যেখানে সাঁইর “বারামখানা”
- প্রকাশিত: ০৯:২৪:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুন ২০২৪
- / 45
“মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।
মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপা রে তুই মূল হারাবি”। -লালন শাহ
গানের মধ্যে দিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মানব ধর্মের আলো ছড়িয়েছেন যিনি এ বাংলায় তিনি হলেন বাউল সম্রাট লালন শাহ।
লালন শাহ তাঁর শিষ্যদের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানবধর্মের নীতি ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা দেবার জন্য বেছে নিয়েছিলেন কুষ্টিয়া কে। তার এই পাঠশালা স্থানীয় ভাষায় আখড়া নামে পরিচিত। কুষ্টিয়া শহর থেকে ৪ কি.মি. দূরে কুমারখালি উপজেলার ছেউড়িয়াতে লালন শাহ তাঁর আখড়া গড়ে তোলেন। প্রতি শীতকালে আখড়াতে ভান্ডারা নামে একটি উৎসবের আয়োজন করা হতো। লালন শাহের শিষ্যরা সেখানে সমাবেত হতেন। সেখানে আধ্যাতিক আলোচনার পাশাপাশি লালন শাহ ও তার শিষ্যরা বাউল সঙ্গীত পরিবেশন করতেন।
১২৯৭ বঙ্গাব্দের ১লা কার্তিক ( ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর) ছেউড়িয়ায় নিজ আখড়ায় লালন শাহ মৃত্যুবরন করেন। তার উপদেশ অনুসারে আখড়ায় একটি ঘরের ভিতর তার কবর দেওয়া হয়। বর্তমানে বিশাল গম্বুজে তার সমাধি ঘিরে সারি সারি শিষ্যের কবর রয়েছে। উক্ত স্থানে লালন শাহ সহ প্রায় ৩২ টি সমাধি রয়েছে। এর মধ্যে ১৪ টি লালন শাহের মুরিদ, ১ জন্য প্রশিষ্য আর বাকি কবরগুলো হলো তার অনুসারীদের।
১৯৬৩ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের গর্ভনর আব্দুল মোমেন খান ছেউড়িয়া আখড়া বাড়িতে বর্তমান মাজারটি নির্মাণ করেন। যার নাম হয় লালন লোকসাহিত্য কেন্দ্র। ১৯৭৮ সালে লালন লোকসাহিত্য কেন্দ্র নাম পরিবর্তন করে প্রতিষ্ঠিত হয় লালন একাডেমি। ২০০৪ সালে লালন একাডেমি চত্বরে আধুনিক মানের অডিটোরিয়াম ও একাডেমি ভবন নির্মাণ করা হয়। লালন শাহের মাজারের পাশে আছে লালন মিউজিয়াম। সেখানে লালনের বসার জলচৌকি, একটি দরজা, ভক্তদের ঘটিবাটি ও বেশকিছু দূর্লভ ছবি সংরক্ষিত আছে।
লালন শাহের মৃত্যুর পর তার শিষ্যরা এখানেই গড়ে তোলে মাজার বা স্থানীয় ভাষায় আখড়া। প্রতি বছর দুইটি লালন স্মরণ উৎসব পালন হয়ে থাকে। একটি দোল পূর্ণিমায় অন্যটি লালনের মৃত্যুবার্ষিকীতে। এই উপলক্ষে কুষ্টিয়ার লালন আখড়াই দিনব্যাপী বিশাল লালন মেলার আয়োজন করা হয়। ফকির লালন শাহের শিষ্য এবং দেশ বিদেশেী অগণিত বাউলকুল এই আখড়াই বিশেষ তিথিতে সমবেত হয়ে উৎসবে উঠে। মাজারের পশ্চিম দিকে স্মরণ উৎসব করার জন্য উন্মুক্ত মঞ্চ, মেলার মাঠ ও আগতদের গোসলের জন্য ঘাট বাঁধানো বিশাল দিঘী খনন করা হয়েছে। আগত অতিথিদের জন্য মর্মভেদী সঙ্গীত পরিবেশন করেন লালন শিল্পীরা। যা আগত অতিথিদের মন কেড়ে নেয় অতি সহজে এবং তাদের মাঝে জাগিয়ে তোলে মানবপ্রেমের চেতনা।
অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূর্ত প্রতীক ছেউড়িয়ার লালন আখড়া এখনও বিশ্বের কোটি হৃদয়কে স্পর্শ করে। লালন শাহের চরণশিক্ত এ ভূমি দেখতে তাই মানুষের এতো আকুতি। আপনিও চাইলে যেতে পারেন একা, দলবদ্ধ হয়ে বা পরিবার নিয়ে
শাকিল শাহরিয়ার