে গড়ে উঠেছে। গেমটি ১০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের জন্য নির্মিত, যাতে তারা মহাকাশ বিজ্ঞান, টেকসই উন্নয়ন (Sustainability), ও STEM/STEAM শিক্ষার মেলবন্ধন ঘটানো এক অভাবনীয় অনুভবে অংশ নিতে পারে।

টিম লিডার ও সিস্টেম আর্কিটেক্ট হিসেবে প্রিতম পাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার নেতৃত্বে টিমের প্রত্যেক সদস্য যেন একেকটি গ্রহের মতো আলাদা আলাদা আলো ছড়িয়েছে। রাতুল সাহা রায়—সফটওয়্যার ডেভেলপার, কন্টেন্ট রাইটার ও ভিডিও এডিটর; কৌশিক দাস—প্রোডাক্ট ডিজাইনার ও UI/UX স্পেশালিস্ট; অর্ণব সূত্রধর—থ্রিডি ডেভেলপার, লেভেল ডিজাইনার ও ক্যারেক্টার আর্টিস্ট; এবং প্রমি দেব—গ্রাফিক্স ডিজাইনার, স্ক্রিপ্ট রাইটার ও ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবে সৃজনশীলতায় অবদান রেখেছেন।

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, গুগল এবং মাইক্রোসফট-এর মতো প্রযুক্তি জায়ান্টদের সমর্থনে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় ১৮০টিরও বেশি দেশের উদ্ভাবকরা নাসার ওপেন ডেটা ব্যবহার করে বাস্তব সমস্যার সমাধান নিয়ে আসেন। এমইউ-এর জন্য এটি নতুন নয়—২০১৯ সালের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন, ২০২২ সালের ২য় রানার-আপ এবং ২০২৩ সালের গ্লোবাল ফাইনালিস্ট হিসেবে বিশ্বের সেরা ৪০ দলের মধ্যে স্থান করে নেওয়া এই প্রতিষ্ঠানটির ধারাবাহিক সাফল্যেরই উজ্জ্বলতম প্রতিফলন হলো টিম উল্কার এই অর্জন।

পাবলিকিয়ান টুডে/ এম | ফেসবুক