১০:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিক্ষকদের পেনশন প্রত্যয় স্কিম বাতিল দাবির যৌক্তিকতা!

ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত: ০৮:৪৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ জুলাই ২০২৪
  • / 32

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গত মার্চের মাঝামাঝি প্রত্যয় পেনশন স্কিম চালুর বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।এর পর থেকেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা প্রত্যয় স্কিম চালুর বিরোধিতা করেন। এরই প্রেক্ষিতে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালনের পাশাপাশি নানান অবস্থান কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।

আলোচিত প্রত্যয়স্কিমে অনেক সুযোগ সুবিধা কমে গেছে বলে ধারণা করেন শিক্ষকরা। বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থা ও আলোচিত প্রত্যয় স্কিম ব্যবস্থার মধ্যে তুলনা করলে কয়েকটি বিষয় সামনে আসে যেমন:
১) বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় একজন সরকারি কর্মকর্তার বেতন থেকে টাকা কাটা হয় ন, যেখানে প্রত্যয় স্কিমে 10 শতাংশ হারে টাকা কাটা হবে।

২) বিদ্যমান স্কিম অনুসারে একজন কর্মকর্তা আনুতোষিক বাবদ এককালীন ৮০ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা পান যা প্রত্যয় স্কিম অনুযায়ী আর পাবেন না।

৩)বিদ্যমান ব্যবস্থায় একজন চাকুরীজীবী ও নমিনি আজীবন পেনশন পান । অপরদিকে প্রত্যয় স্কিম অনুযায়ী একজন পেনশনার আজীবন পাবেন তবে পেনশনার মারা গেলে নমিনি পাবেন ৭৫ বছর বয়স (পেনশনারের বয়স) পর্যন্ত।

৪) বিদ্যমান স্কিম অনুযায়ী একজন কর্মকর্তা বছরে ৫% হারে ইনক্রিমেন্ট পান অন্যদিকে প্রত্যয়ে আর সেটা পাবেন না।

৫)বিদ্যমান স্কিম ব্যবস্থায় অবসরের বয়স শিক্ষকদের ৬৫, কর্মকর্তাদের ৬২ ও কর্মচারীদের ৬০ বছর সেখানে প্রত্যয় স্কিম ব্যবস্থায় সবার অবসরের বয়স ৬০ বৎসর নির্ধারণ করা হয়েছে।

৬)এছাড়া বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায়,অর্জিত ছুটির বিপরীতে টাকা পাওয়া, এলপিআর(অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটি), মাসিক চিকিৎসা ভাতা, ২টি উৎসব ভাতা ও ১টি বৈশাখী ভাতার ব্যবস্থা থাকলেও প্রত্যয় স্কিমে এইসব ব্যবস্থার কোন উল্লেখ নেই।

এই বিষয়ে জানতে গেলে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডক্টর আব্দুল মোমেন বলেন, “এই আন্দোলন মূলত আমাদের স্বার্থে নয় বরং ভবিষ্যতে যারা শিক্ষকতায় আসতে চাচ্ছেন তাদের স্বার্থে। সাথে সাথে এই স্কিম চালু হলে সুবিধার দিক থেকে শিক্ষকদের মধ্যেও দুটি শ্রেণীর সৃষ্টি হবে, একদল অপর দল থেকে সুযোগ-সুবিধায় এগিয়ে থাকবে যেটা স্পষ্টতো অন্যায় ও অযৌক্তিক। তিনি আরো বলেন আমরা জানি শিক্ষকরা একটি সুস্থ মাননশীল জাতি গড়ার কারিগর এবং এই প্রত্যয় স্কিম চালুর ফলে মেধাবীরা শিক্ষকতা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে যার দরুন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তার সঠিক শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো: সাইফুল আলম বলেন,
“পেনশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মহোদয়ের উদ্দেশ্যে বলছি যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৫ সদস্যের একজন একটি কমিটি ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রাপ্ত সুবিধাটি খর্ব হবার বিষয়টি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন এবং মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন সেটার উপর ভিত্তি করে এখনই প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে অসুবিধা কোথায়!”

গত মার্চে যারিকৃত এই প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতি সহ শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত নানান কর্মসূচি দিয়ে আসছেন।এরই প্রেক্ষিতে ১লা জুলাই থেকে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকা পূর্ণ কর্মবিরতির আহবানে সাড়া দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করছেন।

উল্লেখ্য শুধু স্বশাসিত,স্বায়ত্বশাসিত ও রাষ্ট্রয়ত্ত নয় বরং সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা ও তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর চাকুরীতে যারা ১লা জুলাই থেকে যোগদান করবে তাদের জন্য প্রত্যয় পেনশন স্কিম ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে ।

আলাওল করিম ফয়সাল,নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

শেয়ার করুন

শিক্ষকদের পেনশন প্রত্যয় স্কিম বাতিল দাবির যৌক্তিকতা!

প্রকাশিত: ০৮:৪৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ জুলাই ২০২৪

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গত মার্চের মাঝামাঝি প্রত্যয় পেনশন স্কিম চালুর বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।এর পর থেকেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা প্রত্যয় স্কিম চালুর বিরোধিতা করেন। এরই প্রেক্ষিতে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালনের পাশাপাশি নানান অবস্থান কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।

আলোচিত প্রত্যয়স্কিমে অনেক সুযোগ সুবিধা কমে গেছে বলে ধারণা করেন শিক্ষকরা। বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থা ও আলোচিত প্রত্যয় স্কিম ব্যবস্থার মধ্যে তুলনা করলে কয়েকটি বিষয় সামনে আসে যেমন:
১) বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় একজন সরকারি কর্মকর্তার বেতন থেকে টাকা কাটা হয় ন, যেখানে প্রত্যয় স্কিমে 10 শতাংশ হারে টাকা কাটা হবে।

২) বিদ্যমান স্কিম অনুসারে একজন কর্মকর্তা আনুতোষিক বাবদ এককালীন ৮০ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা পান যা প্রত্যয় স্কিম অনুযায়ী আর পাবেন না।

৩)বিদ্যমান ব্যবস্থায় একজন চাকুরীজীবী ও নমিনি আজীবন পেনশন পান । অপরদিকে প্রত্যয় স্কিম অনুযায়ী একজন পেনশনার আজীবন পাবেন তবে পেনশনার মারা গেলে নমিনি পাবেন ৭৫ বছর বয়স (পেনশনারের বয়স) পর্যন্ত।

৪) বিদ্যমান স্কিম অনুযায়ী একজন কর্মকর্তা বছরে ৫% হারে ইনক্রিমেন্ট পান অন্যদিকে প্রত্যয়ে আর সেটা পাবেন না।

৫)বিদ্যমান স্কিম ব্যবস্থায় অবসরের বয়স শিক্ষকদের ৬৫, কর্মকর্তাদের ৬২ ও কর্মচারীদের ৬০ বছর সেখানে প্রত্যয় স্কিম ব্যবস্থায় সবার অবসরের বয়স ৬০ বৎসর নির্ধারণ করা হয়েছে।

৬)এছাড়া বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায়,অর্জিত ছুটির বিপরীতে টাকা পাওয়া, এলপিআর(অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটি), মাসিক চিকিৎসা ভাতা, ২টি উৎসব ভাতা ও ১টি বৈশাখী ভাতার ব্যবস্থা থাকলেও প্রত্যয় স্কিমে এইসব ব্যবস্থার কোন উল্লেখ নেই।

এই বিষয়ে জানতে গেলে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডক্টর আব্দুল মোমেন বলেন, “এই আন্দোলন মূলত আমাদের স্বার্থে নয় বরং ভবিষ্যতে যারা শিক্ষকতায় আসতে চাচ্ছেন তাদের স্বার্থে। সাথে সাথে এই স্কিম চালু হলে সুবিধার দিক থেকে শিক্ষকদের মধ্যেও দুটি শ্রেণীর সৃষ্টি হবে, একদল অপর দল থেকে সুযোগ-সুবিধায় এগিয়ে থাকবে যেটা স্পষ্টতো অন্যায় ও অযৌক্তিক। তিনি আরো বলেন আমরা জানি শিক্ষকরা একটি সুস্থ মাননশীল জাতি গড়ার কারিগর এবং এই প্রত্যয় স্কিম চালুর ফলে মেধাবীরা শিক্ষকতা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে যার দরুন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তার সঠিক শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো: সাইফুল আলম বলেন,
“পেনশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মহোদয়ের উদ্দেশ্যে বলছি যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৫ সদস্যের একজন একটি কমিটি ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রাপ্ত সুবিধাটি খর্ব হবার বিষয়টি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন এবং মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন সেটার উপর ভিত্তি করে এখনই প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে অসুবিধা কোথায়!”

গত মার্চে যারিকৃত এই প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতি সহ শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত নানান কর্মসূচি দিয়ে আসছেন।এরই প্রেক্ষিতে ১লা জুলাই থেকে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকা পূর্ণ কর্মবিরতির আহবানে সাড়া দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করছেন।

উল্লেখ্য শুধু স্বশাসিত,স্বায়ত্বশাসিত ও রাষ্ট্রয়ত্ত নয় বরং সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা ও তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর চাকুরীতে যারা ১লা জুলাই থেকে যোগদান করবে তাদের জন্য প্রত্যয় পেনশন স্কিম ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে ।

আলাওল করিম ফয়সাল,নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়