নতুন বছরে যেমন ক্যাম্পাসের প্রত্যাশায় নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা
- প্রকাশিত: ০৫:০৫:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 45
নোবিপ্রবি প্রতিনিধি : মিরাজ মাহমুদ
বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে ২০২৪।এ বছরের জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে প্রশাসনশূন্য হয়ে পড়ে অধিকাংশ ক্যাম্পাস।তার ব্যতিক্রম নয় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(নোবিপ্রবি)।বিদায়ী বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রশাসনের বিরোধিতা ও আন্দোলনের পরবর্তীতে প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের পদত্যাগে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।নতুন উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিক গতিতে ফিরে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। পরবর্তীতে অক্টোবরে উপ-উপাচার্য ও ডিসেম্বরে কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের মাধ্যমে প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলো পূর্ণতা পায়।বিদায়ী বছরে প্রশাসনের নানা উদ্যোগের অপূর্ণতার গ্লানি ভুলে নতুন বছরে প্রশাসনের কাছে বৈষম্যহীন, সাজানো-গোছানো, শিক্ষামূলক এবং গবেষণানির্ভর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী।
আইন বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান জানান,নতুন বাংলাদেশে নতুন বছরে নতুন প্রশাসনের কাছে আমাদের চাওয়াগুলোও কিছু ক্ষেত্রে নতুন। ক্যাম্পাসের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে সৌন্দর্য বর্ধনের মাধ্যমে শিক্ষার বাহ্যিক পরিবেশ অলংকৃত করতে হবে। পাশাপাশি হল এবং টঙে খাবারের মান বৃদ্ধি করে সেখানে যেন কোনো প্রকার চাঁদাবাজি না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। ক্লাসরুম সংকট নিরসন, পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ এবং গবেষণায় বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য কার্যকরী উদ্যোগ দেখতে চাই। তাছাড়া কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে পাঠ্যবইয়ের বাইরে বই রাখা, প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং আসন সংখ্যা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন দূর করে শিক্ষার ভয়হীন পরিবেশসহ শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আমূল সংস্কারও প্রয়োজন।
অর্থনীতি বিভাগ অনার্স ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও জুলাই বিপ্লবের আহত শিক্ষার্থী জানান:
নতুন বছরে নতুন প্রশাসনের নিকট আমার প্রত্যাশা বলতে সর্বপ্রথম শিক্ষার্থীবান্ধব প্রকল্প বা উদ্যোগ হাতে নেয়া। যেমনঃ ডিপার্টমেন্টাল উপকরণ সংকট, ক্লাসরুম সংকট, যোগ্য শিক্ষক সংকট, হল সংকট, এবং খেলাধুলা ও বিনোদন সংক্রান্ত সংকট দূরীকরণে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দেয়া। আমার দৃষ্টিতে বর্তমান প্রশাসন যথেষ্ট আন্তরিক। আমরা শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষক মহোদয়দের নিজের পিতা-মাতা সমতুল্য মনে করি। তাদের নিকট নিজ সন্তানের মতো আদর-যত্ন, আদেশ- উপদেশ তথা সুশাসন প্রত্যাশা করি। তাই নতুন বছরে পুরোনো সকল হিংসা, বিদ্বেষ, গ্লানি, মিথ্যাচার ভুলে সবাইকে নিয়ে সুখী পরিবারের মতো জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টুকু অতিবাহিত করবো এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
ফলিত গণিত বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফারিহা জান্নাত বলেন,বিগত প্রশাসন দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর নতুন প্রশাসনের কাছে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের আস্থার জায়গাটা সর্বোচ্চ।আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন মোটামুটি মানের। একাডেমিক ভবন ৩-এর কাজ অতি দ্রুত শেষ করে ক্লাসরুম সংকট দূর করা অতীব জরুরি।একজন ছাত্র ও শিক্ষকের মাঝে সম্পর্কের মান বৃদ্ধি করতে টিএসসি নির্মাণ করা জরুরি ।নিম্নমানের ক্যাফেটেরিয়ার মান উন্নয়ন করা, (খাবার, পরিবেশ, অবকাঠামো),ছাত্রছাত্রীদের আবাসনের জন্য হল সংখ্যা বৃদ্ধি করা ও যাতায়াত ব্যবস্থার মান উন্নয়নে পর্যাপ্ত সংখ্যক বাস যুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
বাংলা বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী পূর্ণা মণি চাকমা বলেন,জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী নতুন প্রশাসনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা স্বাভাবিকভাবেই বেশি। আমরা এই নতুন দেশে নতুনত্ব দেখতে চাই। ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে উঠুক। নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসের গলার কাঁটা একাডেমিক ভবন ৩ যেন দ্রুতই সমাধান হয়। পূর্বের মতো যেন কোনো ক্ষেত্রেই কোনো শিক্ষার্থী বৈষম্য ও অধিকারবঞ্চিত না হয়। গবেষণামূলক ও শিক্ষাকেন্দ্রিক কাজে শিক্ষার্থীদের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হোক। একটি সুন্দর ও সাজানো ক্যাম্পাস যেন গঠন করা হয়, এমনটাই আমাদের প্রশাসনের কাছে প্রত্যাশা।
অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহেদী হাসান জানান, নোবিপ্রবি প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এখন দাঁড়িয়ে আছে ২১ শতকের জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের কান্ডারি হওয়ার সন্ধিক্ষণে। কিন্তু ১৯টি ব্যাচ ভর্তি হওয়ার পরও নোবিপ্রবিতে শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন পিছিয়ে গেছে বহু গুণে। যেখানে নেই শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা, ৩৩টি ডিপার্টমেন্ট ও ইনস্টিটিউটের বিপরীতে নেই পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, গবেষণার জন্য মানসম্মত ল্যাব এবং বরাদ্দ। নেই কোনো সেন্ট্রাল ল্যাব। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য নেই কোনো ফলপ্রসূ উদ্যোগ। নতুন বাংলাদেশে নতুন বছরে আমার প্রত্যাশা থাকবে মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগ হবে। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা ও গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে ২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়। যদি “এক শিক্ষার্থী এক সিট” এই নীতিতে শিক্ষার্থীদের জন্য হল নিশ্চিত করা যায়, তাহলে তারা পড়াশোনা ও গবেষণায় আরও মনোযোগী হতে পারবে। যদি শিক্ষার্থীদের জন্য অন-ক্যাম্পাস চাকরির ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে তারা দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারবে, যা তাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বস্তি দেবে।
ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান জানান,নতুন প্রশাসনের কাছে আমাদের মূল দাবি হলো একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা। সেশনজট আমাদের একাডেমিক ও পেশাগত জীবনে বড় বাধা সৃষ্টি করছে, যা দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। পাশাপাশি, আবাসন সংকট দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কারণ হয়ে আছে। তাই আবাসন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং হলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।
শিক্ষার মানোন্নয়নে লাইব্রেরি, ল্যাব, এবং ক্লাসরুমের উন্নত অবকাঠামো গড়ে তোলার পাশাপাশি টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোপরি, প্রশাসন যেন শিক্ষার্থীদের মতামত গ্রহণ করে এবং নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলোর সমাধান নিশ্চিত করে।