প্রতীকী ছবি
বৈরিতা শুধু সীমান্তেই নয়—প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, এমনকি আবহাওয়াও এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতার নতুন মঞ্চ হয়ে উঠেছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। এবার সেই প্রতিযোগিতায় পাকিস্তান এগিয়ে গেল এক ধাপ, কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি ঝরিয়ে। বিপরীতে, একই প্রয়াসে দিল্লির আকাশে একফোঁটা জলও নামাতে পারেনি ভারত।
দীর্ঘদিন ধরেই দিল্লির মারাত্মক বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে ‘ক্লাউড সিডিং’ বা কৃত্রিম বৃষ্টির পরিকল্পনা করছিল দিল্লি সরকার। সেই লক্ষ্যে সম্প্রতি বিপুল অর্থ বরাদ্দও দেওয়া হয়। কানপুর আইআইটি-র সঙ্গে ৩.২১ কোটি রুপির চুক্তিতে পাঁচটি পরীক্ষার পরিকল্পনা করা হয়। এর মধ্যে তিনটি পরীক্ষা সম্পন্ন হলেও, একবারও আকাশে মেঘ জমেনি—বৃষ্টি তো দূরের কথা।
ক্লাউড সিডিং নতুন কিছু নয়। অতীতে খরা–পীড়িত অঞ্চলগুলোতে জলসংকট মোকাবিলায় এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু ও কর্ণাটকের মতো রাজ্যে এর সাফল্য দেখা গেছে। এমনকি ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকের সময় চীনা সরকারও এই পদ্ধতিতে বায়ুর মান উন্নত করেছিল।
তবুও দিল্লিতে একই প্রযুক্তি কেন কাজ করল না? বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল সমস্যা দিল্লির আবহাওয়ার মধ্যেই। শীতের সময়ে রাজধানীর বাতাসে আর্দ্রতার ঘাটতি থাকে। ক্লাউড সিডিং সফল করতে হলে মেঘে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ আর্দ্রতা থাকা প্রয়োজন। কিন্তু দীপাবলির পর শীতের সময়—অক্টোবর থেকে জানুয়ারির মধ্যে—দিল্লির আকাশ থাকে শুষ্ক ও মেঘ থাকে পাতলা। ফলে কৃত্রিম বৃষ্টির উপযোগী পরিবেশই তৈরি হয় না।
কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি ঝরানোর এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত বিমান বা ড্রোনের মাধ্যমে মেঘের ওপর ছড়িয়ে দেওয়া হয় সিলভার আয়োডাইড, ড্রাই আইস বা ভোজ্য লবণ। পরে ক্যালশিয়াম ক্লোরাইড ও ক্যালশিয়াম অক্সাইডের মিশ্রণ প্রয়োগে মেঘ ভারী হয়ে ওঠে, এবং পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকলে বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে ঝরে পড়ে। তবে যদি মেঘে আর্দ্রতা না থাকে বা বাতাস খুব শুষ্ক হয়, তাহলে এই রাসায়নিক প্রক্রিয়াও ব্যর্থ হয়।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, “এই বিশেষ ধরনের মেঘ যখন তখন পাওয়া যায় না দিল্লিতে। প্রাক–বর্ষা বা বর্ষা বিদায়ের পর কিছুটা সম্ভাবনা থাকে, তবে সাফল্যের হার বড়জোর ৫০ শতাংশ।”
ফলে পাকিস্তান যেখানে সফলভাবে কৃত্রিম বৃষ্টি ঘটিয়ে দেখিয়েছে, সেখানে দিল্লি এখনো ধোঁয়া ও ধুলার ঘেরাটোপে বন্দি। বিজ্ঞানীরা আশা ছাড়ছেন না, তবে বলছেন—প্রকৃতির নিয়মের বিপরীতে লড়াই করতে হলে প্রযুক্তির পাশাপাশি দরকার অনুকূল সময় ও সঠিক আবহাওয়াও।
পাবলিকিয়ান টুডে/ এসএইচ | ফেসবুক