চবির সহকারী প্রক্টরদের ছাত্রীদের বিরুদ্ধে মব উসকানির অভিযোগ, ভাইরাল স্ক্রিনশট নিয়ে সমালোচনা
- প্রকাশিত: ০৫:৪০:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / 99
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) দুই সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের বহিষ্কারের জন্য প্রশাসনকে চাপ দিতে অনুগত শিক্ষার্থীদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তার মাধ্যমে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে। সম্প্রতি এসব বার্তার চারটি স্ক্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।
স্ক্রিনশট ফাঁস: কী ছিল বার্তায়?
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ভাইরাল হওয়া স্ক্রিনশটগুলোতে দেখা যায়, সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ এক ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির সুপারিশ পাঠিয়ে বলেন, ‘চাপ দাও, দাবি আদায় করো।’ ৬ ফেব্রুয়ারির কথোপকথনে তিনি আরও লেখেন, ‘তোমরা আগামীকাল কঠিন কর্মসূচি দাও। অন্তত যেন প্রাথমিক শাস্তি হিসেবে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়।’
অন্য একটি স্ক্রিনশটে দেখা যায়, সহকারী প্রক্টর এক ছাত্রীর জীবনবৃত্তান্ত পাঠিয়ে বলেন, ‘এদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিতে প্রশাসনকে চাপ দাও, প্রক্টর অফিস ঘেরাও করো।’
অপর সহকারী প্রক্টর কোরবান আলী ১২ ফেব্রুয়ারিতে পাঠানো একটি বার্তায় ছাত্রীদের নাম, ছবি ও শিক্ষাবর্ষ পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সমালোচনার ঝড় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে
স্ক্রিনশট ফাঁস হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এক সাবেক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লেখেন, ‘চবির সহকারী প্রক্টররা ছাত্রদের ফুঁসলিয়ে ছাত্রীদের বিরুদ্ধে মব তৈরির চেষ্টা করেছেন। প্রক্টরিয়াল বডির নাম ‘‘উইচ হান্টিং ইউনিট” দিলেই যথোপযুক্ত হয়।’
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ ও কোরবান আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফও কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
তবে চবি’র সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘এ বিষয়টি আমাদের নজরে আসেনি। তবে নজরে এলে প্রশাসন অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
ঘটনার প্রেক্ষাপট
১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শেখ হাসিনা হলের (বর্তমানে বিজয় ২৪ হল) ১০ ছাত্রীকে বহিষ্কার করে। এর আগে, ৫ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ছাত্রদের একটি দল হলের সামনে স্থাপিত নৌকা আকৃতির বসার স্থান ভাঙার চেষ্টা করলে আবাসিক ছাত্রীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়।
ছাত্রীদের অভিযোগ, মধ্যরাতে একদল শিক্ষার্থী হলে এসে ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। এসব ঘটনায় হলের আবাসিক শিক্ষক ও প্রক্টরিয়াল বডিকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এ কারণেই তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক কোরবান আলীকে শারীরিক লাঞ্ছনা করতে দেখা গেছে এক ছাত্রীকে। এ ছাড়া কয়েকটি ভিডিওতে প্রক্টরিয়াল বডির একাধিক সদস্যকে ছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে দেখা যায়। এর মধ্যে কোরবান আলী ও নুরুল হামিদও ছিলেন।
এমন ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ছাত্রীরা বলছেন, প্রক্টরিয়াল বডি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বদলে উল্টো নির্দিষ্ট কিছু ছাত্রের মাধ্যমে ছাত্রীদের বহিষ্কারের জন্য চাপ প্রয়োগ করিয়েছে।