০৮:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫, ১১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগ নেতার

হত্যাকাণ্ড এক বছরেও তদন্তে অগ্রগতি নেই, নিরাপত্তাহীনতায় পুরো পরিবার পলাতক

অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত: ০৩:০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫
  • / 46

২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক সহিংসতায় ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার একটি প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ পরিবারের ওপর ঘটে ভয়াবহ হামলা, গুম এবং হত্যার ঘটনা। নিখোঁজের এক বছর পর পরিবারের প্রধান সদস্যের মরদেহ উদ্ধার হলেও তদন্তে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। নিরাপত্তাহীনতার কারণে পরিবারের সব সদস্য এখন আত্মগোপনে রয়েছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. মুজিবুর রহমান (৪৭) ছিলেন ভালুকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং এক সময়ের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাতে অজ্ঞাত পরিচয়ের সশস্ত্র হামলাকারীরা তাদের ভালুকা পৌর এলাকার বাড়িতে গুলি চালিয়ে ও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তাণ্ডব চালায়। পরে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হলে সেটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়।

ঘটনার কয়েকদিন পর রাতের আঁধারে মোটরসাইকেলে আসা মুখোশধারীরা মুজিবুর রহমানকে তুলে নিয়ে যায় বলে স্বজনরা অভিযোগ করেন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

নিখোঁজের প্রায় ১০ মাস পর, ২০২৫ সালের ১৫ জুন দুপুরে ভালুকার মল্লিকবাড়ি গ্রামের একটি নির্জন খালের পাড়ে স্থানীয় কৃষকরা দুর্গন্ধ পেয়ে মরদেহের সন্ধান পান। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মরদেহের হাত-পা বাঁধা ছিল এবং শরীরে স্পষ্ট নির্যাতনের চিহ্ন ছিল।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করলেও ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের ব্যবস্থা করে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, এবং তদন্তে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি।

ঘটনার পর নিহতের পরিবারের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্বজনদের দাবি, এসব মামলা মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। স্থানীয় সূত্রগুলোর মতে, পরিবারের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক পরিচয় ও সক্রিয়তাই এই হয়রানির মূল কারণ।

ভয়ভীতি, নিরাপত্তাহীনতা এবং হয়রানির আশঙ্কায় পরিবারের সব সদস্য আত্মগোপনে রয়েছেন। তারা নিজ এলাকায় বা আগের বাসস্থানে ফিরতে পারছেন না। এতে তাদের জীবনযাপন, আয়-রোজগার, শিক্ষা ও চিকিৎসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার ফোরামের মতে, এই পরিবার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার। ন্যায়বিচারের জন্য অবিলম্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পদত্যাগ ও দেশত্যাগ করার পর ময়মনসিংহের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাট প্রভাব পড়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলসহ শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে রয়েছেন। স্থানীয় সূত্র বলছে, এমপিসহ জেলায় প্রায় সব শীর্ষ নেতার বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

শেয়ার করুন

ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগ নেতার

হত্যাকাণ্ড এক বছরেও তদন্তে অগ্রগতি নেই, নিরাপত্তাহীনতায় পুরো পরিবার পলাতক

প্রকাশিত: ০৩:০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক সহিংসতায় ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার একটি প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ পরিবারের ওপর ঘটে ভয়াবহ হামলা, গুম এবং হত্যার ঘটনা। নিখোঁজের এক বছর পর পরিবারের প্রধান সদস্যের মরদেহ উদ্ধার হলেও তদন্তে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। নিরাপত্তাহীনতার কারণে পরিবারের সব সদস্য এখন আত্মগোপনে রয়েছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. মুজিবুর রহমান (৪৭) ছিলেন ভালুকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং এক সময়ের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাতে অজ্ঞাত পরিচয়ের সশস্ত্র হামলাকারীরা তাদের ভালুকা পৌর এলাকার বাড়িতে গুলি চালিয়ে ও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তাণ্ডব চালায়। পরে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হলে সেটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়।

ঘটনার কয়েকদিন পর রাতের আঁধারে মোটরসাইকেলে আসা মুখোশধারীরা মুজিবুর রহমানকে তুলে নিয়ে যায় বলে স্বজনরা অভিযোগ করেন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

নিখোঁজের প্রায় ১০ মাস পর, ২০২৫ সালের ১৫ জুন দুপুরে ভালুকার মল্লিকবাড়ি গ্রামের একটি নির্জন খালের পাড়ে স্থানীয় কৃষকরা দুর্গন্ধ পেয়ে মরদেহের সন্ধান পান। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মরদেহের হাত-পা বাঁধা ছিল এবং শরীরে স্পষ্ট নির্যাতনের চিহ্ন ছিল।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করলেও ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের ব্যবস্থা করে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, এবং তদন্তে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি।

ঘটনার পর নিহতের পরিবারের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্বজনদের দাবি, এসব মামলা মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। স্থানীয় সূত্রগুলোর মতে, পরিবারের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক পরিচয় ও সক্রিয়তাই এই হয়রানির মূল কারণ।

ভয়ভীতি, নিরাপত্তাহীনতা এবং হয়রানির আশঙ্কায় পরিবারের সব সদস্য আত্মগোপনে রয়েছেন। তারা নিজ এলাকায় বা আগের বাসস্থানে ফিরতে পারছেন না। এতে তাদের জীবনযাপন, আয়-রোজগার, শিক্ষা ও চিকিৎসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার ফোরামের মতে, এই পরিবার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার। ন্যায়বিচারের জন্য অবিলম্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পদত্যাগ ও দেশত্যাগ করার পর ময়মনসিংহের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাট প্রভাব পড়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলসহ শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে রয়েছেন। স্থানীয় সূত্র বলছে, এমপিসহ জেলায় প্রায় সব শীর্ষ নেতার বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।