শুধু একটা দিন নয়—এটা একতা, সংস্কৃতি ও চেতনার প্রতীক
- প্রকাশিত: ১১:৫৩:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫
- / 348
পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব। চারদিকে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। প্রতিবছরই ব্যাপক জাঁকজমকের সঙ্গে বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয়। বৈশাখ তাই শুধু ক্যালেন্ডারের পাতায় নতুন তারিখ নয়, এ এক জীবনবোধ, এক সাংস্কৃতিক উজ্জ্বলতায় ফিরে দেখা আমাদের আপন ইতিহাস। এই দিনটিকে ঘিরে কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন।
বাঙালির হৃদয়ের নবজাগরণ ও সংস্কৃতির মিলনমেলা
পহেলা বৈশাখ কেবল একটি তারিখ নয়, এটি বাঙালির আবেগ, ঐতিহ্য ও স্বকীয়তার জীবন্ত প্রকাশ। এই দিনে পুরোনো বছরের সকল ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে নতুন আশা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জন্ম নেয়। রমনার বটমূলে ছায়ানটের সুর, চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রার বর্ণিল সমারোহ আর গ্রামীণ মেলার হস্তশিল্প—সব মিলিয়ে বৈশাখ হয়ে ওঠে এক অসাম্প্রদায়িক উৎসবের নাম। শহুরে জীবনে লাল-সাদা পোশাকে কিংবা পান্তা-ইলিশের স্বাদে ধরা দেয় বাংলার প্রাণ। বৈশাখের সকাল আসে নতুন সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে। এটি শুধু ঋতুপরিবর্তনের ইঙ্গিত নয়, বরং আত্মপরিচয়ের গভীরে পৌঁছানোর একটি সুযোগ। এই দিনটি আমাদের শেকড়ের টানে ফিরিয়ে আনে, বিভেদ ভুলে একাত্ম হতে শেখায়। হালখাতার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা যেমন নতুন হিসাব খুলেন, তেমনি ব্যক্তিজীবনেও বৈশাখ আনে পুনরায় শুরু করার প্রেরণা। নববর্ষের এই উৎসব যেন শুধু আনন্দেই সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং তা হয়ে উঠুক সামষ্টিক চেতনার প্রতীক। বৈশাখের বাতাসে ভেসে আসুক সাহস, সম্প্রীতি ও সৃজনশীলতার গান—এই হোক সকলের কামনা।
– রাফসান হোসেন আলভী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ
বসন্তের নব পল্লব চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। সূর্যের রশ্মি খানিকটা প্রখর হয়েছে। ঢাক বাজতে শুরু হলো—নববর্ষ বুঝি চলেই এলো। পুরনো বিষাদগ্রস্ত ও জরাজীর্ণ জীবনকে বিদায় দিয়ে বাংলা নববর্ষ বাঙালির জীবনে নিয়ে আসে নতুন আশা ও উদ্দীপনা। ঢাক, ভেঁপু, বাঁশি, টেপা পুতুল ও নানান প্রতীকধর্মী মুখোশে নেচে-গেয়ে বাংলার মানুষ বরণ করে নতুন বর্ষকে। নববর্ষ বাঙালির সার্বজনীন উৎসব এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চর্চার এক অন্যতম মঞ্চ। বাংলার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী মানুষ ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে একই পোশাকে, একই রঙে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা পুনরুজ্জীবিত করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। প্রত্যেক বাঙালির উচিত পহেলা বৈশাখ ও এর শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করা। অশুভ ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবকে দূর করে শান্তি ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়ে তোলা আমাদের দায়িত্ব।
– ইনতাম হোসাইন, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়
পহেলা বৈশাখ মানে শুধু উৎসব নয়, এটি স্মৃতির নতুন পৃষ্ঠা
নববর্ষের এই দিনটা আমাদের জন্য এক অন্যরকম অনুভব। ছোটবেলা থেকেই এই দিনে যে মেলা, অনুষ্ঠান হতো, সেগুলোর জন্য অপেক্ষা করতাম। বাংলা নববর্ষ মানেই ছিল আনন্দ, নতুন জামা, রঙিন মেলা আর ভরপুর দিন কাটানোর মুহূর্ত।
তবে ভার্সিটিতে ওঠার পর আক্ষেপ ছিল—নববর্ষ এলেও কিছুই হতো না, ছিল না কোনো আয়োজন। কিন্তু এবারের পহেলা বৈশাখ আলাদা। অনেক বছর পর ক্যাম্পাসে এই উৎসব ফিরে এসেছে। আর সবচেয়ে আনন্দের বিষয়, এই আয়োজনের অংশ হতে পারছি আমরা।
ক্যাম্পাস সাজানো, আলপনা করা, স্টল বানানো—সব মিলিয়ে নববর্ষের আগের দিনটাই যেন এক উৎসব। সিনিয়র-জুনিয়র, বন্ধু-বান্ধব মিলে একটা অনুষ্ঠান দাঁড় করানোর আনন্দ আসলে কাজ না করলে বোঝা যায় না। এবার স্টল দেওয়া হচ্ছে। সবাই সবার বানানো জিনিস বা হরেক রকম পণ্য নিয়ে বসবে। প্রথমবারের মতো নিজেরও একটি স্টল দেওয়ার অভিজ্ঞতা হচ্ছে এই পহেলা বৈশাখের মাধ্যমে। এটা শুধু পহেলা বৈশাখ নয়, বরং আমাদের জীবনের স্মৃতির পাতায় লেখা এক নতুন পৃষ্ঠা। আশা করি বছরের এই প্রথম দিনটা দারুণ কাটবে। আর নতুন বছর যেন বয়ে আনে সবার জীবনে আনন্দ, সফলতা আর শান্তি—এই কামনাই রইল।
– মাঈশা হাসান তাহানি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়
পহেলা বৈশাখ আমার জীবনের রঙিন অধ্যায়
পহেলা বৈশাখ শুধু বাংলা নববর্ষের সূচনা নয়, এটি আমার জীবনের এক অপূর্ব অনুভূতির নাম। চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা, টিএসসি চত্বরের রঙিন সাজসজ্জা, বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে হাসি-আনন্দ আর ঐতিহ্যবাহী খাবারের আসর—সব মিলিয়ে পহেলা বৈশাখ যেন আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে রঙিন অধ্যায়। শাড়ি-পাঞ্জাবির বাহার, মুখে আলপনা, ভোরবেলা ‘এসো হে বৈশাখ’ গানের সুরে মন জুড়িয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রান্তে যেন একটুকরো বাংলাদেশ খুঁজে পাই। সাম্প্রদায়িকতা ও বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে সবাই একসাথে বরণ করে নেয় নতুন বছরকে। এটা কেবল উৎসব নয়, বরং আমাদের সংস্কৃতি, পরিচয় ও চেতনাকে ধারণ করার এক গভীর উপলক্ষ।
– ওয়াসিমা ফারাহ এশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়