বুটেক্সে শিক্ষক সংকট, অব্যবস্থাপনায় দাঁড়িয়ে ক্লাস করেছে শিক্ষার্থীরা
- প্রকাশিত: ০২:৪৬:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / 32
ক্লাসরুমে আসন সংকুলান না হওয়ায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) ৫০তম ব্যাচের নবীনদের একাংশ শিক্ষার্থী তাদের প্রথম দিনের ক্লাস দাঁড়িয়ে করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটে একই রুমে দুই বিভাগের ক্লাস নেওয়া এবং ক্লাসে আসন ব্যবস্থাপনার অভাবের বিষয় দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা।
আজ মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বুটেক্স ৫০তম ব্যাচের লেভেল-১ টার্ম-১ এর ক্লাস শুরু হয়। এই সেমিস্টারে কয়েকটি বিভাগে একই কোর্স থাকার ভিত্তিতে ২টি করে বিভাগ একসাথে ক্লাস করে। এতে ৮০ জনের শিক্ষার্থীর রুমে ১২০ জনকে ক্লাস করতে হয়। এতে শ্রেণীকক্ষে আসন না থাকায় দাঁড়িয়ে ক্লাস করে একাধিক শিক্ষার্থী।
দায়িত্ববানদের সাথে কথা বলে জানা যায় মূলত শিক্ষক সংকট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে একইসাথে ৫টি ব্যাচের শিক্ষা-কার্যক্রম চলমান থাকার কারণে এভাবে দুইটি বিভাগ এক করে কমন কোর্সগুলোর শ্রেণিকার্যক্রম চালানো হয়।
ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও টেক্সটাইল মেশিনারি ডিজাইন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থীরা ৪০৯ নং রুমে একসাথে ক্লাস করে। যথেষ্ট আসন না থাকার কারণে সেখানে শিক্ষার্থীদের একাংশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম ক্লাসে নবীন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের এভাবে দাঁড়িয়ে ক্লাস করার তীব্র সমালোচনা করেন তারা। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনাকে দায়ী বলে মনে করেন।
এই বিষয়ে ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. এটিএম ফায়েজ আহমেদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আজকের ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে হ্যাঁ, ডিপার্টমেন্ট এই ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। আমাদের উচিত ছিল ছাত্রদের পর্যাপ্ত আসন নিশ্চিত করা। আমরা ক্লাসরুমের প্রজেক্টর, মাইক এসব চেক করেছি কিন্তু আসন যে ১২০টা নেই তা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি। আর আসনগুলোর দায়িত্বে ছিল রুহুল আমিন, তাকে বলা হয়েছিলো কিন্তু সে এ ব্যাপারে জানায়নি আমাদের। তবে আশা করি সামনের দিন থেকে আর এই সমস্যা হবে না। এমন দুই বিভাগ একসাথে ক্লাস কতদিন হবে এই ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমাদের মূলত শিক্ষক সংকট এবং একইসাথে অনেকগুলো ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকায় এমনটা করতে হচ্ছে। হয়ত ওদের (৫০তম ব্যাচের) আরো এক বা দুই সেমিস্টার এভাবে কমন কোর্সগুলো দুই বিভাগ একসাথে ক্লাস করতে হবে। আর আগামীকাল থেকে আসন সংকট হবে না, পর্যাপ্ত আসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী রুহুল আমিনকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, দুই বিভাগ একসাথে ক্লাস হবে এ ব্যাপারে আমাকে অবগত করা হয়নি। আমাকে জানানো হয়েছিলো ৮০ জনের ক্লাসের ব্যাপারে, সেখানে আমি ৮৬টি আসনের ব্যবস্থা করে দিই। কিন্তু সকালে জানতে পারি ১২০টি আসনের ব্যাপারে। কিন্তু তখন চেয়ার পুরাতন ভবনে ছিল না, নতুন ভবন থেকে সাথে সাথে নিয়ে আসাও সম্ভব ছিল না।
টেক্সটাইল মেশিনারি ডিজাইন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. সেখ মোঃ মমিনুল আলম বলেন, প্রথম যখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল দুই বিভাগ একসাথে ক্লাস করবে আমরা তাতে সম্মতি দেইনি। কিন্তু উপাচার্য বলেছিল এছাড়া আমাদের উপায় নাই তাই ১২০ জনের ক্লাস একসাথেই হবে। যেহেতু আমরা বড় বিভাগের সাথে যুক্ত হয়েছি তাই ভেবেছিলাম বড় বিভাগ ক্লাসের বিষয়টা অ্যারেঞ্জ করবে। এখানে কাউকে দোষ দেওয়া ঠিক হবে না। আজকে যে ঘটনাটা হল সেটা অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়েছে। আসলে ১২০ জনের ক্লাস করতে আমরা অভ্যস্ত না। পরবর্তী ক্লাসের জন্য পর্যাপ্ত আসনের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। আশা করি পরের দিন থেকে এটা আর হবে না।
৫০তম ব্যাচের ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানায়, আমরা টিএমডিএমের সাথে একসাথে ১২০ জন ক্লাস করি। শিক্ষক সংকটের কারণে এমনটি হয়েছে বলে আমাদের কোঅর্ডিনেটর ও ইমিডিয়েট সিনিয়র ৪৯তম ব্যাচ জানিয়েছে। আমরা রুটিন অনুযায়ী যখন ৪০৯ নং রুমে ক্লাস করতে গিয়েছিলাম। তবে ক্লাসটি ৮০ জন শিক্ষার্থীর জন্য বরাদ্দ ছিল। তাই বাকি ৪০ জন ক্লাসে দাঁড়িয়ে ক্লাস করেছিল। তারপর আমাদের ইমিডিয়েট সিনিয়রদের বিষয়টা জানাই এবং তারা আমাদের ৩১২ নং রুমে যেতে বলে। এরপর ৩১২ রুমে ক্লাস করা হয়। সেখানে আমাদের বিভাগের কোঅর্ডিনেটর আসেন। তিনি আমাদের সমস্যা সম্পর্কে অবগত হয়েছেন এবং ৪০৯ নং রুমে পর্যাপ্ত আসনের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছে।