০৭:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিকাশের বিরুদ্ধে স্টার্টআপ কোম্পানি ধ্বংসের অভিযোগ

ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত: ০৪:৪৮:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫
  • / 58

ভুক্তভোগী এ এস ফারদ্বীন আহমেদ তাঁর ফেইসবুক পোস্টে লিখেন, গত ৩ বছর ধরে বিকাশ লিমিটেডের একটি রোবট প্রজেক্টের জন্য নির্মম পরিশ্রম করেছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটি টাকাও পাইনি। এই প্রজেক্টের জন্য কাজ করতে গিয়ে এবং ব্যয় বহন করতে গিয়ে ধ্বংস হয়েছে আমার তিল তিল করে গড়ে তোলা স্টার্টআপ, ‘ফারবোট রোবটিক্স’।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যখন চলাফেরা করারও শক্তি ছিল না, তখনও শরীরের ওপরে পিসি রেখে রোবটের সফটওয়্যারের কাজ চালিয়ে গেছি। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার আয় দিয়ে এই প্রজেক্টের খরচ চালিয়েছি। এত বড় একটি কোম্পানি আমার সঙ্গে এমন আচরণ করবে, তা কখনোই ভাবিনি।

প্রজেক্ট শুরুর পটভূমি

২০২১ সালের নভেম্বর মাসে বিকাশ লিমিটেড একটি পত্রিকায় আমার রোবটের ফিচার দেখে। তাদের হেড অফিস থেকে তিনজনের একটি টিম আমার মিরপুরের অফিসে আসে এবং একটি কাস্টমার কেয়ার রোবট বানানোর প্রস্তাব দেয়। এরপর তারা রোবটটি হেড অফিসে নিয়ে গিয়ে তাদের সিএমও ও অন্য কর্মকর্তাদের দেখায়।

প্রথমবার তারা রোবটটিতে মডিফিকেশনের কাজ দেয়, যা শেষ করতে ৬ মাস সময় লেগে যায়। এরপর তারা দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, এবং পঞ্চমবার নতুন কাজ দেয়। প্রতিবারই ডাউন পেমেন্টের অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু তারা তা দেয়নি। বরং প্রতিশ্রুতি দিয়ে নতুন কাজ করিয়ে নিয়েছে।

ডাউন পেমেন্ট ছাড়া কাজ চালানোর কারণ

১. প্রথম দিন থেকেই তারা বলেছিল বিকাশের বাজেট নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। ২. তারা জানিয়েছিল, প্রথমে একটি রোবট নেবে এবং পরে সব কাস্টমার কেয়ারে রোবট বসাবে। ৩. প্রথম ছয় মাসের পরিশ্রম বৃথা যাবে ভেবে আরও কিছুদিন কাজ চালিয়ে গেছি। এই টাইম ট্রাপেই মূলত আটকে গিয়েছিলাম। ৪. দেশে প্রযুক্তি খাতে বড় কোম্পানির বিনিয়োগ কম। বিকাশ লিমিটেড যদি রোবটের ব্যবহার শুরু করে, তাহলে অন্য কোম্পানিও আগ্রহী হবে, এমনটাই ভেবেছিলাম।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে বিকাশ আমাকে আবার তাদের অফিসে যেতে বলে। রোবটটি পরীক্ষা করার পর তাদের সিএমও এক সপ্তাহের মধ্যে বিল পরিশোধের আশ্বাস দেন এবং নতুন বাজেট তৈরি করতে বলেন। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নতুন বাজেট তৈরি করে আবার অফিসে যাই।

তবে সেখানে সাপ্লাই চেইনের প্রধান জানায়, বিকাশ থেকে অ্যাডভান্স পেমেন্ট দেওয়ার নিয়ম নেই। আমার পায়ের নিচের মাটি যেন সরে যায়। সেখানকার কর্মীরা আমাকে নানা ভাবে বুঝিয়ে আবার কাজ চালিয়ে যেতে বলে।

২০২৫ সালে এক বছর কঠোর পরিশ্রম করে তাদের দেওয়া চূড়ান্ত কাজটিও শেষ করি। কিন্তু এরপর তারা আর কোনো সাড়া দেয়নি এবং যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

প্রজেক্টটি এতই কমপ্লেক্স ছিল যে, বড় কোনো কোম্পানিকে দিয়ে করাতে গেলে অন্তত ৫ কোটি টাকা খরচ হতো। এতে মেশিন লার্নিং, ডেটা অ্যানালাইসিস, প্যারালাল কম্পিউটিং এবং রোবটিক্সের ওপর ব্যাপক গবেষণা ছিল।

নিজের শরীর ও মস্তিষ্কের ওপর টর্চার করে, দিন-রাত কাজ করে, নিখুঁতভাবে প্রজেক্টটি সম্পন্ন করেছি। কিন্তু এত বড় একটি কোম্পানি আমাদের মতো ছোট একটি স্টার্টআপকে বছরের পর বছর খাটিয়ে একটি টাকাও দেয়নি।

আমি চাই না দেশের আর কোনো স্টার্টআপ আমার মতো এমন পরিস্থিতির শিকার হোক। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যেকোনো কাজের শুরুতেই ডাউন পেমেন্ট নিশ্চিত করা উচিত। আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই নির্মম ঘটনার প্রতিটি কথার প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে।

দেশের গবেষণা ও প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন দেখতে চেয়েছিলাম, তাই দেশ ছাড়িনি। কিন্তু এখন একমাত্র ইচ্ছা, এই দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া।

শেয়ার করুন

বিকাশের বিরুদ্ধে স্টার্টআপ কোম্পানি ধ্বংসের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৪:৪৮:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫

ভুক্তভোগী এ এস ফারদ্বীন আহমেদ তাঁর ফেইসবুক পোস্টে লিখেন, গত ৩ বছর ধরে বিকাশ লিমিটেডের একটি রোবট প্রজেক্টের জন্য নির্মম পরিশ্রম করেছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটি টাকাও পাইনি। এই প্রজেক্টের জন্য কাজ করতে গিয়ে এবং ব্যয় বহন করতে গিয়ে ধ্বংস হয়েছে আমার তিল তিল করে গড়ে তোলা স্টার্টআপ, ‘ফারবোট রোবটিক্স’।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যখন চলাফেরা করারও শক্তি ছিল না, তখনও শরীরের ওপরে পিসি রেখে রোবটের সফটওয়্যারের কাজ চালিয়ে গেছি। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার আয় দিয়ে এই প্রজেক্টের খরচ চালিয়েছি। এত বড় একটি কোম্পানি আমার সঙ্গে এমন আচরণ করবে, তা কখনোই ভাবিনি।

প্রজেক্ট শুরুর পটভূমি

২০২১ সালের নভেম্বর মাসে বিকাশ লিমিটেড একটি পত্রিকায় আমার রোবটের ফিচার দেখে। তাদের হেড অফিস থেকে তিনজনের একটি টিম আমার মিরপুরের অফিসে আসে এবং একটি কাস্টমার কেয়ার রোবট বানানোর প্রস্তাব দেয়। এরপর তারা রোবটটি হেড অফিসে নিয়ে গিয়ে তাদের সিএমও ও অন্য কর্মকর্তাদের দেখায়।

প্রথমবার তারা রোবটটিতে মডিফিকেশনের কাজ দেয়, যা শেষ করতে ৬ মাস সময় লেগে যায়। এরপর তারা দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, এবং পঞ্চমবার নতুন কাজ দেয়। প্রতিবারই ডাউন পেমেন্টের অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু তারা তা দেয়নি। বরং প্রতিশ্রুতি দিয়ে নতুন কাজ করিয়ে নিয়েছে।

ডাউন পেমেন্ট ছাড়া কাজ চালানোর কারণ

১. প্রথম দিন থেকেই তারা বলেছিল বিকাশের বাজেট নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। ২. তারা জানিয়েছিল, প্রথমে একটি রোবট নেবে এবং পরে সব কাস্টমার কেয়ারে রোবট বসাবে। ৩. প্রথম ছয় মাসের পরিশ্রম বৃথা যাবে ভেবে আরও কিছুদিন কাজ চালিয়ে গেছি। এই টাইম ট্রাপেই মূলত আটকে গিয়েছিলাম। ৪. দেশে প্রযুক্তি খাতে বড় কোম্পানির বিনিয়োগ কম। বিকাশ লিমিটেড যদি রোবটের ব্যবহার শুরু করে, তাহলে অন্য কোম্পানিও আগ্রহী হবে, এমনটাই ভেবেছিলাম।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে বিকাশ আমাকে আবার তাদের অফিসে যেতে বলে। রোবটটি পরীক্ষা করার পর তাদের সিএমও এক সপ্তাহের মধ্যে বিল পরিশোধের আশ্বাস দেন এবং নতুন বাজেট তৈরি করতে বলেন। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নতুন বাজেট তৈরি করে আবার অফিসে যাই।

তবে সেখানে সাপ্লাই চেইনের প্রধান জানায়, বিকাশ থেকে অ্যাডভান্স পেমেন্ট দেওয়ার নিয়ম নেই। আমার পায়ের নিচের মাটি যেন সরে যায়। সেখানকার কর্মীরা আমাকে নানা ভাবে বুঝিয়ে আবার কাজ চালিয়ে যেতে বলে।

২০২৫ সালে এক বছর কঠোর পরিশ্রম করে তাদের দেওয়া চূড়ান্ত কাজটিও শেষ করি। কিন্তু এরপর তারা আর কোনো সাড়া দেয়নি এবং যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

প্রজেক্টটি এতই কমপ্লেক্স ছিল যে, বড় কোনো কোম্পানিকে দিয়ে করাতে গেলে অন্তত ৫ কোটি টাকা খরচ হতো। এতে মেশিন লার্নিং, ডেটা অ্যানালাইসিস, প্যারালাল কম্পিউটিং এবং রোবটিক্সের ওপর ব্যাপক গবেষণা ছিল।

নিজের শরীর ও মস্তিষ্কের ওপর টর্চার করে, দিন-রাত কাজ করে, নিখুঁতভাবে প্রজেক্টটি সম্পন্ন করেছি। কিন্তু এত বড় একটি কোম্পানি আমাদের মতো ছোট একটি স্টার্টআপকে বছরের পর বছর খাটিয়ে একটি টাকাও দেয়নি।

আমি চাই না দেশের আর কোনো স্টার্টআপ আমার মতো এমন পরিস্থিতির শিকার হোক। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যেকোনো কাজের শুরুতেই ডাউন পেমেন্ট নিশ্চিত করা উচিত। আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই নির্মম ঘটনার প্রতিটি কথার প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে।

দেশের গবেষণা ও প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন দেখতে চেয়েছিলাম, তাই দেশ ছাড়িনি। কিন্তু এখন একমাত্র ইচ্ছা, এই দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া।