০৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেরোবিতে তীব্র শ্রেণিকক্ষ সংকট,ভোগান্তিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত: ০৩:৩৬:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪
  • / 15

মোঃ মাহিম মুনতাসির

উত্তরের বাতিঘর খ্যাত রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পরেও শ্রেণীকক্ষের সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। শ্রেণিকক্ষ সংকট থাকায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে একই কক্ষ ভাগাভাগি করে পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষকরা।

কারমাইকেল কলেজের ৭৫ একর জমি নিয়ে ২০০৮ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়, পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর নামে যাত্রা শুরু হয়।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী প্রায় ১০ হাজার এবং শিক্ষক রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রথম ৩ বছরে চারটি একাডেমিক ভবন আর একটি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হলেও পরবর্তী সময়ে নতুন কোনো ভবন হয়নি।
বর্তমানে ৬টি অনুষদের অধীনে ২২টি বিভাগ ও ১টি ইনস্টটিউিট থাকলেও সেই তুলনায় নেই ক্লাসরুম। প্রায় প্রত্যেকটি বিভাগে কমপক্ষে ৫টি করে ব্যাচ রয়েছে এর বিপরীতে ক্লাসরুম রয়েছে কোন বিভাগের একটি, কোন বিভাগের দুইটি করে। ফলে এক ব্যাচের ক্লাস শেষ হতে না হতেই অন্য ব্যাচের এর শিক্ষার্থীরা ঐ ক্লাসরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে। এতে ক্লাস রুমে অবস্থানরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনযোগ যেমন বিঘ্নিত ঘটে তেমনি দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীরাও অস্বস্থি বোধ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীনে ২২টি বিভাগ ও একটি ইনস্টিটিউট রয়েছে। এর মধ্যে চারটি অনুষদের ১৬ বিভাগে শ্রেণিকক্ষ সংকট রয়েছে।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, লোক প্রশাসন বিভাগে শ্রেণিকক্ষ রয়েছে দুটি করে।

অন্যদিকে জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শ্রেণিকক্ষ রয়েছে দুটি এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞানের শ্রেণিকক্ষ রয়েছে তিনটি।

বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের অধীনে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, মার্কেটিং, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ও ফাইনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শ্রেণিকক্ষ রয়েছে তিনটি করে।

কলা অনুষদের অধীনে বাংলা, ইংরেজি এবং ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শ্রেণিকক্ষ রয়েছে তিনটি করে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-৩ এ চারটি ফ্লোরে মোট আটটি বিভাগ রয়েছে। ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ মাত্র একটি শ্রেণীকক্ষ দিয়ে খুড়িয়ে চলছে।

ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী সিফান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের বিভাগ সর্বকনিষ্ঠ। বর্তমানে চারটি ব্যাচ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে কিন্তু আমাদের নিজস্ব একটিমাত্র শ্রেণিকক্ষ আছে এবং মাঝে মাঝে আমরা গণিত বিভাগের শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করি। চারটা ব্যাচর একটি শ্রেণিকক্ষে‌ ক্লাস করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। ক্লাস সিডিউল দেখে শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা থাকলে তারপরে স্যারকে জানিয়ে ক্লাস এর সময় নিতে হয়। এই সংকট সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ ও বাস্তবায়ন চাই।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বেলাল খান বলেন আমাদের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের পাঁচটা ব্যাচের প্রায় ৩৪০ জন শিক্ষার্থী বিপরীতে মাত্র দুইটি শ্রেণিকক্ষে আছে। অনেক সময় দেখা যায় একই সময়েই তিনটা ব্যাচের ক্লাস থাকে তখন দুইটা ব্যাচ ক্লাস করে একটা ব্যাচ অপেক্ষা করে। এই সংকট সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ ও বাস্তবায়ন চাই।

তিনি আরও বলেন, একাডেমিক বিল্ডিং গুলো ছয় তলায় বর্ধিতকরণ করতে হবে তার সাথে নতুন একাডেমিক বিল্ডিং তৈরি করতে পারলে এই সংকট নিরসন করা সম্ভব হবে।

শ্রেণিকক্ষ সংকটের কথা স্বীকার করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ শওকাত আলী বলেন, আমাদের চারটি একাডেমিক বিল্ডিং। এর দুইটি চার তলা করে আছে খুব শীঘ্রই আমরা টেন্ডার এ যাচ্ছি ছয় তলায় বর্ধিত করা হবে।

তিনি আরো বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা শুধু ৭৫ একর, যে জায়গায়টা দিয়ে শুরু করছিল সে জায়গাটুকুই আছে। এই জায়গা কিভাবে বাড়ানো যাই তা প্রকল্প গ্রহণ করছি এ প্রকল্পের মধ্যে দুইটি পার্ট আছে প্রথমটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক দ্বিতীয়টি ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্তৃক এ দুইটা পার্টের পরিকল্পনায় যদি আমরা পঞ্চাশ একর জমি নিতে পারি তাহলে স্থান সংকট দূর হবে। আমরা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাথে ডিল করছি ১০৮০ কোটি টাকার একটা প্রজেক্ট প্রকল্প দিয়েছি এ প্রকল্প যদি আলোর মুখ দেখে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় অবকাঠামো থেকে শুরু করে ডিপার্টমেন্টের সংখ্যা ২২টি থেকে ৪৬ টি করার যে পরিকল্পনা ছিল তা বাস্তবায়ন হবে।

শেয়ার করুন

বেরোবিতে তীব্র শ্রেণিকক্ষ সংকট,ভোগান্তিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ০৩:৩৬:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

মোঃ মাহিম মুনতাসির

উত্তরের বাতিঘর খ্যাত রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পরেও শ্রেণীকক্ষের সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। শ্রেণিকক্ষ সংকট থাকায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে একই কক্ষ ভাগাভাগি করে পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষকরা।

কারমাইকেল কলেজের ৭৫ একর জমি নিয়ে ২০০৮ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়, পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর নামে যাত্রা শুরু হয়।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী প্রায় ১০ হাজার এবং শিক্ষক রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রথম ৩ বছরে চারটি একাডেমিক ভবন আর একটি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হলেও পরবর্তী সময়ে নতুন কোনো ভবন হয়নি।
বর্তমানে ৬টি অনুষদের অধীনে ২২টি বিভাগ ও ১টি ইনস্টটিউিট থাকলেও সেই তুলনায় নেই ক্লাসরুম। প্রায় প্রত্যেকটি বিভাগে কমপক্ষে ৫টি করে ব্যাচ রয়েছে এর বিপরীতে ক্লাসরুম রয়েছে কোন বিভাগের একটি, কোন বিভাগের দুইটি করে। ফলে এক ব্যাচের ক্লাস শেষ হতে না হতেই অন্য ব্যাচের এর শিক্ষার্থীরা ঐ ক্লাসরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে। এতে ক্লাস রুমে অবস্থানরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনযোগ যেমন বিঘ্নিত ঘটে তেমনি দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীরাও অস্বস্থি বোধ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীনে ২২টি বিভাগ ও একটি ইনস্টিটিউট রয়েছে। এর মধ্যে চারটি অনুষদের ১৬ বিভাগে শ্রেণিকক্ষ সংকট রয়েছে।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, লোক প্রশাসন বিভাগে শ্রেণিকক্ষ রয়েছে দুটি করে।

অন্যদিকে জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শ্রেণিকক্ষ রয়েছে দুটি এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞানের শ্রেণিকক্ষ রয়েছে তিনটি।

বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের অধীনে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, মার্কেটিং, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ও ফাইনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শ্রেণিকক্ষ রয়েছে তিনটি করে।

কলা অনুষদের অধীনে বাংলা, ইংরেজি এবং ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শ্রেণিকক্ষ রয়েছে তিনটি করে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-৩ এ চারটি ফ্লোরে মোট আটটি বিভাগ রয়েছে। ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ মাত্র একটি শ্রেণীকক্ষ দিয়ে খুড়িয়ে চলছে।

ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী সিফান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের বিভাগ সর্বকনিষ্ঠ। বর্তমানে চারটি ব্যাচ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে কিন্তু আমাদের নিজস্ব একটিমাত্র শ্রেণিকক্ষ আছে এবং মাঝে মাঝে আমরা গণিত বিভাগের শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করি। চারটা ব্যাচর একটি শ্রেণিকক্ষে‌ ক্লাস করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। ক্লাস সিডিউল দেখে শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা থাকলে তারপরে স্যারকে জানিয়ে ক্লাস এর সময় নিতে হয়। এই সংকট সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ ও বাস্তবায়ন চাই।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বেলাল খান বলেন আমাদের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের পাঁচটা ব্যাচের প্রায় ৩৪০ জন শিক্ষার্থী বিপরীতে মাত্র দুইটি শ্রেণিকক্ষে আছে। অনেক সময় দেখা যায় একই সময়েই তিনটা ব্যাচের ক্লাস থাকে তখন দুইটা ব্যাচ ক্লাস করে একটা ব্যাচ অপেক্ষা করে। এই সংকট সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ ও বাস্তবায়ন চাই।

তিনি আরও বলেন, একাডেমিক বিল্ডিং গুলো ছয় তলায় বর্ধিতকরণ করতে হবে তার সাথে নতুন একাডেমিক বিল্ডিং তৈরি করতে পারলে এই সংকট নিরসন করা সম্ভব হবে।

শ্রেণিকক্ষ সংকটের কথা স্বীকার করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ শওকাত আলী বলেন, আমাদের চারটি একাডেমিক বিল্ডিং। এর দুইটি চার তলা করে আছে খুব শীঘ্রই আমরা টেন্ডার এ যাচ্ছি ছয় তলায় বর্ধিত করা হবে।

তিনি আরো বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা শুধু ৭৫ একর, যে জায়গায়টা দিয়ে শুরু করছিল সে জায়গাটুকুই আছে। এই জায়গা কিভাবে বাড়ানো যাই তা প্রকল্প গ্রহণ করছি এ প্রকল্পের মধ্যে দুইটি পার্ট আছে প্রথমটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক দ্বিতীয়টি ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্তৃক এ দুইটা পার্টের পরিকল্পনায় যদি আমরা পঞ্চাশ একর জমি নিতে পারি তাহলে স্থান সংকট দূর হবে। আমরা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাথে ডিল করছি ১০৮০ কোটি টাকার একটা প্রজেক্ট প্রকল্প দিয়েছি এ প্রকল্প যদি আলোর মুখ দেখে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় অবকাঠামো থেকে শুরু করে ডিপার্টমেন্টের সংখ্যা ২২টি থেকে ৪৬ টি করার যে পরিকল্পনা ছিল তা বাস্তবায়ন হবে।