স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বাংলাদেশের অর্জন কতটুকু?
- প্রকাশিত: ১০:৩৫:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫
- / 80
স্বাধীনতা দিবস বাংলাদেশের ইতিহাসের এক ঐতিহাসিক দিন, যা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে। তবে, এই দিনটির প্রতি তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। বর্তমান প্রজন্ম শুধু স্বাধীনতার গৌরবময় ইতিহাসের সঙ্গে সংযুক্ত নয়, তারা তার দায়িত্বও অনুভব করে এবং দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চায়। তারা মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা, শহীদদের আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের আদর্শকে মনে ধারণ করে, কিন্তু পাশাপাশি সমাজের বৈষম্য, দুর্নীতি ও অবিচারের বিরুদ্ধে সচেতন থেকেও কাজ করতে চায়। তাদের কাছে স্বাধীনতা দিবস শুধুমাত্র অতীতের গৌরব উদযাপন নয়, বরং জাতীয় ঐক্য, সাংস্কৃতিক পরিচয় ও ভবিষ্যতের উন্নয়নের প্রতীক। এই প্রতিবেদনে তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি, বাংলাদেশের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়েছে। তরুণদের চোখে স্বাধীনতা দিবস অতীতের গৌরবের পাশাপাশি, ভবিষ্যতের সোনালী বাংলাদেশের স্বপ্নও মতামত তুলে ধরেছেন -তানজিল কাজী
নতুন প্রজন্মের দৃষ্টিতে স্বাধীনতা দিবস
নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতা দিবসকে গৌরব, অনুপ্রেরণা ও দায়িত্বের মিশ্রণে দেখে। তারা মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা ও শহীদদের আত্মত্যাগ সম্পর্কে সচেতন, যা তাদের মধ্যে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধ জাগায়। তবে তারা স্বাধীনতার প্রকৃত অর্জন ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি রাখে। সামাজিক বৈষম্য, দুর্নীতি ও অবিচার তাদের ভাবায় এবং তারা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। স্বাধীনতা দিবস তাদের কাছে কেবল একটি ঐতিহাসিক দিন নয়, এটি জাতীয় ঐক্য, সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং ভবিষ্যতের উন্নয়নের প্রতীক। তারা কুচকাওয়াজ, দেশাত্মবোধক গান ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অংশগ্রহণ করে দিনটি উদযাপন করে। নতুন প্রজন্ম শিক্ষা, প্রযুক্তি ও সামাজিক দায়বদ্ধতার মাধ্যমে স্বাধীনতার চেতনাকে বাস্তবায়ন করতে চায়। তাদের চোখে স্বাধীনতা দিবস অতীতের গৌরব ও ভবিষ্যতের অঙ্গীকারের প্রতিচ্ছবি।
তাবাসসুম নিশু
শিক্ষার্থী -দর্শন বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থান
১৯৭১ সালে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়, যা নতুন মানচিত্রে বিশ্ব-দরবারে আত্মপ্রকাশ করে। স্বাধীনতার পর থেকেই দেশটি কূটনীতি, অর্থনীতি ও বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।বাংলাদেশ বহুমাত্রিক কূটনৈতিক নীতিতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব থাকলেও তিস্তা চুক্তি ও সীমান্ত নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। চীন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক ও সামরিক অংশীদার, তবে দেশটি ভারত-চীন ভারসাম্য নীতিতে অটল। যুক্তরাষ্ট্র বৃহৎ রপ্তানি বাজার হলেও মানবাধিকার ইস্যুতে মতবিরোধ রয়েছে।অর্থনৈতিক দিক থেকে তৈরি পোশাক, তথ্যপ্রযুক্তি ও কৃষিপণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও রোহিঙ্গা সংকট বড় চ্যালেঞ্জ হলেও, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ৫৪ বছরে দেশটি এখন আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে।
মাহমুদুল আমিন
শিক্ষার্থী-সিএসই ডিপার্টমেন্ট, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ
১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ অর্থনীতি, অবকাঠামো, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, দারিদ্র্যের হার কমেছে, এবং নিজস্ব অর্থায়নে বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের উন্নয়নের প্রতীক। কৃষি, পোশাকশিল্প ও রেমিট্যান্স খাত অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে।তবে বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস, মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং মুদ্রার অবমূল্যায়ন উদ্বেগের বিষয়। আয় বৈষম্য ও দুর্নীতি উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আরও তীব্র হচ্ছে, যা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সুশাসনের অভাব টেকসই উন্নয়নের পথকে কঠিন করে তুলেছে।২০২৫ সালের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জনে টেকসই অর্থনীতি, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। ১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতার জন্য লাখো প্রাণ উৎসর্গ হয়েছিল, সেই স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাই এখন প্রধান লক্ষ্য।
কাজী তাসনিম আহসান প্রভা
শিক্ষার্থী-মার্কেটিং বিভাগ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি
১৯৭১ থেকে ২০২৪: স্বাধীনতার দুই অধ্যায়
১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। গণমাধ্যম তখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম, যেমন বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকা, বিশ্ববাসীর সামনে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা তুলে ধরে।এরপর দীর্ঘ পথচলায় ২০২৪ সালে দেশের জনগণ আরেক দফা স্বাধীনতার স্বাদ পায়, যখন ১৬ বছরের দমন-পীড়নের অবসান ঘটে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরে আসে, গণমাধ্যম ও প্রযুক্তির বিপ্লব তথ্যপ্রবাহকে শক্তিশালী করে তোলে। ফেসবুক, ইউটিউব, অনলাইন সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে তথ্য মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। তবে ভুয়া সংবাদের চ্যালেঞ্জও এসেছে, যা সচেতনভাবে মোকাবিলা করতে হবে।বাংলাদেশের গণমাধ্যম আজ আগের চেয়ে শক্তিশালী, গণতন্ত্রের প্রতীক হয়ে নতুন যুগের পথে এগিয়ে চলেছে।
শাকিল আদনান
শিক্ষার্থী- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি