টিউশনির টাকা চাওয়ায় যবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের মারধর,আহত ৫,আটক ১
- প্রকাশিত: ১০:১১:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / 40
যবিপ্রবি প্রতিনিধি:
টিউশনির বকেয়া টাকা চাওয়ায় বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগে যশোরের স্থানীয় বাসিন্দা তানিয়া আলমের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে। অভিযুক্ত তানিয়াকে গ্রেফতার করে আদালতে তুলেছে পুলিশ।
গতকাল (৯ সেপ্টেম্বর) সোমবার সন্ধায় যশোর শহরের কাঁঠালতলার আবাসিক এলাকার একটি বাসায় এই ঘটনা ঘটে।ভুক্তভোগীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। এঘটনায় দিবাগত রাত ১ টায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নেছার বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামীরা হলেন সাংবাদিক আলমগীর কবীরের স্ত্রী তানিয়া আলম (৩৫), ফরিদ (২৫), ফারুক (২৫) বাচ্চু (৩০), বেলো (২৪), লুত্ব (৩০) সহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টিউশনির পাওনা ১৬ হাজার টাকা চাওয়া নিয়ে মারধরের খবর পেয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে গেলে তার সহপাঠীদের উপরেও হামলা করে সন্ত্রাসীরা। এর পরপরই শহর ও ক্যাম্পাস থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী ঘটনা স্থলে আসেন এবং বিচারের দাবিতে ঐ সাংবাদিকের বাড়ির সামনেই বিক্ষোভ শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরবর্তীতে যশোরের ৫৫ পদাতিকের সেনাবাহিনীর একদল সদস্য এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এসময় অভিযুক্ত তানিয়া আলমকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় পাঁচজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, বর্তমানে তাঁরা যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এজহারে বলেন, আমি আসামী তানিয়া আলমের বাড়ীতে তার মেয়েকে প্রাইভেট পড়াই। পড়ানো বাবদ ষোল হাজার টাকা পাই, বারংবার চাওয়ার পরেও তিনি আমাকে বিভিন্ন কথা বলে ঘুরাতে থাকে। একপর্যায়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার সময় আমি, আমার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস রিসা ও আমার বন্ধু শান্ত (২২) আসামী তানিয়ার বাড়িতে যায়। এরপর তানিয়া আমাকে আট হাজার টাকা দিতে চাইলে তাকে বলি আমার পাওনা টাকা ষোল হাজার টাকা দিতে হবে নয়তো আমি টাকা নিবো না। তখন আসামি তানিয়ার সাথে আমার তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। একপর্যায়ে আসামীরা আমাকে এবং আমার বন্ধু শান্তকে অবৈধভাবে আটকে রেখে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি ভাবে মারপিট করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোলা জখম করে। আসামী তানিয়া আলম আমার স্ত্রীকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তার গলা চেপে ধরে। একপর্যায়ে আমার বন্ধু তৌহিদ ও অয়ন ঘটনাস্থলে আসলে আসামী ফরিদ ওদের মারপিট করতে যায় এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। আসামীরা খুনের হুমকি ধামকি প্রদান করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ইইই বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ইমরান খান, ড. মো: আমজাদ হোসেন, ড. মো: মজনুজ্জামান, শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বোরহানুল আসফিয়া সহ আরো কয়েকজন শিক্ষক।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়া ইইই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: আমজাদ হোসেন ইঞ্জিনিয়ার বলেন, আমরা বিষয়টি শুনেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। একজন শিক্ষার্থী তার কষ্টের টিউশনির প্রাপ্য টাকার জন্য যেভাবে মারধরের শিকার হয়েছে এটা অত্যন্ত দুঃখের। কিছুদিন আগেও মনিহারে এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে, আমরা বিচারের দাবিতে মানববন্ধনও করেছিলাম এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রশাসনকে বলেছিলাম এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে। কিন্তু আমরা দেখলাম আবারো একটি ঘটনা ঘটলো। পুলিশ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের বলেছি, এই ঘটনার একটি দৃষ্টান্ত মূলক বিচার যেন হয় এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নেছার বলেন, আমাকে বিভিন্ন রড,পাইপ, কাঠের বাটম দিয়ে পিটিয়েছে ওরা। আমরা শরীরের হাত,পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে কালশিটে হয়ে গেছে। আমি আমার নায্য বিচার ও পাওনা টাকা চাই।
অভিযুক্ত তানিয়া গ্রেফতারের পূর্বে সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের পারিবারিক সমস্যার কারণে তাকে প্রতিমাসে বেতন দিতাম না। প্রথমে তিন হাজার টাকা ছিলো, পরে একটা সাবজেক্ট বেশি পড়াতে বললে ছয় হাজার টাকা দাবি করেছিলো এই নেছার। পরবর্তীতে সে চার হাজার টাকায় পড়ায়, সে অনুযায়ী গত দুমাসের বেতন পেতো মোট আট হাজার টাকা। কিন্তু চলতি মাসে ৮ তারিখ পর্যন্ত পড়িয়ে পুরো মাসের বেতন দাবি করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আমার ওপর চড়াও হয় এবং তার সাথে আসা স্ত্রীও আমার সাথে খারাপ আচরণ করে। এসময় বাড়ির সামনে কে বা কারা তাদেরকে মেরেছে আমি তাদের চিনিনা। আশেপাশের কয়েকজন ওখানে ছিলো, তাঁরা হয়তো ঐ মারপিট করা লোকদের চিনতে পারে। আমি কাউকে ফোন দিয়ে ডাকিনি।
মামলার বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মামলার হওয়ার পর ১ নং আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ কোর্টে চালান করা হয়েছে। বাকি আসামিদের আটক করার জন্য আমরা কাজ করছি।
টিউশনির বকেয়া টাকা চাওয়ায় বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগে যশোরের প্রভাবশালী সাংবাদিক আলমগীর কবীরের স্ত্রী তানিয়া আলমের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত তানিয়াকে গ্রেফতার করে আদালতে তুলেছে পুলিশ।