জাবিতে শাটল বাস চালুতে পরিবহন ব্যবস্থায় ফিরেছে শৃংখলা, স্বস্তি ফেরাতে বিকল্প ভাবনা
- প্রকাশিত: ০৪:২৫:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 45
জাবি প্রতিনিধিঃ জোবায়ের জাকির
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রী নিহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের দাবীর মুখে ক্যাম্পাসে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বিভিন্ন রুটে শাটল বাস চালু করা হয়েছে। শাটল বাস চালুতে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরলেও শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি দূর করতে এবং পুনরায় স্বস্তি ফেরাতে বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, শাটল বাস চালু করার কয়েকদিনের মাথায় পরিবহন অব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে দুর্ভোগের নানান চিত্র উঠে এসেছে। সময়মতো কাঙ্খিত স্থানে বাস না পাওয়ায় এবং গন্তব্যে পৌঁছাতে বিলম্ব হওয়ায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত পরিমানে প্যাডেলচালিত রিকশা নেই। একটি প্যাডেলচালিত রিকশায় দুই জনের অধিক শিক্ষার্থী ওঠা যায়না। যথাসময়ে রিকশা ও বাস না পাওয়ায় সময়মতো গন্তব্যে যেতে পারছেন না তারা। একদিকে যেমন সময় অপচয় হচ্ছে অন্যদিকে সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে অনেকেই একাডেমিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। একস্থান থেকে গন্তব্যে পৌছানোর জন্য দীর্ঘক্ষন বসে থেকে বাস ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করার মতো ঘটনা ঘটছে।
শাটল বাসের পাশাপাশি প্যাডেলচালিত রিকশাগুলোও শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সময়মতো রিকশা না পাওয়া, গন্তব্যে পৌঁছাতে সময়ক্ষেপণ, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ ভোগান্তির নানান অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন ও বিচার বিভাগের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আমিনা বুশরা বলেন, রাচীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে ব্যাটারি চালিত রিকশা হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছি। একদিকে এত মানুষের যাতায়াত, অন্যদিকে শাটল বাসের সাথে বেশিরভাগেরই শিডিউল না মেলায় এই সমস্যা হচ্ছে । প্যাডেল চালিত রিকশার পরিমাণ বাড়ানো আর রিকশা ভাড়া প্রশাসন থেকে নির্ধারণ করে দিলে আশা করি এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহী ফারহানা সানচি বলেন, প্যাডেলচালিত রিকশাগুলো ধীরগতিসম্পন্ন এবং ভাড়ার হার অত্যন্ত বেশি। ঢালু রাস্তায় যাত্রীদের নেমে রিকশার পিছনে হাঁটতে হয়, যা বেশ অসুবিধাজনক। অধিকাংশ রিকশা ক্যাম্পাসের নির্দিষ্ট এলাকায় যেমন বিশমাইল বা আমবাগান যেতে চায় না, আর গেলেও দুই-তিনগুণ বেশি ভাড়া চায়। অন্যদিকে, শাটল বাস পরিষেবা প্রতিটি স্টপেজে দাঁড়ানোর কারণে সময়সাপেক্ষ এবং অনেক সময় ক্লাস টাইমের সঙ্গে সমন্বয় হয় না।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৫৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রায়হান কবির রিয়াল বলেন, শাটল বাসের শিডিউল মেনে শিক্ষার্থীরা যেকোনো জায়গায় আগের মত সহজে যেতে পারে না। দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। এ কারণে হলে পৌঁছাতে তো দেরি হয়ই ডিপার্টমেন্ট এও সঠিক সময়ে পৌঁছানো মুশকিল হয়ে যায়। শিক্ষকদের রোষানলে পড়তে হয় অনেক সময়।
বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৫২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইসমাত জেরিন লামিয়া বলেন, কালক্ষেপণ করা এবং যত্রতত্র অকারণে থামানোর কারণে অথবা শাটল মিস করে ফেললে আমরা ক্লাস এবং পরীক্ষায় সঠিক সময়ে উপস্থিত হতে পারিনা তাছাড়া ক্যাম্পাসে প্যাডেলচালিত রিকশা সংখ্যায় কম এবং তুলনামূলক ভাড়া বেশি বিধায় অনেকের পক্ষে রিকশায় যাতায়াতও সম্ভব হয়ে উঠছে না।
একই সাথে, অনেক সময় দেখা যাচ্ছে পর্যাপ্ত রিকশা না থাকায় এবং সময়মতো বাস না পাওয়ায় অসুস্থ শিক্ষার্থীরা কাঙ্খিত সময়ে মেডিকেল সেন্টারে যেতে পারছে না। এম্বুল্যান্স স্বল্পতার কথাও তারা জানায়। সমস্যাগুলো নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. শামছুর রহমান বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা হলো পর্যাপ্ত এম্বুলেন্স নেই। রোগী আনায়নে সমস্যা হচ্ছিলো আগে থেকেই। তখন রিকশাগুলোই কাজে দিচ্ছিলো।তবুও হঠাৎ করেই রিকশা বন্ধ করে দেওয়ায় আরও ভোগান্তি বেড়েছে। তখন আমরা প্রশাসনের কাছে আবেদন করি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। প্রশাসন থেকে বলা হয় একটা শাটল বাস নেওয়ার জন্য। কিন্তু সেটা নেওয়ার পরেও আশানুরূপ কাজ হয়নি। আমাদের একটা অটোরিকশা ছিলো কিন্তু সেটাও বন্ধ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসে রাত-দিন মিলে বারো-বারো ২৪ ঘন্টা চলাচলের জন্য দুইটা এম্বুল্যান্স চেয়ে আবেদন করি। এমনকি আগের অটোরিকশাটি চালু করার ব্যাপারে বললেও আমাদের প্রশাসন জানান অপেক্ষা করেন। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম পাবলিকিয়ান টুডেকে বলেন, সংশ্লিষ্ট হলের প্রভোস্টের মাধ্যমে মেডিকেলে কথা বললে তারা এম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করবেন। সীমাবদ্ধতা সারা দেশেই আছে। সীমাবদ্ধতা থাকার পরেও কীভাবে নাগরিকরা বেশি সুবিধা পাবে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। অসুস্থ শিক্ষার্থীদের সেবা দানের লক্ষ্যে অলটারনেটিভ চিন্তাভাবনা করছি। খুব দ্রুতই জানানো হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিষিদ্ধের পর শিক্ষার্থীরা কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লেও তারা চান না পূনরায় তা চালু হোক। ক্যাম্পাসে পরিবহন ব্যবস্থায় প্যাডেলচালিত রিকশা সংখ্যা বৃদ্ধি, জো-বাইক চালু, শাটল বাসের শিডিউল পরিবর্তনসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে তারা প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ পাবলিকিয়ান টুডেকে বলেন, আমাদের রিসোর্স স্বল্পতা থাকার পরেও আমরা এই সমস্যাগুলো সমাধানে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি এবং আরও কিছু পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন আছে। এমএইচ গেইট থেকে বিশ মাইল গেইট পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময় পর পর বাস চলবে যেন কেউ ভোগান্তিতে না পরে।সচেতনতা তৈরিতে মাইকিং করেছি। দূর্ঘটনাটা এড়াতে স্পিড ব্রেকার দিয়েছি, সচেতনতামূলক বিভিন্ন চিত্র, নকশা গ্রাফিতি অংকনের ব্যবস্থা করেছি। ক্যাম্পাসে প্যাডেলচালিত রিকশা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে রফিক জব্বার হল সংলগ্ন রাস্তাটি সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি যেন শেখ রাসেল ও শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে অসুবিধা না হয়। আমরা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সামনে ফাঁকা জায়গায় রিকশা রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিয়েছি যেন রিকশা নিয়ে চালকদের সাভার যাতায়াতে কোন অসুবিধা না হয়।
তিনি আরও বলেন, বড় কোন পরিবর্তন বা সংস্কার আনার জন্য একটু সময় লাগে। কিন্তু ক্যাম্পাসে চলমান বিভিন্ন আন্দোলনের কারনে প্রশাসনে চাপ বাড়ছে। ফলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে একটু বিলম্ব হচ্ছে। তবে আমরা চায়না থেকে জো-বাইক আনার ব্যাপারে ভাবছি। এটা বাস্তবায়নে দুই মাস মতো লাগতে পারে। তবে, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আবারো চালু করার ব্যাপারে এখন আপাতত ভাবছি না। আশা করি তার আর প্রয়োজন হবে না।
এর আগে, গত মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) অটোরিকশার ধাক্কায় এক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিষিদ্ধ করে এবং শাটল বাস চালু করে।
উল্লেখ্য, শাটল বাসগুলো সকাল ৮ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট শিডিউলে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে।
জোবায়ের জাকির
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়