...

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির কিছু নেতিবাচক দিক

Paru Vai প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর, ২০২৪, ০৫:৪৬

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির কিছু সম্ভাব্য নেতিবাচক দিকগুলো নিম্নরূপ:

নতুন স্নাতকদের জন্য কম সুযোগ: যদি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে বয়স্ক প্রার্থীরা বেশি সময় ধরে চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন। ফলে নতুন স্নাতকরা সরকারি চাকরিতে সুযোগ কম পাবে, যা তরুণদের জন্য প্রতিযোগিতা আরও কঠিন করে তুলবে।

দীর্ঘ সময় ধরে বেকার থাকা: বয়সসীমা বাড়ানোর কারণে অনেকেই সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করবে, ফলে তারা বেকার থাকবে। এর ফলে দীর্ঘ সময় ধরে কোনো বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে না পারায় তাদের দক্ষতা কমে যেতে পারে এবং প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়বে।

বেসরকারি খাত দুর্বল হয়ে পড়া: অনেক চাকরিপ্রার্থী সরকারি চাকরির আশায় বেসরকারি খাতে যোগ দিতে চান না। বয়সসীমা বাড়ালে এ প্রবণতা আরও বাড়তে পারে, যার ফলে বেসরকারি খাত দুর্বল হতে পারে এবং সেখানকার কর্মসংস্থান সংকুচিত হতে পারে।

সরকারি চাকরিতে বাড়তি প্রতিযোগিতা: বয়সসীমা বৃদ্ধির ফলে আবেদনকারীর সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে, অথচ সরকারি চাকরির সংখ্যা সীমিত। এতে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং আরও বেশি প্রার্থীর হতাশা সৃষ্টি হবে, কারণ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সফল হওয়া আরও কঠিন হয়ে উঠবে।

শ্রমবাজারে প্রবেশে বিলম্ব: যারা সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করছেন, তারা শ্রমবাজারে প্রবেশ করতে দেরি করবেন। এর ফলে তারা অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে দেরি করবেন, যা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

দক্ষতার ঘাটতি ও হ্রাস: বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেক ক্ষেত্রেই প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতা হ্রাস পায়। ফলে যারা অনেক দিন ধরে বেকার ছিলেন, তারা নতুন প্রযুক্তি বা কর্মক্ষেত্রের পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে সমস্যায় পড়তে পারেন, যা তাদের কর্মদক্ষতাকে প্রভাবিত করতে পারে।

অর্থনৈতিক চাপে বৃদ্ধি: দীর্ঘ সময় ধরে বেকার থাকার কারণে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। চাকরিপ্রার্থীরা যদি বেসরকারি খাতে কাজ শুরু করতেন, তাহলে তারা অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয় হতে পারতেন। কিন্তু বয়সসীমা বাড়ানোর কারণে তারা সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করবে এবং এভাবে দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকবে।

অতিরিক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী বৃদ্ধি: বয়সসীমা বৃদ্ধির ফলে অনেক অভিজ্ঞ প্রার্থী সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করবে, যা অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের সৃষ্টি করবে। এর ফলে চাকরিতে সন্তুষ্টির অভাব এবং উচ্চ কর্মচঞ্চলতার হার বাড়তে পারে।

সরকারের উচিত উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য উদ্যোগ নেওয়া এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান করা। তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে হলে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যেমন ব্যবসায়িক উদ্যোগে অর্থায়ন বা ফান্ডিং প্রদান, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ সেবা প্রদান, এবং বাজারে প্রবেশে সহায়তা করা।

উদ্যোক্তা উন্নয়নে অর্থায়ন: অনেক তরুণের কাছে ব্যবসার নতুন ধারণা রয়েছে, কিন্তু অর্থের অভাবে তারা সেই ধারণাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে না। সরকারের উচিত তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, ফান্ডিং বা বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা। এর ফলে নতুন নতুন ব্যবসা শুরু হবে এবং বেকারত্বের হার কমবে।

প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন: উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হতে হলে সঠিক প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা থাকা জরুরি। সরকারের উচিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালা, উদ্যোক্তা উন্নয়ন কেন্দ্র এবং ব্যবসা ব্যবস্থাপনা শেখার সুযোগ তৈরি করা। এর মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তারা ব্যবসা পরিচালনা ও সম্প্রসারণের দক্ষতা অর্জন করতে পারবে।

বাজারে প্রবেশে সহায়তা: নতুন ব্যবসা শুরু করার পর উদ্যোক্তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বাজারে প্রবেশ করা। সরকার যদি উদ্যোক্তাদের জন্য নির্দিষ্ট নীতিমালা ও সুবিধা প্রদান করে, যেমন কর ছাড়, বাজারের তথ্য প্রদান, রপ্তানি সুবিধা, এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করে, তবে তা উদ্যোক্তাদের ব্যবসার প্রসারে সহায়ক হবে।

উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির জন্য সহায়তা: বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে নতুন ব্যবসা শুরু করতে হলে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন। সরকারের উচিত প্রযুক্তি নির্ভর স্টার্টআপগুলোকে প্রাথমিক পর্যায়ে সহায়তা প্রদান করা, যাতে তারা উদ্ভাবনী পণ্য ও সেবা তৈরি করতে পারে এবং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারে।

ইফাত খান
কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর