ফুটবলের ঊন্মাদনায় প্রাণচঞ্চল নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
- প্রকাশিত: ১২:১৩:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 11
অনিরুদ্ধ সাজ্জাদ, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়:
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিনের নীরবতা ভেঙে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে এনেছে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট। জুলাই গণঅভ্যুত্থান, আন্দোলন-সংগ্রাম এবং প্রশাসনিক অচলাবস্থার পর শিক্ষার্থীরা যখন ক্লান্ত ও অবসন্ন, তখন নতুন করে তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে এই ফুটবল উৎসব।
গত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল ঢেউ নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও এসে লাগে। আন্দোলনের জেরে বন্ধ হয়ে যায় ক্লাস-পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরা রাজপথে দিন কাটিয়েছেন, দাবি আদায়ে মিছিল-মিটিংয়ে ব্যস্ত থেকে। সেই সময়ের ঘটনাপ্রবাহে সবার মনে তৈরি হয়েছিল এক ধরনের শূন্যতা। প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড শুরুর পর ক্লাসে ফিরলেও সেই শূন্যতা পূরণ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নতুন নেতৃত্বের অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল এই শূন্যতা ঘোচানো এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাণ ফেরানো। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উদ্যোগ নেয়া হয় জুলাই-আগস্ট শহিদদের স্মরণে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নভেম্বরে টুর্নামেন্ট আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়। জানানো হয়, এবারের টুর্নামেন্টটি হবে আন্দোলনের দিনগুলোতে শহিদ ও অনুপ্রেরণাদায়ক ছাত্রনেতাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে। আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেডারেশন এবং আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে শুরু হয় খেলা। ২৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।
টুর্নামেন্টের ঘোষণার পরপরই ক্যাম্পাসে ফিরে আসে প্রাণচাঞ্চল্য। প্রতিটি বিভাগ নিজেদের দল গঠনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। খেলোয়াড় বাছাই, অনুশীলন, জার্সি তৈরি থেকে শুরু করে মাঠে নামার আগে নিজ নিজ দলকে সেরা হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। সকাল-সন্ধ্যা জুড়ে মাঠে দেখা যায় খেলোয়াড়দের নিবিড় অনুশীলন। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই মাঠে গিয়ে জড়ো হন খেলোয়াড়রা, আবার সন্ধ্যা নামার পরও চলে লড়াইয়ের প্রস্তুতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪টি বিভাগ ৮ টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অংশ নেয় প্রতিযোগিতায়।
প্রতিটি ম্যাচেই ভিড় জমে মাঠের চারপাশে। শিক্ষার্থীরা দলবেঁধে উপভোগ করতে মাঠে আসেন। কোনো কোনো দর্শকের হাতে থাকে স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড। কেউ বাঁশি বাজিয়ে, কেউ হাততালি দিয়ে প্রিয় দলকে উৎসাহিত করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মাঠে উপস্থিত থেকে খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিতে থাকেন। ম্যাচ শেষে বিজয়ী দলের আনন্দ মিছিল ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
ক্যাম্পাসজুড়ে এখন একটাই আলোচনা—ফুটবল। কে জিতল, কে হারল, কোন খেলোয়াড় দুর্দান্ত খেলেছে—এসব নিয়েই মুখরিত থাকে ক্লাসরুম, ক্যাফেটেরিয়া, ছাত্রাবাসের ডাইনিং কিংবা মাঠের চত্বর। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের ক্লান্তি ও অবসাদ যেন মুছে যাচ্ছে এই ফুটবল উন্মাদনায়।
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী প্রান্ত বলেন, ‘খেলা শুরু হওয়ার পর থেকে ক্যাম্পাসে প্রাণ ফিরে এসেছে। যেদিন ম্যাচ থাকে, সেদিন পুরো বিভাগের শিক্ষার্থীরা মাঠে চলে আসেন। সবার মুখে হাসি, স্লোগানে গর্জে ওঠে মাঠ। এটা আমাদের নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।’
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সুমিত বলেন, ‘ক্লাস বন্ধ থাকায় আমরা অনেক দিন বিষণ্ণ সময় কাটিয়েছি। এখন ফুটবলের কারণে আবার আমাদের মধ্যে আনন্দ ফিরেছে। ক্লাসে বসে এখন গল্পের বিষয়ও ফুটবল!’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “একজন ব্যক্তির পরিপূর্ণ ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে যেমনি মানসিক উন্নতি প্রয়োজন তেমনি শারিরীক উন্নতিরও প্রয়োজন আছে। দুটোর সমন্বয় হলে খুব ভালো করে সফলকাম হওয়া যায়। আগামী বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রীড়া ক্যালেন্ডার তৈরির বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও এগিয়ে যাবে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়।”