পবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ঈদ ভাবনা
- প্রকাশিত: ০১:০৪:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল ২০২৫
- / 18
ঈদুল ফিতর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসবগুলোর মধ্যে একটি। এক মাসব্যাপী রোজা রাখার পর ঈদের দিন আমাদের জীবনে নতুন করে আনন্দ, খুশি ও প্রশান্তি বয়ে আনে। পবিত্র মাহে রমজান আমাদের শেখায় কিভাবে আমাদের আত্মসংযম বজায় রাখতে হয়, কিভাবে আমাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এই সময়ে আমরা যে শিক্ষা লাভ করি, তা কেবল ঈদের দিনে সীমাবদ্ধ না রেখে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও সেই শিক্ষার প্রতিফলন করা উচিত।
ঈদ এমন একটি দিন, যা আমাদের মধ্যে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও সহযোগিতার বন্ধন আরও দৃঢ় করে। তবে, ঈদের প্রকৃত শিক্ষা শুধু আনন্দে মেতে ওঠা বা নতুন জামা-কাপড় পরিধান করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। এটি আমাদের মধ্যে হিংসা ও বিদ্বেষ পরিহার করার, একে অপরকে ভালোবাসা ও সহানুভূতি দেখানোর শিক্ষা হতে পারে।
রমজান যেমন আমাদের ধনী-গরীবের ব্যবধানকে ঘুচিয়ে দেয়, তেমনি ঈদের মাধ্যমে আমাদের মনে এক ধরনের সমতা ও মানবিকতার অনুভূতি জাগ্রত হয়। ঈদের দিন অভাবী, মেহনতি মানুষের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করার মাধ্যমে আমরা ঈদের প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে পারি।
ঈদ হোক শুধু আনন্দের নয়, বরং ভালোবাসা, দয়ার ও শান্তির প্রতীক।
মোঃ সাজ্জাদ ইয়াসির
ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
ঈদ হোক মিলনমেলা, ঈদ হোক আনন্দ
ছাত্রজীবনে স্কুল-কলেজে থাকাকালীন ঈদগুলোর চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠার পরের ঈদগুলো যেন একটু ভিন্ন রকমের হয় । কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই একজন শিক্ষার্থীকে বছরের বেশিরভাগ সময়ই পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের থেকে দূরে অবস্থান করতে হয়।
শিক্ষার্থীদের জন্য ঈদ মানে শুধু উৎসব নয়, বরং দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফেরার এক অন্যরকম উচ্ছ্বাস। বাড়ি ফেরার যে তীব্র ইচ্ছা সারাবছর মনে পুষে রাখে, তা সত্যি হওয়ার সুযোগ পায়। ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, পরীক্ষা, প্রেজেন্টেশনের চাপ থেকে মুক্তি মেলে কয়েক দিনের জন্য।
ঈদের মাধ্যমে এক ধরনের বিশ্রাম বা মুক্তি অনুভব করতে চায়। হলের একঘেয়ে খাবার ছেড়ে শিক্ষার্থীরা মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ পায়। এসব কিছুকে পিছনে ফেলে মায়ের ভালোবাসা, বাবার স্নেহ থেকে দূরে থাকা প্রত্যেক সন্তানের মনে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক।
মোঃ ছফিউল্লাহ্,
এএনএসভিএম অনুষদ, পবিপ্রবি।
উৎসবের আনন্দে মানবতা ও ভ্রাতৃত্বের মিলন
ঈদুল ফিতর মুসলিমদের জন্য এক মহা আনন্দের দিন, যা আসে এক মাস সংযম সাধনার পর। রমজানের সিয়াম সাধনা মানুষকে আত্মসংযম, ধৈর্য ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়।
ঈদের দিন সকালেই নতুন পোশাক পরে নামাজ আদায় করা হয়, এরপর শুরু হয় শুভেচ্ছা বিনিময় ও আনন্দ উদযাপন। ধনী-গরিব সবাই একসঙ্গে ঈদের খুশিতে মেতে ওঠে। এদিন দান-সদকা ও জাকাতের মাধ্যমে দরিদ্রদের মুখেও হাসি ফোটানো হয়। মিষ্টিমুখ, পারিবারিক মিলনমেলা ও আনন্দ ভ্রমণের মধ্য দিয়ে ঈদের উৎসব সম্পন্ন হয়।
প্রকৃতপক্ষে, ঈদুল ফিতর কেবল আনন্দের উৎসবই নয়, বরং এটি পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও মানবতার শিক্ষা দেয়।
মো:মোফাসেরুল হক তন্ময়,
ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, পবিপ্রবি।
আত্মশুদ্ধির ঈদুল ফিতর
ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য এক আনন্দঘন উৎসব, যা এক মাসের সংযম ও আত্মশুদ্ধির পর উদযাপিত হয়। রমজান মাসজুড়ে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মসংযম, ধৈর্য ও আত্মশুদ্ধির শিক্ষা গ্রহণের পর ঈদ আসে এক পরিশুদ্ধ আত্মার প্রতীক হিসেবে।
ঈদুল ফিতর কেবল আনন্দের উৎসব নয়; এটি আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ ও সহমর্মিতার বার্তা বহন করে। এক মাস ধরে রোজা রাখার মাধ্যমে আত্মনিয়ন্ত্রণ, ইবাদত-বন্দেগি ও নৈতিক উন্নতির যে চর্চা করা হয়, ঈদ তারই পরিপূর্ণ প্রকাশ। ঈদের প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে যখন ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই এক কাতারে শামিল হয়ে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রকাশ করে।
এই দিনে জাকাতুল ফিতর আদায় করা হয়, যা সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের মধ্যে সাম্যের বার্তা ছড়িয়ে দেয়। ঈদের নামাজ, কোলাকুলি, মিষ্টিমুখ করা ও একে অপরের খোঁজ-খবর নেওয়ার মাধ্যমে ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধন আরও দৃঢ় হয়।
অতএব, ঈদুল ফিতর শুধু উৎসব নয়, বরং আত্মশুদ্ধি ও মানবতার জয়গান, যেখানে ব্যক্তি ও সমাজের কল্যাণের প্রতিফলন ঘটে।
ফারহান সাদিক
এএনএসভিএম অনুষদ, পবিপ্রবি।