ছবি সংগৃহীত
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে চারটি বিষয়ে এক প্রশ্নে হবে গণভোট—গঠন করা হবে ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ; ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে—এ গণভোটে নির্ধারিত হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সংসদ কাঠামো ও সংবিধান সংস্কারের দিকনির্দেশনা। বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতির উদ্দেশে ভাষণে এ ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি জানান, জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ অনুমোদিত হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে। এই সনদের আলোকে গণভোটের দিন নাগরিকরা চারটি বিষয়ে এক প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে মতামত জানাবেন।
গণভোট ও নির্বাচন একসঙ্গে
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সব বিষয় বিবেচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি—আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।
তাঁর ভাষায়, এতে সংস্কারের গতি ব্যাহত হবে না; বরং নির্বাচন আরও উৎসবমুখর ও ব্যয়-সাশ্রয়ী হবে।
চার বিষয়ে এক প্রশ্নে গণভোট
ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস গণভোটের প্রস্তাবিত প্রশ্নও পড়ে শোনান। এর মূল বিষয়গুলো হলো—
উচ্চকক্ষের কাঠামো ও ভূমিকা
প্রধান উপদেষ্টা জানান, গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে ‘হ্যাঁ’ পাওয়া গেলে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। এই পরিষদ ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করবে। এরপর নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে, যার মেয়াদ থাকবে নিম্নকক্ষের সমান সময় পর্যন্ত।
সংস্কার ও বিচার অগ্রগতি
ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই তিনটি দায়িত্বে কাজ করছে—হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণতান্ত্রিক সংস্কার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রস্তুতি।
তিনি জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার এগিয়ে চলছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় শিগগির ঘোষিত হবে। একই সঙ্গে গুম-সংক্রান্ত অপরাধের বিচারও প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে।
সংস্কার বিষয়ে তিনি বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা, দুর্নীতি দমন, প্রশাসনের ডিজিটালাইজেশনসহ নানা ক্ষেত্রের সংস্কার ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
ঐকমত্য কমিশনের সাফল্য
রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের প্রস্তাব প্রণয়নে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত নয় মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় সংবিধান সংস্কারের ৩০টি প্রস্তাবে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক অর্জন।
অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও লালদিয়া প্রকল্প
অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে ইউনূস বলেন, গত ১৫ মাসে অর্থনীতি গভীর সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক খাতে মানুষের আস্থা ফিরেছে, রপ্তানি ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বেড়েছে।
তিনি জানান, আগামী সপ্তাহে ডেনমার্কভিত্তিক মায়ার্স্ক গ্রুপের এপিএম টার্মিনালস এর সঙ্গে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পে ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর হবে—যা বাংলাদেশের ইতিহাসে ইউরোপের সর্বোচ্চ একক বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত।
সুষ্ঠু নির্বাচনে ঐক্যের আহ্বান
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রায় দেড় যুগ পর জনগণ ভোটাধিকার ফিরে পেতে যাচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ নিশ্চিত করতে সব রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে অসংখ্য প্রাণের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে আমাদের সহিষ্ণুতা ও ঐক্য বজায় রাখতে হবে।
ভাষণের শেষে তিনি আশা প্রকাশ করেন, রাজনৈতিক দলগুলো জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেবে, এবং বাংলাদেশ নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করবে—একটি গণতান্ত্রিক, অংশগ্রহণমূলক ও সুশাসিত রাষ্ট্রব্যবস্থার দিকে।
পাবলিকিয়ান টুডে/ এসএইচ | ফেসবুক