০৮:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫, ১১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মৃত্যুর আগে ছোট ভাইকে ওষুধ আনতে বলেছিল—সেই ছিল শেষ দেখা

ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত: ১২:২৫:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
  • / 3617

তানজিল কাজী, ডিআইইউ প্রতিনিধি:

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষার্থী নিশীতা আক্তার আত্মহত্যা করেন।

শুক্রবার (১৮ জুলাই) রাজধানীর বাড্ডার ছাপড়া মসজিদের পাশে ভাড়া বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। ঘটনাস্থল থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাতে লেখা ছিল, “বাবা আমাকে মাফ করো। আমার কাছে একজন কিছু টাকা পায়—তাকে টাকা দিয়ে দিও।”নিশীতা ইংরেজি বিভাগের ডে শিফটের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায়।

নিশীতার চাচাতো ভাই অন্তর জানান, শুক্রবার সকালে নিশীতা তার ছোট ভাইকে মাথাব্যথার ওষুধ আনতে স্থানীয় একটি ফার্মেসিতে পাঠান। কিছুক্ষণ পর তার ছোট ভাই বাসায় ফিরে দরজা বন্ধ অবস্থায় দেখতে পায়। বহুবার ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে সে। এসময় সে দেখতে পায় নিশীতা ঘরের সিলিং ফ্যানে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলছেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ফরাজি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে রেফার করা হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত শিক্ষার্থীর সহপাঠী ফারজানা আক্তার বলেন, “নিশীতার অকাল মৃত্যুতে আমরা সবাই গভীরভাবে শোকাহত। দুপুরে অন্তরের মেসেজে আমরা খবরটি পাই। প্রথমে কেউ বিশ্বাসই করতে পারছিল না। পরে তার নাম্বারে কল করলে ছোট ভাই জানায়, মাথাব্যথার ওষুধ আনতে পাঠানোর পর ফিরে এসে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পায় নিশীতাকে। কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়া হলেও ততক্ষণে দেরি হয়ে যায়।”তিনি আরও বলেন, “পুলিশ সুইসাইড নোট পেয়েছে, যেখানে পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়ে ছয় হাজার টাকা পাওনার কথা লিখে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে প্রেম সম্পর্কজনিত হতাশা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত। সদা হাস্যোজ্জ্বল নিশীতা হঠাৎ চাকরিতে যোগ দিয়ে ক্লাসে কম আসছিল তবে পরীক্ষায় অংশ নিত। তার এমন মৃত্যুতে আমরা সবাই মর্মাহত।”

নিশীতার ছোট ভাই আরমান ভূইয়া বলেন, বিগত কয়েকদিন ধরে আপু অসুস্থ ছিল মাইগ্রেনে ব্যথা ছিল সাথে জ্বর, ঠান্ডাও ছিল। গতকাল সকালে আব্বু যখন দোকানে চলে যায় তখন নয়টার সময় আপু আমাকে ঘুম থেকে ডাক দিয়ে ওঠায়। তারপর আপু আমাকে বলে তার মাইগ্রেনে ব্যথা হচ্ছে আমি যেন ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে আসি। তারপর আমি ওষুধ আনতে দোকানে চলে যাই এবং ফার্মেসিতে ওষুধ না থাকাই আমি আপুর নাম্বারে বারবার ফোন দিতে থাকে কিন্তু আপু ফোন রিসিভ করছিল না তারপর আমি বাসায় চলে আসি।

এসে দেখি দরজা ভেতর থেকে আটকানো তারপর আব্বুকে ফোন দিয়ে বাসায় নিয়ে আসতে বলি। তারপর আব্বু চাবি দিয়ে দরজা খোলার পর আমরা দেখতে পায় ফ্যানের সাথে আপুর লাশটি ঝুলছে। শরীরে হাত দিয়ে দেখি শরীরটা তখন গরম ছিল পরে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে। আপু বিগত কয়েকদিন ধরে ডিপ্রেশনে ছিল বাড়িতে চিল্লাপাল্লা করতো এবং বলতো আমি আমার আম্মুর কাছে চলে যাব। আমার আম্মু ৬ বছর আগে মারা গেছে। আব্বু বারবার জিজ্ঞেস কি হয়েছে কিন্তু আপু কিছু বলতো না।বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের সাথে এখনো কোনো যোগাযোগ করেনি।ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরিফ আহম্মেহ বলেন, নিশীতার মৃত্যুর খবর আমি এক শিক্ষকের মাধ্যমে জানতে পারি। এ ধরনের মৃত্যু আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখের। বাহিরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এরকম দেখতে পাই কাউন্সিলর থাকে ঠিক তেমনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও একজন প্রশিক্ষিত কাউন্সিলর প্রয়োজন। যাতে করে শিক্ষার্থীরা কাউন্সিলের সাথে ঘন্টা পর ঘন্টা কথা বলে তাদের সমস্যার সমাধান করতে পারে এবং একই সাথে ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজন আছে। আমরা তাদের পরিবারের সাথে আমরা শীঘ্রই দেখা করব। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য জাহিদুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনার বিষয়ে আমি পূর্বে অবগত ছিলাম না। মাত্রই বিষয়টি জানতে পেরেছি এবং খোঁজ-খবর নিচ্ছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক রয়েছেন। তবে শিক্ষার্থীদের উচিত তাদের সমস্যাগুলো শিক্ষক কিংবা সংশ্লিষ্ট কাউন্সেলরের সঙ্গে শেয়ার করা। তাহলেই আমরা প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা নিতে পারি। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমরা আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছি, যাতে তারা বাস্তব উপকার পেতে পারে।

এ বিষয়ে ভাটারা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা রাকিব বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে একটি ইউডি (অপমৃত্যু) মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরবর্তীতে নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”

শেয়ার করুন

মৃত্যুর আগে ছোট ভাইকে ওষুধ আনতে বলেছিল—সেই ছিল শেষ দেখা

প্রকাশিত: ১২:২৫:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

তানজিল কাজী, ডিআইইউ প্রতিনিধি:

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষার্থী নিশীতা আক্তার আত্মহত্যা করেন।

শুক্রবার (১৮ জুলাই) রাজধানীর বাড্ডার ছাপড়া মসজিদের পাশে ভাড়া বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। ঘটনাস্থল থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাতে লেখা ছিল, “বাবা আমাকে মাফ করো। আমার কাছে একজন কিছু টাকা পায়—তাকে টাকা দিয়ে দিও।”নিশীতা ইংরেজি বিভাগের ডে শিফটের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায়।

নিশীতার চাচাতো ভাই অন্তর জানান, শুক্রবার সকালে নিশীতা তার ছোট ভাইকে মাথাব্যথার ওষুধ আনতে স্থানীয় একটি ফার্মেসিতে পাঠান। কিছুক্ষণ পর তার ছোট ভাই বাসায় ফিরে দরজা বন্ধ অবস্থায় দেখতে পায়। বহুবার ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে সে। এসময় সে দেখতে পায় নিশীতা ঘরের সিলিং ফ্যানে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলছেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ফরাজি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে রেফার করা হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত শিক্ষার্থীর সহপাঠী ফারজানা আক্তার বলেন, “নিশীতার অকাল মৃত্যুতে আমরা সবাই গভীরভাবে শোকাহত। দুপুরে অন্তরের মেসেজে আমরা খবরটি পাই। প্রথমে কেউ বিশ্বাসই করতে পারছিল না। পরে তার নাম্বারে কল করলে ছোট ভাই জানায়, মাথাব্যথার ওষুধ আনতে পাঠানোর পর ফিরে এসে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পায় নিশীতাকে। কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়া হলেও ততক্ষণে দেরি হয়ে যায়।”তিনি আরও বলেন, “পুলিশ সুইসাইড নোট পেয়েছে, যেখানে পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়ে ছয় হাজার টাকা পাওনার কথা লিখে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে প্রেম সম্পর্কজনিত হতাশা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত। সদা হাস্যোজ্জ্বল নিশীতা হঠাৎ চাকরিতে যোগ দিয়ে ক্লাসে কম আসছিল তবে পরীক্ষায় অংশ নিত। তার এমন মৃত্যুতে আমরা সবাই মর্মাহত।”

নিশীতার ছোট ভাই আরমান ভূইয়া বলেন, বিগত কয়েকদিন ধরে আপু অসুস্থ ছিল মাইগ্রেনে ব্যথা ছিল সাথে জ্বর, ঠান্ডাও ছিল। গতকাল সকালে আব্বু যখন দোকানে চলে যায় তখন নয়টার সময় আপু আমাকে ঘুম থেকে ডাক দিয়ে ওঠায়। তারপর আপু আমাকে বলে তার মাইগ্রেনে ব্যথা হচ্ছে আমি যেন ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে আসি। তারপর আমি ওষুধ আনতে দোকানে চলে যাই এবং ফার্মেসিতে ওষুধ না থাকাই আমি আপুর নাম্বারে বারবার ফোন দিতে থাকে কিন্তু আপু ফোন রিসিভ করছিল না তারপর আমি বাসায় চলে আসি।

এসে দেখি দরজা ভেতর থেকে আটকানো তারপর আব্বুকে ফোন দিয়ে বাসায় নিয়ে আসতে বলি। তারপর আব্বু চাবি দিয়ে দরজা খোলার পর আমরা দেখতে পায় ফ্যানের সাথে আপুর লাশটি ঝুলছে। শরীরে হাত দিয়ে দেখি শরীরটা তখন গরম ছিল পরে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে। আপু বিগত কয়েকদিন ধরে ডিপ্রেশনে ছিল বাড়িতে চিল্লাপাল্লা করতো এবং বলতো আমি আমার আম্মুর কাছে চলে যাব। আমার আম্মু ৬ বছর আগে মারা গেছে। আব্বু বারবার জিজ্ঞেস কি হয়েছে কিন্তু আপু কিছু বলতো না।বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের সাথে এখনো কোনো যোগাযোগ করেনি।ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরিফ আহম্মেহ বলেন, নিশীতার মৃত্যুর খবর আমি এক শিক্ষকের মাধ্যমে জানতে পারি। এ ধরনের মৃত্যু আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখের। বাহিরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এরকম দেখতে পাই কাউন্সিলর থাকে ঠিক তেমনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও একজন প্রশিক্ষিত কাউন্সিলর প্রয়োজন। যাতে করে শিক্ষার্থীরা কাউন্সিলের সাথে ঘন্টা পর ঘন্টা কথা বলে তাদের সমস্যার সমাধান করতে পারে এবং একই সাথে ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজন আছে। আমরা তাদের পরিবারের সাথে আমরা শীঘ্রই দেখা করব। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য জাহিদুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনার বিষয়ে আমি পূর্বে অবগত ছিলাম না। মাত্রই বিষয়টি জানতে পেরেছি এবং খোঁজ-খবর নিচ্ছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক রয়েছেন। তবে শিক্ষার্থীদের উচিত তাদের সমস্যাগুলো শিক্ষক কিংবা সংশ্লিষ্ট কাউন্সেলরের সঙ্গে শেয়ার করা। তাহলেই আমরা প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা নিতে পারি। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমরা আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছি, যাতে তারা বাস্তব উপকার পেতে পারে।

এ বিষয়ে ভাটারা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা রাকিব বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে একটি ইউডি (অপমৃত্যু) মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরবর্তীতে নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”