“জুলাই আন্দোলনে যাওয়ার কারণে ছাত্রলীগের হুমকি পেয়েছিলাম, এখন ছাত্রদলের মামলা খাচ্ছি” — জাককানইবি শিক্ষার্থী
- প্রকাশিত: ১১:১৬:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫
- / 787
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
“জুলাই আন্দোলনে যাওয়ার কারণে ছাত্রলীগের হুমকি পেয়েছিলাম, এখন ছাত্রদলের মামলা খাচ্ছি।” — এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী লিমন আহমেদ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার জেরে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাত্রদলের এক নেতার করা মামলার প্রতিবাদে তিনি এই কথা বলেন।
মঙ্গলবার (৬ মে) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে লিমনসহ আরও দুই শিক্ষার্থী—সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মো. আজিজুল ইসলাম ও আইন বিভাগের শরিফুল ইসলাম সংগ্রাম—তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ‘মিথ্যা’ মামলার তীব্র প্রতিবাদ জানান। তাদের দাবি, তারা ‘জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে’ ফ্যাসিস্ট নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাজপথে ছিলেন, অথচ এখন তাদের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করে হয়রানি করা হচ্ছে।
লিমন বলেন, “১৬ জুলাই আম্মুকে কল দিয়ে বলেছিলাম আন্দোলনে যাচ্ছি, কিছু হবে কিনা জানি না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন করেছি। এরপর ছাত্রলীগের হুমকি পেয়েছিলাম, এখন মামলা খাচ্ছি ছাত্রদলের কাছ থেকে।”
তার অভিযোগ, যিনি মামলা করেছেন—মো. আশিকুর রহমান নামে এক ছাত্রদল নেতা—তার সঙ্গে তাদের কোনো পূর্বপরিচয় নেই। “ভুল নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন, কারণ উনি আমাদের চেনেনই না। এটা যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তা বলাই বাহুল্য।”
মামলায় আরও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাকিবুল হাসান রনি, যিনি বর্তমানে সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে শরিফুল ইসলাম সংগ্রাম বলেন, “আমরা রাজপথে ছিলাম, গুলি-সন্ত্রাসের মুখে থেকেছি, আর আজ সেই আন্দোলনের যোদ্ধাদের আসামি বানানো হচ্ছে।”
মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, “আমার নাম মামলার নথিতে ভুল দেওয়া হয়েছে। প্রমাণসহ দেখাতে পারি, ৪ আগস্ট আমরা আন্দোলনে ছিলাম, যার ভিডিও-প্রমাণ মিডিয়ায় রয়েছে।”
৫ মে সোমবার ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আশিকুর রহমান ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিশিয়াল (দ্রুত বিচার) ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং ছাত্রলীগ নেতাসহ মোট ২১০ জনকে আসামি করা হয়।
বেঞ্চ সহকারী মো. আজমত আলী জানিয়েছেন, বিচারক নাসিমা খাতুন অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধান আসামি হিসেবে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার জাকিবুল হাসান রনির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় ১৩০ জনের নাম এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৭০-৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট ‘হাসিনায় আস্থা’ ব্যানারে ছাত্রলীগ ও সরকারপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তারা অস্ত্র প্রদর্শন করে সমাবেশ করেন। ৪ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির প্রস্তুতিকালে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়, যাতে অন্তত ১২ শিক্ষার্থী আহত হন। এছাড়া অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে এই মামলাকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমাজের একাংশ বলছেন, “এটি একটি রাজনৈতিক চক্রান্ত, যার উদ্দেশ্য আন্দোলনের গৌরব ম্লান করা।”